হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব ও কার্যাবলী আলোচনা কর

হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব ও কার্যাবলী আলোচনা কর

 হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব ও কার্যাবলী আলোচনা কর


হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব ও কার্যাবলী আলোচনা কর


হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব ও কার্যাবলী :-

হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব ও কার্যাবলী আলোচনা কর
হর্ষবর্ধনের মুদ্রা, প্রায় ৬০৬-৬৪৭ খ্রিষ্টাব্দ

ভারতবর্ষ এক বৈচিত্র্যময় দেশ। সুদূর প্রাচীনকাল থেকে ভারতবর্ষের রাজনৈতিক মানচিত্রের পালাবদল ঘটেছে বারে বারে। কখনো ছোটো ছোটো বহু রাজ্যকে সংযুক্ত করে গড়ে উঠেছে সর্বভারতীয় ঐক্যবদ্য সাম্রাজ্য। আবার কখনো বৃহৎ সাম্রাজ্য ভেঙে আঞ্চলিক জিত্তিতে গড়ে উঠেছে কিছু রাজ্য। গুপ্ত সাম্রাজ্যের ভাঙনের যুগে ভারতে যে আঞ্চলিক প্রজা গঠনের উদ্যোগ শুরু হয়েছিল, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল পূষ্যভূতি বংশের নেতৃত্বে এড়ে ওঠা খানেশ্বর রাজ্য। সমকালীন গড়ে ওঠা অন্যানা আঞ্চলিক রাজ্যের তুলনায় বানেশ্বরের ইতিহাস কিছুটা স্বতন্ত্র। শতষু ও যমুনার মধ্যবর্তী জলবিভাজিকাতে অবস্থিত ছিল থানেশ্বর। হুন আক্রমণের পর এই অঞ্চলে পুষ্যভূতি বংশের সূচনা হয়। অধ্যাপক রৌশার্থীর মতে, এই বংশের পূর্বপুরুষগণ ছিলেন উপজাতীয়। তবে এই বংশের অন্যতম শাসক হর্ষবর্ধনের আমলে থানেশ্বরের সার্বিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। তাই প্রশ্নে আলোচিত হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব আমাদের আলোচ্য বিষয়।

হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব ও কার্যাবলী আলোচনা কর
হর্ষবর্ধনের সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ বিস্তার


ভারতের অন্যান্য প্রাচীন রাজাদের তুলনায় (পুষ্যভূতি বংশীয় রাজা) হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালে বিষয়ে জানার জন্য সাহিত্যিক ও শিলালৈখিক উপাদানের প্রাচুর্যতা আছে। সাহিত্যিক উপাদানগুলির মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হল বাণভট্টের হর্ষচরিত, সমকালীন চৈনিক পর্যটক হিউয়েন-সাঙের সি-ইউ-কি (পশ্চিম দেশের বিবরণ)। হিউয়েন-সান্তের এই গ্রন্থ প্রসঙ্গো ড. রাধাকুমুদ মুখার্জি বলেন, "এই গ্রন্থের বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা সরকারি নথির মতোই নির্ভরযোগ্য।" এছাড়া বাকপতির রচিত গৌড়বাহ, দস্তির দশকুমার চরিত প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। হর্ষবর্ধনের বিষয়ে জানতে কতগুলি লেখ ও বিশেষ সাহায্য করে যেমন-মধুবন লেখ (৬৩১ খ্রিস্টাব্দ), সোনপত লেখ, বাঁশঘেরা লেখ (৬২৮ খ্রিস্টাব্দ), চালুক্য সম্রাট দ্বিতীয় পুলকেশীর আইহোলে প্রশস্তি যার থেকে হর্ষবর্ধনের দক্ষিণাপথ অভিযানের কথা জানা যায়। এছাড়া হর্ষবর্ধনের সময় প্রচলিত মুদ্রাও তাঁর রাজত্বকালের বন্ধু বিষয়ক তথ্য উদ্‌ঘাটনে বিশেষ সহায়তা করে। 


