আর্য সমস্যা বিষয়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের বিতর্কগুলি উল্লেখ করো।

আর্য সমস্যা বিষয়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের বিতর্কগুলি উল্লেখ করো।

 আর্য সমস্যা বিষয়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের বিতর্কগুলি উল্লেখ করো।

আর্য সমস্যা বিষয়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের বিতর্কগুলি উল্লেখ করো।

 হরপ্পা সভ্যতার ধ্বংসের পর যে সভ্যতার উদ্ভব হয় তার নাম বৈদিক সভ্যতা। বেদকে ভিত্তি করে এই সভ্যতার স্রষ্ঠা হিসেবে আর্যদের উল্লেখ করা হলেও এদের জাতিগত বিষয় ও আদি বাসস্থানগত বিষয় সম্পর্কে যথেষ্ট মতানৈক্য রয়েছে। এট আর্য শব্দটি আমাদের মনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। তাই এই সমস্যাবিষয়ক বিভিন্ন মতিহাসিকদের আলোচনা, মতামত ও বিতর্কই এই প্রশ্নের মূল উপজীব্য।


বর্তমানের সময়কালে ও তার পূর্ববর্তী সময়কালে আর্য ও তাদের আদি বাসস্থান নির্ধারণ নিয়ে বিতর্ক বহমান। এক শ্রেণির ঐতিহাসিক মনে করেন আর্যদের আদি বাসস্থান হল ভারতবর্ষ। আসলে যারা আর্যদের আদি বাসস্থান বহির্ভারতে প্রমাণ করতে চান তাদের কাছে যেমন সম্ভাবিত তথ্য নেই। আবার যারা আর্যদের ভারতীয় বলে মনে করেন তাদেরও তথ্য প্রমাণের তেমন যুক্তি প্রমাণ নেই। তাই উভয় পক্ষের ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক বর্তমান।


ভারত আর্যদের আদি বাসস্থান এই মতাবলম্বী যারা তাদের মধ্যে প্রথমেই তাদের এফ. ই. পার্কিটোর তিনি মূলত পুরাণের ওপর ভিত্তি করে বলেছেন ভারত আর্যদের আদি বাসস্থান। আর্যগণ কর্তৃক ভারত আক্রমণের কোনো তথ্য পুরাণে নেই। বরং পুরাণের ভিত্তিতে বলা হয়েছে ভারত আর্যদের আদি বাসস্থান। পুরাণের ভিত্তিতে অনুমিত হয় যে আর্যরা উত্তর-পশ্চিমদিক থেকে ভারতেই বাইরে গিয়েছিল। এই মতকে সমর্থন করেছেন যাঁরা তারা হলেন গঙ্গানাথ ঝা, ডি. এস. ত্রিবেদী, এল. ডি. কল্প, এ. সি.দাস প্রমুখরা। গঙ্গানাথ ঝা আর্যদের আদি বাসস্থান নির্দিষ্ট করেছিলেন উত্তর-পশ্চিম রহর্ষি দেশে। এ. সি. দাস তাঁর 'ঋবৈদিক যুগের ভারতবর্ষ' গ্রন্থে বলেছেন যে, সিন্ধু অববাহিকা আর্যদের আদি বাসস্থান। কারণ, ঋগ্বেদে যেসব জীবজন্তর কথা পাওয়া গেছে তার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে পাঞ্জাব ও সিন্ধু অঞ্চলে। এল. ডি. কল্পের মতে, কাশ্মীর ও হিমালয়সংলগ্ন অঞ্চল আর্যদের আদি বাসস্থান।


