ঐতিহাসিক হিসাবে আল বিরুনীর অবদান
আল বিরুনী ছিলেন একজন বিখ্যাত আরবীয় পর্যটক যিনি সুলতান মামুদের রাজত্বকালে সভাসদ রূপে অধিষ্ঠিত হন ৷ মামুদের ভারত আক্রমণ কালে আল বিরুনী ভারতে আসেন ৷ প্রতিভার অধিকারী আল বিরুনী এদেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হন ৷ ভারতবর্ষের ওপর লিখিত তার গ্রন্থ "তহকক-ই-হিন্দ" থেকে এদেশের রাজনৈতিক সামাজিক ও সংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কে বহু তথ্য জানা যায় ৷ মধ্যযুগীয় ভারতের ইতিহাস রচনার এটি একটি অমূল্য উপাদান হিসাবে স্বীকৃত ।
আল বিরুনী ভারতীয় সমাজ জীবনের এক করুণ বর্ণনা দিয়েছেন তৎকালীন ভারতীয় সমাজ ছিল সার্বিক অসাম্যের কেন্দ্র তিনি কঠোর বর্ণ বিভাগের অস্তিত্ব লক্ষ্য করেছেন ৷ ব্রাহ্মণ শ্রেণীর পান্ডিত্য ও জ্ঞানের প্রশংসা যেমন তিনি করেছেন তেমনি ব্রাহ্মণদের রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রভৃতি বিরোধ মনোভাবের নিন্দাও করেছেন ৷ আল বিরুনী একটি কাহিনীর মাধ্যমে সেকালের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছেন ৷ তিনি লিখেছেন যে রামের রাজত্বকালে কোন পিতার মৃত্যুর আগে পুত্রের মৃত্যু ঘটতো না আকস্মত এক ব্রাহ্মণ পুত্র মারা গেলে রাজা অনুসন্ধান করে দেখেন যে জনক চন্ডাল ঈশ্বরের উপাসনা করার অপরাধে এহনো অঘটন সম্ভব হয়েছে ৷ তৎক্ষণাৎ সেই চন্ডাল কে হত্যার নির্দেশ দেয়া হয় ।
আল বিরুনী স্পষ্ট ভাষায় ভারতীয় রাজনৈতিক অনৈক্য ও বিচ্ছিন্নতার কথা উল্লেখ করেছেন সারাদেশে তখন একাধিক ছোট ছোট রাজ্য গড়ে উঠেছিল এবং রাজ্য গুলির মধ্যে সর্বদায় অনৈক্য ও বিবাদ জারি ছিল এই সুযোগে বহিরাগত সুলতান মামুদ ভারত অভিযান করেন তবে আল বিরুনী দুঃখের সাথে বলেছেন যে সুলতান মামুদের ভারত অভিযানে হিন্দুদের মনে এতটাই ঘৃণা উদ্রেক করেছিল যে দুটি গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক মিলনের সম্ভাবনা অনেকটাই পিছিয়ে গিয়েছিল ৷ কৃষক ও কারিগরি শ্রেণীর আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত ছিল ৷ আল বিরুনীর এই গ্রন্থ মধ্যা কালীন ভারতের ইতিহাসে আমূল্য দলিল ৷ এই মহা মনীষীর ১০৩৮ খ্রিস্টাব্দে মহাপ্রায়ন ঘটে ৷