হর্ষবর্ধন ছিলেন থানেশ্বর রাজা প্রভাকর বর্ষনের কনিষ্ঠ পুত্র। জ্যেষ্ঠস্রাতা রাজ্যবর্ধনের আকস্মিক মৃত্যুর পর পুষাভূতি রাজপরিবারে এক জটিল রাজনৈতিক সংকটের সৃষ্টি হয়েছিল। এই রাজনৈতিক আবর্তের মধ্যেই খ্রিস্টীয় ৬০৬ খ্রিস্টাব্দে হর্ষবর্ধন সিংহাসনে আরোহণ করেন। তাঁর দীর্ঘ ৪১ বছরব্যাপী রাজত্বকালে তিনি (গুপ্তযুগের গৌরব অংশত উচ্চার করেছিলেন) প্রভৃত কৃতিত্ব রাখেন। থানেশ্বর ও কনৌজ রাজাকে সমন্বিত করে হর্ষবর্ধন শাসনভার নেন। এই ঘটনাকে স্মরণীয় করার জন্য তিনি ৬০৬ খ্রিস্টাব্দে একটি নতুন সম্বৎ চালু করেন, যা হর্ষসম্বৎ নামে খ্যাত। 


হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব ও কার্যাবলী আলোচনা কর
"হর্ষ কা টিলা" ঢিবি এলাকায় প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ 1 কিমি জুড়ে বিস্তৃত

'আর্য মঞ্জুশ্রী মূলকর গ্রন্থ অনুসারে হর্ষবর্ধন শশাঙ্কের রাজধানী কর্ণসুবর্ণ অধিকার করেন। ৬১৯ থেকে ৬২১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এই ঘটনা ঘটেছিল। তবে ড. আর. এস. ত্রিপাঠী, ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার প্রমুখ ঐতিহাসিকেরা এই বিবরাণের যথার্থতা সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করেছেন। কারণ ওডিশার গঞ্জাম জেলায় প্রাপ্ত শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, ৬১৯ খ্রিস্টাব্দ পরেও শশাঙ্ক পূর্ণগৌরবে গৌড়ের সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন (৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে শশাঙ্কের মৃত্যুকে হিউয়েন-সাঙ 'সাম্প্রতিক ঘটনা' বলে উল্লেখ করেন। হর্ষবর্ধন, মগধ, গৌড়, ওডিশা এবং কোঙ্গোদ অধিকার করেন। একজন চৈনিক লেখকের মতে, হর্ষবর্ষন ৬৪১ খ্রিস্টাব্দে মগধরাজ উপাধি লাভ করেন।


পশ্চিম ভারতে হর্ষবর্ধন বলভীর রাজা দ্বিতীয় ধ্রুবসেনকে পরাজিত করেছিলেন। সম্ভবত বলভী তাঁর সামন্তরাজ্যে পরিণত হয়েছিল। কিম ও মহী নদীর অন্তবর্তী অঞ্চলের গুর্জর রাজাদের অভিলেখে হর্ষবর্ধন ও ধ্রুবর সংঘাতের তথ্য পাওয়া যায়। বলভীরাজ ধ্রুবসেন ব্রোচ অঞ্চলের শাসক গুর্জর অধিপতি দ্বিতীয় দন্দর সহযোগিতায় বলভী পুনঃরুদ্ধারের উদ্যোগ নেন। হর্ষবর্ধন শেষ পর্যন্ত নিজ কন্যার সঙ্গে ধ্রুবর বিবাহ দেন। এইভাবে বলভী ও তার অধীনস্থ এলাকাসমূহ যেমন-আনন্দপুর, কচ্ছ ও দক্ষিণ কাথিয়াবাড়ে হর্ষবর্ধনের রাজনৈতিক প্রভাবাধীনে স্থাপিত হয় ‌৷

