তুমি কি মনে কর টোকুগাওয়া শোগুনতন্ত্রের পতন 'হত্যা' অথবা 'প্রত্তহত্যা'? অথবা, যেসব ঘটনাক্রম জাপানে উনাক্তকরণ ও শোগুনতন্ত্রের পতন নিয়ে গেছিল সেগুলি চিহ্নিত কর।

 তুমি কি মনে কর টোকুগাওয়া শোগুনতন্ত্রের পতন 'হত্যা' অথবা 'প্রত্তহত্যা'? অথবা, যেসব ঘটনাক্রম জাপানে উনাক্তকরণ ও শোগুনতন্ত্রের পতন নিয়ে গেছিল সেগুলি চিহ্নিত কর।


তুমি কি মনে কর টোকুগাওয়া শোগুনতন্ত্রের পতন 'হত্যা' অথবা 'প্রত্তহত্যা'? অথবা, যেসব ঘটনাক্রম জাপানে উনাক্তকরণ ও শোগুনতন্ত্রের পতন নিয়ে গেছিল সেগুলি চিহ্নিত কর।


 ১৬০৩ থেকে ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কাল হল টোকু গাওয়া শোগুন তন্ত্রের যুগ এই যুগ নানা দিক থেকে এই ছিল গুরুত্বপূর্ণ ৷ ২৫০ বছর ধরে জাপান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে টিকে ছিল । এই যুগ সোগুন শাসনের যুগ নামেও অভিহিত হয় । সমাধি জান বথম সোগান ছিলেন মিনামিটো জোরিটোমো এবং সর্বশেষ সোগুন ছিলেন জোশিনবু । রাশেদ সোগুন বংশ ছিল টোকুগাওয়া বংশ (১৬০৩ ১৮৬৭ খ্রিঃ) এবং জোশিনবু হলেন এই পরিবারের শেষ প্রতিনিধি । তাঁর পদত্যাগের সাথে সাথে সোগুন শাসনের রীয় অঞ্চলে সাধন ঘটে।



 সোগুন শাসকগণ চীন থেকে আগত বৌদ্ধধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন এবং বৌদ্ধ ধর্মকেই রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসাবে স্বীকৃতি দেন । কিন্তু জাপানের সাধারণ মানুষ জাপানের নিজস্ব ধর্ম শিন্টো ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট ছিল এবং শিন্টো ধর্মকেই পুনরায় রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসাবে স্বীকৃতি দিতে আগ্রহী ছিল । আবার শিন্টো ধর্ম অনুযায়ী দেশের প্রকৃত শাসক কিন্তু সোগুন গণই বাস্তবিকপক্ষে সর্বময় কর্তৃত্ব ভোগ করতেন। 


সুতরাং, জনসাধারণের দৃষ্টিতে সোগুনদের শাসনের কোনো ধর্মমত ও ন্যায়সঙ্গত নৌ-শক্তির ঘড়ি ছিল না । সোগুনগণ অবৈধভাবে সম্রাটের ক্ষমতা অধিকার করে নিয়েছে -এরূপ' দ্বিধারা জনগণকে সোগুন বিরোধী করে তোলে । ফলে জনগণ সম্রাটের অপহৃত মত পুনরুদ্ধারের জন্য আন্দোলনের পথে পা বাড়ায় । নোবুনাগা মোটুরির নেতৃত্বে চাঁদ্ধ ধর্মের প্রভাব বর্জন করে প্রাচীন জাপানী ভাবধারা এবং শিন্টো ধর্মের পুনর প্রতিষ্ঠার জন্য সোগুন বিরোধী আন্দোলন ক্রমেই প্রবলতর হয়ে ওঠে ।


 প্রথমদিকে সোগান শাসকগণ যথেষ্ট যোগাতা থাকলেও পরবর্তীকালে তাঁরা বিলাসী, আরামপ্রিয় এবং শাসনকার্যে উদাসীন হয়ে জন । তাঁরা তাদের অনুগত ও বিশ্বস্ত কর্মচারীদের উপর শাসনকার্যের দায়িত্ব অর্পণ করে এডোর রাজপ্রাসাদে নিশ্চিন্ত মনে সময় কাটাতে শুরু করেন । শাসনকার্যে সোগানদের উদাসীনতার ফলে দেশে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিতে থাকে । এভাবে সোগানরা নিজেদের পতনের পথ সুগম করে তোলেন ৷


