প্রাচীন, মধ্যযুগ অথবা ঔপনিবেশিক ভারতের কোনো একটি স্থাপত্য নিদর্শন কিংবা কোনো চারুশিল্প প্রদর্শনশালা যা তুমি পরিদর্শন বা ভার্চুয়াল ভ্রমণ করেছ তার উপর একটি প্রতিবেদন লেখো।
Report on Taj Mahal
স্মৃতি সৌধের নামঃ তাজমহল
তারিখঃ ০১/০৬/২৪
সময়ঃ প্রবেশ সময়ঃ ১০:০০a.m
বাহির সময়ঃ ০৪:০০p.m
ভূমিকাঃ আধুনিক পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে অন্যতম হলো মুঘল সম্রাট শাহজাহান নির্মিত তাজমহল ৷ কথিত আছে সম্রাট শাহজাহান তার প্রিয় পত্নী মমতাজের স্মৃতির রক্ষার্থে এই অনন্য নিদর্শন স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেছিলেন ৷ তাই ভারত সহ পৃথিবীর অনুসন্ধিত মানুষের মননের অধিকারী ব্যক্তিবর্গ প্রতি বছর এই তাজমহল দর্শন করতে
আসে ৷
বর্তমানে স্নাতক স্তরে CBSS ব্যবস্থার প্রচলিত হবার ফলে একটি বিশেষ বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সেটি হল Skill Enhancement Course বা SEC যেখানে সামঞ্জস স্তরে বিষয় সঙ্গে চতুর্থ সেমিস্টারের সঙ্গে ভারতীয় কলার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে । ইতিহাস যেহেতু অতীতের কথা বলে আর সেই অতীত মানুষের সাংস্কৃতিক অতীতকে তুলে ধরে সভ্যতার কোন একটি পর্বে ভারতীয় ইতিহাসে মুঘলদের যে সাংস্কৃতিক কার্যকলাপকে আমরা পড়েছি তার চাক্ষুস নিদর্শন ৷ শাজাহান নির্মিত তাজমহল যেটি ওই সময়ের শৈল্পিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশের চিত্র বহন করে চলেছে।
তাজমহলের অবস্থানঃ
তাজমহলকে মুঘল স্থাপত্য সৈনিক একটি আকর্ষণীয় নিদর্শন হিসেবে মনে করা হয় যার নির্মাণ সূচিত হয় ১৫ বাস ১৬৩২ খ্রিস্টাব্দে একটি বর্তমানে ভারতবর্ষের উত্তরপ্রদেশের রাজ্য আগ্রা শহরে যমুনা নদীর দক্ষিণ দিকে অবস্থিত ৷ প্রায় এক ৪২ একর জমিতে নির্মিত ৷ এই শব্দটি ভৌগোলিকভাবে ২৭°১০'৩০" উত্তরাংশ এবং ৭৮°২'৩১" পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত ৷ বর্তমানে একটি ভারত সরকারের অধীনে সংরক্ষিত এবং ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো এটিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে স্বীকৃতি দেন ৷ ২০০৩ এর হিসাব অনুযায়ী প্রতি বছরে প্রায় ৩০ লক্ষেরও বেশি দর্শনার্থী তাজমহল ভ্রমণে আছেন ৷
পথনির্দেশঃ
(১). আকাশ পথঃ বাগনান (আপনার বাড়ি নাম) থেকে বাস পথে কলকাতা বিমানবন্দর এবং সেখান থেকে প্লেনে নিউ দিল্লি তে নেমেও ওখান থেকে আগ্রাগামি যেকোনো গাড়ি নিয়ে তাজমহলে পৌঁছানো যাবে ৷
(২). রেলপথঃ হাওড়া অথবা শিয়ালদহ থেকে নয়া দিল্লি গামী রাজধানী এক্সপ্রেস অথবা পূর্ব মেলা ট্রেনে সরাসরি দিল্লীতে হয়ে আগ্রা পৌঁছানো যায় ৷