অপর দিকে জার্মান পণ্ডিত ব্রানডেনস্টাইন আর্যদের আদি বাসভূমি নিয়ে উরাল পর্বতের দক্ষিণে অবস্থিত কিরঘিজ তৃণভূমির সপক্ষে জোরালো মন্তব্য করেছেন। বিশিষ্ট জাতীয়তাবাদী নেতা বালগঙ্গাধর তিলক 'জেন্দ-আবেস্তা'-এ ঋগ্বেদ অধ্যয়ন করে তিনি তাঁর 'Artic Home of the Aryans' গ্রন্থে বলেছেন যে, সুমেরু মহাদেশ ছিল আর্যদের আদি বাসভূমি। দয়ানন্দ সরস্বতী তাঁর 'The Tibetan Theory গ্রন্থে বলেছেন যে আর্যদের আদি বাসস্থান তিকাত। তাঁর মতে, ওই সময় প্রচুর জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছিল। ওই খাদ্যাভাবের কারণে তারা বিভিন্ন দিকে ছড়ি পড়েছিল। টি


উনিশ শতকের শেষের দিকে কার্লপেক্ষা ভাষাতাত্ত্বিক, পুরাতাত্ত্বিক, নৃতাত্ত্বিক বিষ ব্যাখ্যা করে বলেন আর্যদের আদি বাসস্থান দক্ষিণ ক্যান্ডিনেভিয়ায়। তিনি বলেছে ইন্দো-ইউরোপীয় আর্যদের ব্যবহৃত প্রত্নবস্তু ও পাথরের সঙ্গো এই অঞ্চলে প্রাপ্ত পাথরের মিল আছে। বিশ শতকের গোড়ায় এ. ফ্ৰডাৰ ভাষাতাত্ত্বিক ফসিলবিদ্যার সাহাযে সোভিয়েত রাশিয়ার দক্ষিণ দেশের তৃণভূমি অঞ্চলকে আর্যদের আদি বাসস্থান বলেছেন। ব্রুডারের এই মতকে সমর্থন করেছেন গর্ডন চাইল্ড তাঁর 'The Aryan' গ্রন্থে। অধ্যাপর পি. গাইলম ও ম্যাকডোনাল্ড তাঁদের 'Theory of Central Europe' তত্ত্বে বলেছেন যে, ঋকবেদে সমুদ্রের উল্লেখ নেই। তাই আর্যরা কোনো সমুদ্রের ধারে নয় কোনে নাতিশীতোর অঞ্চলে বাস করতো। এশিয়া মাইনরের বোঘজকহ Inscription থেকে দেখা যায় যে, এতে ইন্দ্র, অগ্নি, বরুণকে পুরাজ উল্লেখ আছে। ব্র্যান্ডন স্টাইন আবার এই শব্দগুলিকে বিশ্লেষণ করেছেন এবং দেখা যাচ্ছে ইউরাল পর্বতে স্তেপ অঞ্চলে আর্যরা বাস করতো বলে মনে হয়। তবে এই মত গ্রহণীয় হয়নি। এক্ষেত্রে উপযুক্ত তথ্যের অভাব আছে। যার ফলে বিতর্কের সমাধান হচ্ছে না। তবে একথা উল্লেখযোগ্য যে, আর্যর ভারতীয় নয় বাইরে থেকে ভারতে এসেছে। তারা কিন্তু জাতি ছিল না তারা ছিল একট ভাষা গোষ্ঠী।


পরিশেষে বলা যায় যে, এই আর্য সমস্যা নিয়ে যে দীর্ঘ সময়কাল যাবত যে বিজ্ঞ ও নানা অভিমত ব্যক্ত হয়েছে তার কোনোটিকেই বেশ সম্ভাবনাপূর্ণ মনে হলেও ত কখনোই চূড়ান্ত নয়। বিভিন্ন গবেষণার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন সময়ে এই বিভিন্ন মত গুরুত্ব পেলেও কোনো সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তাই উপরিউক্ত আলোচনার ভিত্তিতে আর্য কে এবং এদের আদি বাসস্থান কোথায় এই বিষয়ে একটা সম্যক ধারণ আমাদের সামনে ফুটে ওঠে। যার থেকে আমরা এই বিষয়ে নিয়ে আলোচনা করার সুস্পষ্ট তত্ত্ব লাভ করতে পারি।

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