হর্ষবর্ধনকে 'সকলোত্তরপথনাথ' বলা কতটা যুক্তি যুক্ত? অথবা,হর্ষকে 'সকলোত্তরপথনাথ' নামে অভিহিত করা হয়। তাঁর রাজ্যের সীমানা নির্দেশ কর এবং শশাঙ্ক, ভাস্করবর্মন ও দ্বিতীয় পুলকেশীর সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক সম্পর্ক আলোচনা কর।
হর্ষের রাজত্বকাল সম্পর্কে তার সভাকবি বানভট্ট বিরচিত 'হর্ষচরিত' বিখ্যাত উপাদান ৷ কিন্তু এতে হর্ষের রাজত্বকালের সমস্ত ঘটনা পাওয়া যায়নি ৷ হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালের প্রথম দিকের বিশদ বিবরণ, হর্ষের বিজয় অভিযা, সমসাময়িক কালের অর্থনৈতিক, সামাজিক ,ধর্মনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রভৃতি বানভট্টের রচনায় পাওয়া যায় ৷
লিপিতে হর্ষবর্ধনকে সকল উত্তর পথনাথ বলে গৃহীত করা হয়েছে হর্ষবর্ধনের সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি সম্পর্কে পণ্ডিত গণ একমত নন । কোন কোন ঐতিহাসিক এর মতে হর্ষবর্ধনের সাম্রাজ্য থানেশ্বর কোন অভিছত্ব শ্রাবন্তী নিয়ে গঠিত ছিল হিউয়েন সাং এর বিবরণে মগধ, উড়িষ্যা হর্ষবর্ধনের সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছিল ৷ উত্তরের বিন্ধ পর্বত থেকে আরম্ভ করে দক্ষিনে নর্মদা নদী পর্যন্ত এবং পূর্বে গঞ্জাম থেকে পশ্চিমে বলবি পর্যন্ত সমগ্র ভূখণ্ডে হর্ষবর্ধনের সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল ৷ ডক্টর কে এম পান্নিকর তার "সার্ভে অফ ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি" গ্রন্থে বলেছেন যে বিন্ধ পর্বতের উত্তরে সকল দেশ, নেপাল, কাশ্মীর হর্ষের সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল ৷ এটিং হাউজিং এর মতে, কামরূপ থেকে কাশ্মীর, হিমালয় থেকে বিন্ধ পর্বত ছিল হর্রষে সীমানায় ৷"ডঃ আর কে মুখার্জি মন্তব্য করেছেন যে সকল সম্ভাব্য দিক দিয়ে বিচার করলে দেখা যায় যে হর্ষ সমগ্র উত্তর ভারতের সার্বভৌম সম্রাট বা অধিরাজে পরিণত হন ৷
উপরিউক্ত আলোচনার তীব্র সমালোচনা করেছেন ডঃ আর.সি মজুমদার ৷ সম্পর্কে জানার জন্য আমরা হিউয়েন সাং ও বানভট্টের উপর নির্ভর করে থাকি কিন্তু এই উপাদানগুলিতে হোয়াটসঅ্যাপ সীমানা সম্পর্কে অস্পষ্ট ও ধোয়াটে কথা আছে ৷ তাই তিনি দাবি করেন যে বনভট্টের মতে হর্ষবর্ধন ছিলেন "হর্ষ পঞ্চ ভারতের প্রভু ছিলেন"। হিউ-ইয়েন-সাং-এর মতে, হর্ষ ভারতের সকল রাজাকে তার বশ্যতা স্বীকার করতে নতুবা তার সঙ্গে যুদ্ধ করতে আহ্বান জানান ৷" চালুক্য লিপিতে হর্ষবর্ধনকে সকলোত্তর পথনাথ বলে উল্লেখ করা হয়েছে । কিন্তু এই সকল মন্তব্য থেকে হর্ষবর্ধনের রাজ্যের প্রকৃত সীমা সম্পর্কে কোন কিছুই জানা যায় না এই মন্তব্যগুলির মধ্যে প্রচুর অসংগতি রয়েছে ।
