"আর্য সমস্যা বিশ্লেষণ কর ৷ অথবা আর্য কারা ?,আর্যদের আদি বাসস্থান কোথায় ছিল" বা,আর্যদের আদি বাসভূমি ভারতবর্ষ ছিল কিনা ব্যাখ্যা কর।
আর্য সমস্যা বিশ্লেষণ কর ৷
অথবা
আর্য কারা ?,আর্যদের আদি বাসস্থান কোথায় ছিল?বা, আর্যদের আদি বাসভূমি ভারতবর্ষ ছিল কিনা ব্যাখ্যা কর।
আর্যদের আদি বাসস্থান সম্পর্কে নানা মুনির নানা মত ৷ এ বিষয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে প্রচন্ড মতবিরোধ দেখা দেয় ৷ এখন পর্যন্ত আর্যদের আদি বাসস্থান সম্পর্কে কোন স্পষ্টসিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি ৷ জার্মান পন্ডিত ম্যাক্স মুলার তার "Lactures of Science or lamguatels" নামক গ্রন্থে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে "ভারতীয়,গ্রীক,জার্মান, পারসিয়ান, রোমান প্রভৃতি জাতির আদি মধ্যযুগে একইসঙ্গে মধ্য এশিয়ার কোন এক অঞ্চলে বসবাস করত"৷ বালগঙ্গাধর তিলক তার "The Aryetic home Aryans" গ্রন্থে বলেছেন আর্যরা সুমেরু অঞ্চলের অধিবাসী ছিলেন বলে দাবি করেন ৷ এ সি দাস বলেন পাঞ্জাব অর্থাৎ সপ্তসিন্ধুতে আর্যদের আদি বাসস্থান ছিল ৷ স্বামী দয়ানান্দ সরস্বতী ও মিস্টার পারজিটা তিব্বতকে আর্যদের বাসস্থান রূপে চিহ্নিত করেছেন ৷
আর্যদের আদি বাসস্থান রূপে যারা ভারতের নাম উল্লেখ করেছেন তারা মনে করেন যে ইউরোপ ও ইরানের আর্যরা ভারত ত্যাগ করে এই সব দেশের আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন ভারতে আর্যদের বাসস্থানের কতগুলি কারণ উল্লেখ করা হচ্ছে
- ডক্টর পুসলকার বলেন যে," বেদ ভারতের রচিত এবং ভারতেই তা পাওয়া যায় আধুনিক ভারতীয় সমাজের গঠন ও বৈদিক যুগের সমাজের গঠন সম্পন্ন সংযতিপূর্ণ ৷"
- ভাষাতত্ত্বের দিক থেকে বিচার করে দেখা যায় যে মূল ইন্দো ইউরোপীয় বা আর্য ভাষার সর্বাধিক শব্দ সংস্কৃতিতে অন্য কোন অপর ভাষায় নয় ৷
- ঋকবেদে উল্লেখিত জীব জন্তু গাছপালা ভৌগোলিক বিবরণের সঙ্গে পাঞ্জাব ও সন্নিহিত অঞ্চলের বেশ সাদৃশ্য আছে ৷
- সপ্তসিন্ধু অঞ্চল কেই তারা আর্যদের বাসস্থান বলে মনে করত সাধারণত দেশত্যাগী ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের ছেড়ে আনা দেশের নীতি চলন করতে থাকে বৈদিক সাহিত্যে এ ধরনের কোনো স্মৃতিচারণ নেই।
স্যার জন মার্শাল,ডঃ বিকে ঘোষ প্রমুখরা আর্যদের ভারতীয় উৎপত্তির বিরুদ্ধে বেশ কিছু ব্যক্তির অবতারণা করেছেন যেমন
- আর্যদের ভারতে আদিবাসী স্থান সম্পর্কে কোন প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমান নেই ৷
- ভারত যদি আদিবাসী স্থান হয় তাহলে ভারতের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে না পড়ে কেন তারা বাইরে চলে আসে ৷