 এভাবে সোগুন যোশমুনে শাসনকার্যে সংস্কার সাধন করার চেষ্টা করেন । কিন্তু তার উত্তরাধিকারীগণ পুনরায় উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের উপর শাসনকার্যের সকল দায়িত্ব ছেড়ে দেন । একাদশ সোগুন ইয়েনরি সোগুন শাসকদের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘদিন শাসনকার্য পরিচালনা করার সুযোগ পান । কিন্তু তাঁর শাসনকালের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই শোচনীয় হয়ে পড়ে । এই অর্থনৈতিক সংকটের হাত জাপান পরবর্তী সোগুনদের আমলে পরিত্রাণ পেতে সমর্থ হয়নি ।


 বৈষম্যমূলক ভিত্তির উপর গঠিত জাপানের মধ্যযুগীয় সামাজিক কাঠামো উনবিংশ শতকে একেবারেই অচল হয়ে পড়ে । নাগরিক সভ্যতার বিকাশ, মুদ্রার প্রচলন প্রভৃতি ধনী শ্রেণীর কাছে স্বাগত হলেও কৃষিজীবীদের নিকট অনিষ্টমূলক বলে বিবেচিত হতে থাকে । এই সময় জাপানের মোট অধিবাসীর প্রায় ৮০ শতাংশ কৃষির উপর নির্ভরশীল ছিল এবং চাল ছিল অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির প্রতীক । কিন্তু অষ্টাদশ শতকের প্রথম থেকেই মুদ্রার প্রচলন বৃদ্ধি পেতে থাকলে একদিকে কৃষকগণ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ডাইমো বা ভূস্বামীগণও এই ক্ষতির হাত থেকে পরিত্রাণ পায় নি। ডাইমোগণের জমি থেকে আয় হ্রাস পেতে শুরু করলে সোগানদের শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভও বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং যথ শীঘ্র সম্ভব এই শাসন ব্যবস্থার পরিসমাপ্তি ঘটানোর জন্য তারা সচেষ্ট হয়ে ওঠে।


 আবার অপরদিকে প্রায় দুশ বছর জাপান বাইরের জগত থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল বলে কোনো যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করায় সামুরাইদের সামরিক নিপুণতা হ্রাস পায় এবং ডাইমো ও কৃষকগণ সামুরাইদের সুবিধাবাদী, পরগাছা শ্রেণীর মানুষ বলে মনে করতে শুরু করে । আবার একইভাবে কর্মহীন সামুরাই শ্রেণী এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকগণ নানা কারণেই সোগুন - বিরোধী ছিল ।


মেইজি যুগের বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ প্রিন্স মাৎসুকাটা-র মতে, সপ্তদশ শতক থেকেই জাপানের অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি ঘটতে শুরু করে এবং উনবিংশ শতকে তা চরমে ওঠে। সোগান শাসকগণ এই অর্থনৈতিক সংকটের মোকাবিলা করার উল্লেখযোগ্যভাবে কোনো চেষ্টা করেন নি। সোগানদের ব্যয়বহুল জীবনযাত্রা, অনিয়ন্ত্রিত প্রশাসনিক ব্যয় প্রভৃতি ছাড়াও প্রভাবশালী ডাইমোদের আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাত্রা দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে তোলে।


প্রকৃতপক্ষে টেম্পো যুগে (১৮৩০-৪৩) সমগ্র জাপানে এক ঘোরতর সংকটময় পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। এই সংকটের মূল কারণ ছিল সোগান শাসকদের ভ্রান্তিপূর্ণ অর্থনীতি। এরূপ পরিস্থিতিতে দেশের সকল শ্রেণীর মানুষ সোগুনদের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। দেশের এই অভ্যন্তরীণ সংকটের সময় কমোডোর পেরির জাপান সাগরে আবির্ভাব সোগুনদের পনতকে অনিবার্য করে তোলে। 