রাজ্যসীমা জানতে হলে তিনি কোন কোন রাজ্য প্রকৃত জয় করেন তা জানা দরকার (১). হর্ষ উত্তরাধিকারী সূত্রে থানেশ্বর বা পূর্ব পাঞ্জাবের অধিকার পান (২) তিনি তার ভগ্নীর স্বার্থে কনজ বা উত্তরপ্রদেশের দুয়া বঞ্চল ও তার সংলগ্ন অঞ্চল অধিকার করেন (৩). তিনি শশাঙ্কের মৃত্যুর পর মগধ বা বিহার, পশ্চিমবাংলা উড়িষ্যা ও গঙ্গোত বা গঞ্জাম জয় করেন ৷ এই অঞ্চলে হর্ষ প্রত্যক্ষ শাসন স্থাপন করেন কিনা সে বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করা হয় । এই পর্যন্ত হর্ষের রাজ্যসীমা সম্পর্কে কোন গোলমাল নেই কারণ বানের অভিমত যে হর্ষ পঞ্চ ভারতের প্রভু ছিলেন পঞ্চ ভারত বলতে পাঞ্জাব কোন বিহার বাংলা উড়িষ্যা বোঝায় ৷
উপরিক্ত আলোচনা থেকে একথা বলা যায় যে, হর্ষবর্ধনকে সকলোত্তর পথনাথ অথবা উত্তর ভারতের অধিরাজ বলা যুক্তিযুক্ত নয় ৷ বলা হয়ে থাকি যে চালুক্য রাজ দ্বিতীয় পুলকেশরী হর্ষবর্ধনের বিরুদ্ধে তার কৃতিত্বকে অতিরঞ্জিত করার উদ্দেশ্যেই তাকে সকলোত্তর পথনাথ অভিধায় ভূষিত করেছিলেন ৷ তবে প্রাপ্ত উপাদানের উপর নির্ভর করে এই কথা বলা যায় যে, হর্ষবর্ধন সমগ্র উত্তর ভারতের সাম্রাজ্যভুক্ত করতে না পারলেও উত্তর ভারতীয় তার রাজনৈতিক প্রাধান্য ছিল এবং সেখানকার এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল তার প্রভাবাধীন ছিল ৷
FAQ QUESTION
সকলোত্তরপথনাথ কাকে বলা হয় এবং কেন?
সকলোত্তরপথনাথ হর্ষবর্ধনের আরেকটি নাম, তিনি সপ্তম শতাব্দীর একজন প্রাচীন ভারতীয় সম্রাট । তাকে সকলোত্তরপথনাথ বলা হয় কারণ তিনি একজন বিখ্যাত শাসক ছিলেন যা প্রশাসন এবং যুদ্ধ উভয় ক্ষেত্রেই তার দক্ষতার জন্য পরিচিত ছিলেন ।
কাকে সকলোত্তরপথনাথ বলা হত?
হর্ষবর্ধনকে বলা হতো সকলোত্তরপথনাথ।
হর্ষবর্ধনের উপাধি কি ছিল?
হর্ষবর্ধনের উপাধি ছিল সকলোত্তরপথনাথ বা গৌড়
উত্তর পথনাথ উপাধি ধারণ করেন কে?
উত্তর পথনাথ উপাধিটি হর্ষবর্ধনের বড় ভাই রাজ্যবর্ধন গ্রহণ করেছিলেন।
সকলোত্তরপথনাথ উপাধি কার ছিল?
হর্ষবর্ধনের উপাধি ছিল সকলোত্তরপথনাথ।
হর্ষবর্ধনের কবি কে ছিলেন?
হর্ষবর্ধনের কবি ছিলেন বানভট্ট, যিনি তাঁর জীবনী "হর্ষচরিত" লিখেছেন।
সকলোত্তরপথনাথ উপাধি ছিল
সকলোত্তরপথনাথ কনৌজের সম্রাট হর্ষ বর্ধন উপাধি ধারন করেছিলেন ।
হর্ষবর্ধনের লেখা দুটি বইয়ের নাম
হর্ষবর্ধনের লেখা দুটি বিখ্যাত বই হল "হর্ষচরিত", বাণভট্টের নিজের লেখা একটি জীবনী এবং "রত্নাবলী", হর্ষবর্ধনের নিজের লেখা একটি নাটক।
তোমাকে অনেক ধন্যবাদ হর্ষবর্ধনকে 'সকলোত্তরপথনাথ' বলা কতটা যুক্তি যুক্ত? এই নোটটি পড়ার জন্য