তাজমহলের বর্ণনাঃ
তাজমহল শব্দটি ফারশি শব্দ 'তাজ' অর্থাৎ মুকুট এবং 'মহল' অর্থাৎ প্রাসাদ ৷ ভারতবর্ষের পঞ্চম মুঘল সম্রাট শাহজাহানের এই স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেন ৷ শাহজাহানের দ্বিতীয় স্ত্রী মমতাজ মহল চতুর্দশ সন্তান গওহর বেগমের প্রসবের সময় মৃত্যুবরণ করেন ৷ এই স্ত্রীর মৃত্যুর শাজাহান প্রচন্ড শোকাহত হন । তাই এই স্ত্রীর স্মরণে তিনি একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের উদ্যোগ নেন ৷ এই স্মৃতিসৌধটি তাজমহল নামে খ্যাত ৷ উল্লেখ্য তাজমহল তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল ১৬৩২ খ্রিস্টাব্দে ৷ মূল সৌধের অংশ শেষ হয়েছিল ১৬৪৩ খ্রিস্টাব্দে ৷ তারপর তার পরিকল্পনা অনুসারে সম্পূর্ণ তাজমহল শেষ হয়েছিল ১৬৫৩ খ্রিস্টাব্দে ৷
তাজমহল তৈরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের গুলি প্রকৌশলী নিয়োগ করা হয়েছিল বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রকৌশলীদের যে তালিকা পাওয়া যায় তা হল -
- পারস্য দেশীয় স্থপতি ওস্তাদ ঈসা, উনি চতুর্থের নকশা করার বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন ৷
- বড় গম্বুজটির নকশা করেছিলেন অটোমান সাম্রাজ্য থেকে আগত ইসমাইল খাঁ ।
- কাজিম খান লাহোরের বাসিন্দা বড় গম্বুজের চূড়ার স্বর্ণের দণ্ড স্থাপন করেছিলেন ৷
- চিরঞ্জিলাল দিল্লি থেকে আগত প্রধান ভাস্কর্য ও মোজাইক কারক ৷
- আমানত খা প্রধান চারুলীপিকার তার নাম তাজমহলের প্রবেশপথের দরজায় প্রত্যাহিত করা আছে ৷ সেইখানেই তার নাম পাথরে খোদাই করে লেখা আছে ৷
- মোহাম্মদ হানিফ রাজমিস্ত্রিদের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন ৷
- মীর আব্দুল করিম এবং মোকারিমাত খান প্রধান যারা ব্যবস্থাপক ৷
শাজাহান তাজমহলের জন্য যমুনা নদীর তীরে আগ্রা শহরে দক্ষিনে একটি জায়গা নির্বাচন করেন ৷ এই জায়গাটির মালিক ছিলেন মহারাজা জয় সিং ৷ শাহজাহান তাকে আগ্রা শহরের মাঝখানে একটি বিশাল প্রাসাদ দেওয়ার বদলে জমিটি অধিগ্রহণ করেন ৷ এর ভিত্ত তৈরীর জন্য তিনি প্রায় ৩ একর জায়গাকে খনন করেন তাতে আলগা মাটি ফেলা হয়। নদীর পাড় থেকে প্রায় 50 মিটার উঁচু করা সমান করা হয় এরপর পুরো তাজমহলের জন্য প্রায় ৫৫ মিটার লম্বা জায়গা তৈরি করা হয় এর ভেতরে সমাধি স্থান স্থানের জন্য ১৮ মিটার ব্যাসের জায়গা নির্বাচন করে এরপর ২৮ মিটার উচ্চ সমিতির ভবন তৈরি করা হয়।