নালন্দায় হর্ষবর্ধনের সীলমোহর পাওয়া গেছে


দক্ষিণ ভারতে হর্ষবর্ধন চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশীর বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরণ করেন। পুলকেশীর আইহোল প্রশস্তি বাদামির উত্তরকালীন চালুক্য রাজাদের অভিলেখ ও হিউয়েন-সাঙের বিবরণে এই সংঘর্ষের উল্লেখ আছে। হিউয়েন-সাভের বিবরণ থেকে জানা যায় যে, হর্ষবর্ধন পঞ্চ ভারতের অধিপতি হয়েছিলেন। (পঞ্চভারত বলতে বোঝায় পাঞ্জাব, কনৌজ, বাংলা, বিহার ও ওডিশাকে বুঝিয়েছেন)। দ্বিতীয় পুলকেশীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে পঞ্চভারত থেকে প্রভূত সৈন্য হর্ষবর্ধনের সঙ্গে যোগদান করে। তবে এই যুদ্ধের ফলাফল বিষয়ে বহু বিতর্ক লক্ষিত হয় এবং হর্ষবর্ধনের অভিযান ব্যর্থ হয়।


হর্ষবর্ধন সিন্ধুর বিরুদ্ধেও অভিযান প্রেরণ করেন। বাণভট্টের হর্ষচরিতে তা বর্ণিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে, হর্ষবর্ধন 'সিন্ধুরাজকে পরাজিত করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।' তবে এই গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। নানা উপাদানের ভিত্তিতে জানা যায় যে, তিনি সিন্ধুরাজের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান প্রেরণ করলেও সফল হননি।


ভগবান লাল ইন্দ্রজী, বালাব, ফ্রিট, ভিনসেন্ট স্মিথ প্রমুখদের মতে, হর্ষবর্ধন নেপাল জয় করেন। হর্ষবর্ধনের নেপাল বিজয়ের সাপেক্ষে যুক্তি-


নেপালের বহু লেখতে হর্ষাব্দ ব্যবহৃত হয়েছে এবং আর এক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, নেপালি বংশাবলিতে রাজা বিক্রমাদিত্যের উল্লেখ আছে। তিনি অংশুমানের সিংহাসন আরোহণের অব্যবহৃত পূর্বে নেপালে রাজত্ব করেন। একটি অব্দও তিনি প্রবর্তন করেন। এই বিক্রমাদিত্যই হর্ষবর্ধন।


হর্ষবর্ধন চিনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেন, ৬৪১ খ্রিস্টাব্দে তিনি চিনের তাঙ বংশীয় সম্রাট তাই সুঙের রাজসভায় একজন ব্রাহ্মণ দূত প্রেরণ করেন। হর্ষবর্ধনের দরবারে তিনবার চিনা দূতদের আগমন ঘটে। হর্ষবর্ধনের আগে ভারত-চিন সম্পর্ক ছিল মূলত বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক। কিন্তু প্রথম হর্ষবর্ধনের সময়ে গড়ে ওঠে ভারত-চিন কূটনৈতিক সম্পর্ক।