- ইন্দো ইউরোপীয় ভাষা গোষ্ঠীর ভৌগোলিক অবস্থান ভারত বর্ষের বিদেশি সাক্ষী দেয় বেশিরভাগ আর্য ভাষার অবস্থান ইউরোপে সেই তুলনায় এশিয়ার ভাষা অনেক কম পূর্ব ইউরোপের প্রাচীন অপর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দেখা যায় সেহেতু পন্ডিতরা বলেন যে ইউরোপে আর্য জাতি বসবাস করত ৷
- ভারতের বিভিন্ন অংশ এবং সমগ্র দাক্ষিণাত্য আর্য ভাষায় অস্তিত্ব প্রমাণ করে যে আর্যরা যদি স্মরণীতিতে অতীত থেকে বাস করত তবে এইসব অনার্য মানুষ ও ভাষা কোথা থেকে এলো ৷
- আর্যদের বর্ণিত গাছপালা জীবজন্তু কোনক্রমে ভারতীয় বলে বিবেচনা করা যায় না প্রভৃতি গাছের সঙ্গে ওরা পরিচিত ছিল যার একটিও ভারতের সমভূমিতে জন্মায় না।
মতামত
শ্লেগেলের মতে আর্যদের ভারতের আদিবাসী স্থান হল হলেও তারা কখনোই উর্বর এবং মনোরম জলবায়ু পরিত্যাগ করে ইউরোপ ও ইরানে বসতি স্থাপন করত না ৷ ভাষাতত্ত্ব দ্রাবিড় গোষ্ঠী আর্যদের আদি বাসস্থান রূপে ভারতের দাবি না কোচ করে দিয়ে বালটিক অঞ্চলকে তাদের আদি বাসস্থান বলে বর্ণনা করেছেন ৷ অন্যদিকে মরগ্যান পশ্চিম সাইবেরিয়া কে আর্যদের আদিবাসী স্থান বলে মনে করেছেন ৷
ব্যান্ডেলস্টাইন ব্যবহারিক পদার্থবিদ্যা সাহায্যে এই সমস্যার সমাধানে একটি নতুন মাত্রা প্রদর্শন করেন ৷ তার মতে প্রথমদিকে ইন্দো ইউরোপীয় শব্দাবলীতে কোন পর্বতমালার পাদদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে আর্যদের আদি বাসস্থানের সন্ধান পাওয়া যায় ৷ তিনি ইউরাল পর্বতের দক্ষিণে অবস্থিত কিরকিজ স্তূপ অঞ্চল কে আর্যদের বাসস্থান বলে মনে করেন ৷ পরবর্তীকালে ইন্দো ইউরোপীয় শব্দাবলীতে সম্পন্ন ভিন্ন ধরনের জমি গাছপালা ও জীবজন্তুর সন্ধান পাওয়া গেলে সেখানে শুষ্কস্তুপ অঞ্চলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শব্দগুলির পরিবর্তে স্পষ্ট জলাভূমি ইঙ্গিতবাহী নতুন শব্দ পাওয়া যায়। এই ধারণার মধ্যে স্থায়ী বাসস্থানের পাওয়া যায় ৷ এ এল ব্যাসাম বলেন যে পোল্যান্ড থেকে মধ্য এশিয়া পর্যন্ত বিস্তীর্ণ বিপদ শুল্ক তৃণভূমি অঞ্চলে অর্ধ যাযাবর বাস করত পরে তারা ভারত আক্রমণ করেন তারাই ছিলেন এদের উত্তর পুরুষ ৷
উপরিক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায় যে আর যদি তথাপি বাসস্থান কোথায় ছিল এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পৌঁছানো সম্ভব হয়নি গর্ডন চাইল্ড একটি মীমাংসা চেষ্টা করেছিলেন ১৯২৬ সালে প্রকাশিত তার "The Ariyans" গ্রন্থে ৷ কিন্তু তার পক্ষেও স্পষ্ট কোন সিদ্ধান্ত পৌছানো সম্ভব হয়নি ৷ সব বিতর্কের শেষে বলা যায় যে আর্যদের আদি বাসস্থান রূপে কিরখিজ স্তূপ তৃণভূমির উপরে অধিকাংশ ঐতিহাসিকদের দৃষ্টি নিবন্ধ ৷ তবে অধ্যাপক ব্রতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের মতে আর্যদের আদিবাসস্থান নির্ণয় বিষয়টি বর্তমানে এক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