সম্পর্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই উদ্দেশ্যে মার্কিন নৌ-সেনাপতি জাপানের সাথে রাষ্ট্রপতি মিলার্ড ফিলমোর লিখিত চিঠিখানি সোগানদের দরবারে পেশ করেন এবং চিঠির উত্তরের জন্য পরবর্তী বছরে পুনরায় আসবেন একথা জানিয়ে তিনি স্বদেশে ১) পরিৎজন্য জাপানের উপকূলে তৈল গ্রহণের সুযোগদান; ২) অবাধ বাণিজোর অনুকূলে একটি বাণিজ্যিক সন্ধিপত্র স্বাক্ষরকরণ এবং ৩) যুক্তরাষ্ট্রের সাথে জাপানের মৈত্রী স্থাপন। 



কিন্তু জাপান সম্রাট বিদেশীদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের বিরোধী ছিলেন। এতে বিলও ইমোগণ দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। বিদেশীদের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনে অগ্রহী ডাইমোগণ 'জয়তো' এবং অনাগ্রহী ডাইমোগণ 'কাইকোকুটো' নামে পরিচিত। কিন্তু সোগান কাইকোকুটোদের মত অগ্রাহ্য করে ১৮৫৪ খ্রিঃ কমোডোর পেরি পুনরায় তারে এগতে উপস্থিত হলে তাঁর সাথে কানাগাওয়ার সন্ধিপত্র স্বাক্ষর করেন। এই সন্ধি নিকট অনুযায়ী স্থির হয়- ক) নাগাসাকিসহ আরও দুটি বন্দর যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক জাহাজের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। খ) এগে থেকে ৬০ মাইল দূরে অবস্থিত শিমোগাতে যুক্তরাষ্ট্রের একজন কনসাল নিযুক্ত হবেন। গ) জাপানে অন্যান্য বৈদেশিক শক্তিবর্গ যে সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসীরাও সেই সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে।


এভাবে সম্রাট ও অধিকাংশ ডাইমোর বিরোধীতা অগ্রাহ্য করে সোগুন নিজ দায়িত্বে জাপানের বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটিয়ে বিদেশীদের কাছে তার বন্দর উন্মুক্ত করে যে চরম কূটনৈতিক ভুলের পরিচয় দেন তা অদূর ভবিষ্যতে সোগুন সরকারের বিলুপ্তির পথ প্রশস্ত করে।



জাপানের অভ্যন্তরীণ সংকট এবং বিদেশীদের রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি নিঃসন্দেহে সোগুনদের পতনের পটভূমিকা প্রস্তুত করেছিল । এরূপ অবস্থায় অনন্যোপায় হয়েই সোগুন বিদেশী শক্তিবর্গের সাথে সম্পর্ক করতে বাধ্য হন । আপাত দৃষ্টিতে বিদেশীদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনই সোগুন শাসনের অবসানের কারণ রূপে চিহ্নিত হয় । সেজন্য অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন যে, সোগুনের এই নীতিই তার পতনের কারণ । তবে কিন্তু সোগুন শাসনের অবসান এবং সম্রাটের ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের পটভূমিকা বিশ্লেষণ  করলে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, সোগুনদের অযোগ্য শাসন এবং ভ্রান্ত নীতি জাপানের মানে সমস্ত শ্রেণীর মানুষকেই তাঁদের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছিল । সোগুন শাসনের অবসানের জন্য তারা নানা ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছিল । দীর্ঘ দুই শতকের বিচ্ছিন্নতার জাল নীতি পরিবর্তন করে সোগুন বিদেশীদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করার ব্যবস্থা করলে তাঁর বিরোধী পক্ষ একটি নতুন হাতিয়ার তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবহার করার সুযোগ পায় । সুতরাং, সোগুনদের পতনকে 'আত্মহতার' পরিবর্তে 'হত্যা' বলাই অধিকতর যুক্তিযুক্ত হবে ৷


About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