পরিকল্পনা অনুসারে তাজমহলের সামনে চত্বরের একটি বড় চার বাগান (মুঘল বাগান পূর্বে চার অংশে বিভক্ত থাকতো) করা হয়েছিল ৷ ৩০০ মিটার × ৩০০ মিটার জায়গায় বাগানের প্রতি চতুরাংশে উঁচুপদ ব্যবহার করে ভাগ গুলোকে ১৬ টি ফুলের বাগানে বিভক্ত করা হয়েছে । এর ভিতর মাজার অংশ এবং দরজার মাঝে একটি বাগানের মধ্যখানে একটি উঁচু মার্বেল পাথরের পানির চৌবাচ্চা বসানো হয়েছে ৷ এছাড়াও তাজমহলের প্রতিফলন দেখার জন্য উত্তর-দক্ষিনে একটি সরলরৈখিক চৌবাচ্চা তৈরি করা হয়েছে ৷ তাজমহলকে অধিকতর সৌন্দর্যমন্ডিত করার জন্য বাগানের নকশায় যমুনা নদীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল ৷
দেওয়ালের ভিতরে এর একটি মসজিদঃ
তাজমহলের চতুর টি বেলে পাথরের দুর্গের মতো দেয়াল দিয়ে তিন দিক থেকে বিস্তৃত ৷ নদীর সল্প উচ্চতা দেওয়াল আছে ৷ তাই এই দেয়াল বেষ্টনীর বাইরে আরো সমাধি আছে যার মধ্যে শাহজাহানের স্ত্রীদের সমাধি এবং মমতাজ মহলের প্রিয় পরিচালিকায় একটি বড় সমাধি রয়েছে ৷ এই স্থাপত্যসমূহের প্রধানত লাল বেলে পাথর দ্বারা তৈরি ৷ দেখতে সে সময়কার ছোট আকারের মুঘল সাধারণ সমাধির মতন । দেওয়ালের ভেতরের দিকটা হিন্দু মন্দির আদলের তৈরি দেয়ালগুলোর বিচিত্র গম্বুজাকৃতির ইমারত দিয়ে সংযুক্ত । এগুলোকে পর্যবেক্ষণ চৌকি হিসাবে ব্যবহার করা হতো ৷ বর্তমানে এই অংশ জাদুঘর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ৷
তাজমহলে ঢোকার প্রধান ফটো মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি এর উপরে রয়েছে অনেকগুলো ছোট গম্বুজ দরজাটির নকশা ও ধরন মুঘল সম্রাটদের স্থাপত্য রীতির ৷ এর খিলান সমূহের আকৃতি সমাধির খিলান সমূহের অনুরোধ ছাঁদে পাথরের উপরে সুন্দর সুন্দর জ্যামিতিক নকশা আছে । এর ভেতরে পূর্ব ও পশ্চিম বরাবর দুটো মসজিদ আছে ৷ মুঘল আমলে অনেক সময় পুরুষ মেহমানদের থাকার জন্য ইমারত দুটি ব্যবহার করা হতো ৷ এই মসজিদের মেঝেতে ৫৬৯ জন মুসল্লির নামাজ পড়ার জন্য কালো পাথর দিয়ে দাগ কাটা আছে ৷ মসজিদে দেওয়াল লাল রং এর ৷
তাজমহলের প্রধান ফটক মূল সমাধির উপরে মার্বেল পাথরের বিশাল গম্বুজ রয়েছে এর আকার প্রায় 35 মিটার ৷ গম্বুজের একটি ৯ মিটার উচ্চতার সিলিন্ডার আকৃতির ড্রাম এর উপরে বসানো এর আকৃতির কারণে এই গম্বুজকে কখনো পেঁয়াজ গম্বুজ অথবা পেয়ারা গম্বুজ বলে ডাকা হয় । গম্বুজের উপর দিক দিক সাজানো হয়েছে একটি পদ্ম ফুল দিয়ে বড় গম্বুজের ওপর মুকুটের মতো একটি পুরানো মোচাকার চূড়া আছে ৷ কথিত আছে চূড়াটি, ১৮ শতকের আগে স্বর্ণের নির্মিত ছিল কিন্তু বর্তমানে এটি ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরি ৷ এই চূড়াটিতে পারস্য দেশীয় এবং হিন্দু স্থাপত্যের সংমিশন সৃষ্টি ইসলামিক উপাদান হিসেবে একটি চাঁদ এর সাথে একটি সিং যুক্ত আছে ৷ উভয় মিলে হিন্দু দেবতার শিব এবং ত্রিশূল এর মত বড় গম্বুজের চারকোনা আইন আরো চারটি ছোট গম্বুজ আছে, ছোট গম্বুজ গুলোকে দেখতে বড় গম্বুজেরই মত, ছোট গম্বুজ গুলোতেও কাঁসা বা তামার পুরনো দন্ড আছে ।