হর্ষবর্ধনের সামরিক অভিযানগুলির সাফল্য ও ব্যর্থতার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর সাম্রাজ্যের পরিধির একটা আভাস পাওয়া যায়। হিউয়েন-সাঙের বিবরণ ও বাণভট্টের রচনা অনেকক্ষেত্রে অনির্ভরযোগ্য ও অনেকক্ষেত্রে অতিরঞ্জিত। এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে . এম. পানিকর, আর, এস, ত্রিপাঠী, ভিনসেন্ট স্মিথ প্রমুখেরা হর্ষবর্ধনকে একজন অপরাজের যোদ্ধা' বলেছেন। নিরপান কুর্ণল লেখতে পুষ্যভূতি বংশীয় হর্ষবর্ধনকে এলোত্তর পথনাথ বলা হয়েছে। ড. আর. সি. মজুমদার এই মতের বিরোধিতা করেছেন। সান্ডাজ্যের সংগঠক হিসাবে হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব কম নয়। সমগ্র উত্তর ভারতের তিনি এইপতি ছিলেন কিনা সে প্রশ্নে বিতর্ক থাকলেও নর্মদা নদীর উত্তরে তাঁর অধিকৃত সালাজ্যের পরিধি খুব কম ছিল না। তিনি মৌর্য কাঠামো এবং গুপ্তধারার সমন্বয়ে একটি কার্যকারী শাসন কাঠামো গড়ে তোলেন। হর্ষবর্ধন ছিলেন প্রজাহিতৈষী শাসক। তাঁর বিশাল সাম্রাজ্যের বেসামরিক ব্যবস্থা তিনি নিজেই তত্ত্বাবধান করতেন। তাঁকে পরামর্শদানের জন্য ছিল মন্ত্রীপরিষদ। হর্ষচরিতে দুজন সদস্যের নাম পাওয়া যায়-মহাসন্ধিবিগ্রহিক ও মহাবলাধিকৃত। এছাড়া শাসন কাজে নানা পদাধিকারী ছিল বিষয়পতি, আয়ুস্তক, ভোগপতি প্রমুখ। রামশরণ শর্মার মতে, হর্ষবর্ধনের আমলে সামন্তশ্রেণির মধ্যে 'অমাত্য' উপাধি গ্রহণের রেওয়াজ ছিল। ড. ইউ. এন, ঘোষাল মনে করেন যে, হর্ষবর্ধন তাঁর শাসন পরিচালনার কাজে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে সামন্তশ্রেণিকে ব্যবহার করেছিল। হর্ষবর্ধন তাঁর সাম্রাজ্যে বিকেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থা অনুসরণ করেছিলেন। তিনি তাঁর সাম্রাজ্যে রাজস্ব অবস্থার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতি প্রবর্তন করেন। কৃষকেরা তাদের উৎপন্ন ফসলের ১/৬ অংশ রাজস্ব হিসাবে দিত। হর্ষবর্ধনের সময় রাজস্বের হার ছিল খুবই কম। হর্ষবর্ধন একটি সৎ ও নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা গড়ে তুলতে যত্নবান ছিলেন। বিচারবিভাগের সর্বোচ্চ ছিলেন হ্যাং হর্ষবর্ধন। তাঁর রাজত্বকালের দণ্ডবিধি গুপ্তযুগের তুলনায় কঠিন ছিল। বিচারবিভাগীয় বুজন কর্মচারী পদের নাম পাওয়া যায় দুঃসাধ্যসাধনিক ও প্রমাতা।


হর্ষবর্ধন প্রারম্ভিক জীবনে শৈব ছিলেন, পরবর্তীকালে তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি একাধিক সংঘারাম প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি জীবহত্যা নিষিদ্ধ করেন। বৌদ্ধধর্মের প্রতি অনুরাগ ও শ্রবা প্রদর্শিত হলেও প্রয়াণের পঞ্চবার্ষিকী মেলায় হর্ষবর্ধন ধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ তুলে ধরেন। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর এই মেলার বহু ধর্মের অগণিত মানুষের আগমন ঘটত। বৃদ্ধ, সূর্য ও শিবের উপাসনা করা হত, বৌদ্ধভিক্ষু ও ব্রাহ্মণদের দান করা হত, হর্ষবর্ধন নিজের সকল অলংকার ও পরিধেয় রাজবন্ত্রটিও দান করে সাধারণ পোশাকে রাজধানীতে ফেরেন। এই সম্মেলন মহামোক্ষ পরিষদ নামে খ্যাত।


