হরপ্পা ধর্ম সম্পর্কে একটি টীকা লেখ অথবা, হরপ্পা সভ্যতার ধর্ম সম্পর্কে একটি নাতিদীর্ঘ আলোচনা করো।

হরপ্পা ধর্ম সম্পর্কে একটি টীকা লেখ অথবা, হরপ্পা সভ্যতার ধর্ম সম্পর্কে একটি নাতিদীর্ঘ আলোচনা করো।

 

 হরপ্পা ধর্ম সম্পর্কে একটি টীকা লেখ অথবা, হরপ্পা সভ্যতার ধর্ম সম্পর্কে একটি নাতিদীর্ঘ আলোচনা করো।

হরপ্পা ধর্ম সম্পর্কে একটি টীকা লেখ


হরপ্পা সভ্যতার ধর্ম সম্পর্কে একটি নাতিদীর্ঘ আলোচনাঃ


পৃথিবীর চারটি সুপ্রাচীন সভ্যতার মধ্যে একটি ছিল সিন্ধু ও সরস্বতী নদীর তীরে গড়ে ওঠা সিন্ধু সভ্যতা বা হরপ্পা সভ্যতা। বহুল আলোচিত এই সভ্যতার ধর্ম ব্যবস্থা কেমন ছিল অর্থাৎ, তৎকালীন মানুষ কীভাবে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করত, কোন ধর্মের প্রতি তাদের বিশ্বাস ছিল প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে স্বভাবতই ঐতিহাসিকদের মনে কৌতূহলের উদ্রেক সৃষ্টি করে। কিন্তু এ ব্যাপারে তথ্য খুবই অপ্রতুল। কারণ হরপ্পা, মহেঞ্জোদাড়ো অথবা অন্য কোনো শহর থেকে দেবায়তনের কোনো স্পষ্ট নিদর্শন পাওয়া যায়নি। এছাড়া সীলমোহরগুলিতে উৎকীর্ণ লিপিগুলির পাঠোদ্ধার না হওয়ায় সেগুলিও এ সম্পর্কে নীরব। এতদসত্ত্বেও বিভিন্ন শহরের ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রাপ্ত মাতৃকা মূর্তি, কিছু লিঙ্কা জাতীয় প্রতীক মহেঞ্জোদাড়োর স্নানাগারটির উপস্থিতি ও সীলগুলি আলোচ্য সভ্যতার ধর্মীয় ব্যবস্থা সম্পর্কে ইঙ্গিত দেয়।

হরপ্পায় প্রাপ্ত একটি সীলে একটি নগ্ন নারীমূর্তি অঙ্কিত আছে। এই মূর্তিটির মাথা নীচের দিকে ও পা দুটি উপরের দিকে উত্থিত এবং মূর্তিটির গর্ভ থেকে একটি চারাগাছ নির্গত হয়েছে। অনুমিত হয়, পৃথিবীর অধিষ্ঠাত্রী দেবীর ইঙ্গিত তুলে ধরা হয়েছে এই মূর্তিটির মাধ্যমে। ওই সীলের অপরদিকে একটি দেবীমূর্তির সামনে নরবলি দেবার চিত্র উপস্থিত। অন্য একটি সীলে দেখা যায় যে, একটি পিপুল গাছের মাঝখানে উপবিষ্ট 
একজন দেবতার ছবি। জীবজন্তুর পূজা করার রীতি হরপ্পায় প্রচলিত ছিল। কুঁজওয়াল ষাঁড়ের পুজোর প্রচলন ছিল সবচেয়ে বেশি। আরেকটি সীলমোহরে একটি পুরুষ দেবায় ও চারদিক পশুদ্বারা বেষ্টন পরিলক্ষিত হয়। তিনমুখবিশিষ্ট এই দেবতা যোগাসনে উপবিষ্ট। আধুনিক কিছু ঐতিহাসিক এই দেবতাকে শিবের আদি পর্যায়ের কোনো দেবতারূপে গণ করে থাকেন। এছাড়া পাথরের তৈরি অজস্র লিঙ্গ ও যোনির প্রতীকের পরিচয় মিলেছে। এগুলি উর্বরা শক্তির পরিচয় দেয়। ধর্মীয় ব্যবস্থার একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল মৃৎদেহ সৎকার ব্যবস্থা। প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখনন থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে বোঝা যায় যে, হরমায় তিনধরনের সমাধির প্রচলন ছিল। সমাধিতে ব্যক্তির ব্যবহৃত বস্তুসামগ্রীও সমাধিস্থ করা হত। সমাধির প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে রেমন্ড আলচিন ও ব্রিজেৎ আলচিন মনে করেন, হরপ্পা সভ্যতায় হয়ত হিন্দু সমাজের ন্যায় সতীদাহ প্রথার কোনো ব্যবস্থা ছিল। কারণ পুরুষ ও নারীর যুগ্ম সমাধিও আবিষ্কৃত হয়েছে। অসংখ্য পোড়ামাটির মাতৃকামূর্তিও পাওয়া গেছে।

প্রচলিত এইসব ধর্মব্যবস্থা থেকে মনে হয় যে, ভারতের প্রাচীনতম ধর্মব্যবস্থায় মাতৃকা পুজো প্রাধান্য লাভ করেছিল। এছাড়া সৃষ্টির মূলে পুরুষ ও স্ত্রী আদর্শের সংযোগ এবং যোগ সাধনা এই ধর্মব্যবস্থার মূলে কাজ করেছিল। অধ্যাপক নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য মনে করেন, সামগ্রিকভাবে ওই সমস্ত বিষয়গুলির দ্বারা এমন একটি ধর্মীয় ঐতিহ্যের সৃষ্টি হয়েছিল, যাকে আদিম তান্ত্রিক ঐতিহ্যের সঙ্গে অভিন্ন বলে আখ্যা দেওয়া যেতে পারে।

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