তাজমহল তৈরির জন্য নানা দেশ থেকে নানা ধরনের উপকরণ সংগ্রহ করা হয়েছিল ৷ এর ভিতর ছিল মাখরার নামক আলো প্রবাহী অস্বচ্ছ সাদা মার্বেল পাথর ৷ এই পাথর আনা হয়েছিল রাজস্থান থেকে ৷ পাঞ্জাব থেকে আনা হয়েছিল লাল, হলুদ ও বাদামী রঙের মাধ্যম রঙের পাথর ৷ চীন থেকে আনা হয়েছিল ইয়াসম নামক কঠিন সাদা, সবুজ, পাথর এবং ফটিক টুকরা । তিব্বত থেকে সবুজ নীলাভ(ফিরোজা) রঙের বৈদ্যুত রত্ন এবং আফগানিস্তান থেকে নীলকান্ত মনি আনা হয়েছিল ৷ এছাড়াও নীলমণি আনা হয়েছিল শ্রীলংকা থেকে ৷ নির্মাণ কাজের সময় এই সকল সামগ্রী বহনের জন্য হাজারেরও বেশি হাতি ব্যবহার করা হয়েছিল ৷ আর কুড়ি হাজার শ্রমিক এই নির্মাণ কাজে অংশ নিয়েছিলেন ৷
মূল সামাজিক অক্ষের ভেতর রয়েছে শাহজাহান আর মমতাজ মহলের কবর শাহজাহানের কবরটির ওপর আবরক বাক্সটি দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ও উচ্চতা অপেক্ষাকৃত বড় ।
তাজমহলে নির্মাণ শৈলীর পরিকল্পনাও সৌন্দর্য সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা আমাদের স্বল্প পরিসরে সম্ভাব নয় ৷ তবে এ যুগে যুগে বিভিন্ন দেশের শিল্প ও সামান্য দর্শক আমাদের মতই অনুপম সৌন্দর্য মোহিত ও বিস্মৃত হয়েছেন কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীরা ৷ উদ্ভূত হয়েছেন বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তাৎপর্য বিশ্লেষণ করেছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও অমর কথা শিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ৷ বিভিন্ন সমালোচক দিয়েছেন নিজস্ব ব্যাখ্যা সরসীকুমার সরস্বতী লিখেছেন ,"The Taj Mahal enchant the eye and fills the heart with reverence for an andying love that could find eloquent expression in mate marble" এই ধরনের আবেগ হয়তো কিছুটা কল্পনা আছে এবং তার শিল্প-রসিদের দৃষ্টিকে কিছুটা আচ্ছন্ন করে ৷ তবে আমার মত তাজমহলে যে সৌন্দর্যতা যুগ যুগ ধরে মানুষকে কেন এবং কিভাবে মুগ্ধ বা আকৃষ্ট করছে তার স্বচ্ছন্দে না দেখলে বোঝাতে পারবো না ৷ পৃথিবীতে কোন বস্তুই নিখুত হয় না, সমালোচকরা তা নিয়ে একাধিক বিশ্লেষণ করতে পারবেন ৷ কিন্তু ছাত্র হিসাবে মুঘল ইতিহাসের যে কথা আমরা বইয়ের পাতায় পড়েছিলাম তা যেন কোথাও একটা আমার মনের জীবন্ত ছবি এঁকে দিয়েছে ৷