হর্ষবর্ধন স্বয়ং ছিলেন সুপন্ডিত ও বিদ্যোৎসাহী। হর্ষবর্ধনের বিদ্যাশিক্ষা ছিল ধর্মভিত্তিক এবং বিভিন্ন সংঘারাম ও বৌদ্ধবিহারগুলি শিক্ষাকেন্দ্র হিসাবে কাজ করত। ব্রাহ্মীলিপি ব্যবহৃত হত, উচ্চ শিক্ষার ভাষা মাধ্যম ছিল সংস্কৃত। পাণ্ডিত্য যাচাই-এর জন্য হর্ষবর্ধন তর্কযুদ্ধের আহ্বান করতেন এবং তিনি স্বয়ং তর্কযুদ্ধে অংশ নিতেন। তর্কযুদ্ধের বিজয়ীকে তিনি অভিনন্দিত ও পুরস্কৃত করতেন।


হর্ষবর্ধন ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত শিক্ষাকেন্দ্র নালন্দার অনুরাগী পৃষ্ঠপোষক। ৬টি বৌদ্ধবিহারের সমন্বয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠে। ৬ জন রাজার দানে এই বিহারগুলি গড়ে ওঠে, এই ৬ জন রাজার মধ্যে যষ্ঠজন ছিলেন হর্ষবর্ধন। হর্ষবর্ধন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপরিচালনা ও উন্নয়নের জন্য অকাতরে আর্থিক ও নৈতিক সমর্থন করতেন। 



সাহিত্যের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, হর্ষবর্ধন স্বয়ং ছিলেন সাহিত্যরসিক। তিনি নিজে সাহিত্য রচনা করাতেন, সম্ভবত বাঁশখেরা ও মধুবন তাপ্রশাসনের স্তবকগুলি তাঁরই রচনা। কারণ রচনার অস্তে তাঁর স্বাক্ষর রয়েছে। জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিদের উৎসাহদানের কাজে হর্ষবর্ধন। ছিলেন উদার ও আন্তরিক। বাণভট্ট, ময়ূরমাত্য, দিবাকর প্রমুখ কবি হর্ষবর্ধনের সভা অলংকৃত করতেন। শুধু সাহিত্যের ক্ষেত্রে নয় স্বয়ং নাট্যকার হিসাবে হর্ষবর্ধন খ্যাতি অর্জন করেন। প্রিয়দর্শিকা, রত্নাবলী ও নাগানন্দ-এই তিনটি নাটক হর্ষবর্ধন রচনা করেন। নাগানন্দ নাটকের বিষয়বস্তু রচনার ক্ষেত্রে হর্ষবর্ধনের ধর্মীয় সহিষুতার পরিচয় পাওয়া যায়।


পরিশেষে বলা যায় যে, পুষ্যভূতি বংশীয় রাজা হর্ষবর্ধনের কর্মকান্ডের মূল্যায়নের সারবস্তু আলোচনার ক্ষেত্রে ইতিহাসের বহু অমীমাংসিত প্রশ্নের মতো এই বিষয়েও কোনো স্থির সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হয়নি। তবে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করলে তার প্রকৃত মূল্যায়ন সম্ভব হয়েছে। হর্ষবর্ধন উত্তরাংশের সমগ্র এলাকা তাঁর ছত্রছায়ায় না আনতে পারলেও নিজ ক্ষুদ্র রাজ্যকে সাম্রাজ্যের পর্যায়ে উন্নীত করেন। সুশাসন থেকে শিক্ষা, সংস্কৃতি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমৃদ্ধি সর্বত্রই উৎকর্ষতা লাভ করেছিল। আনুমানিক ৬৪৭ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু হয় এবং পুষ্যভূতি বংশের অবসান ঘটে। তবে এককথায় বলা যায়। যে, হর্ষবর্ধনের শাসনকাল প্রাচীন ভারতের ইতিহাসকে সার্বিকভাবে সমৃৎ করেছিল।।

তোমাকে অনেক ধন্যবাদ হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব ও কার্যাবলী আলোচনা কর এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