​চতুরাঃশ্রম বলতে কী বোঝো অথবা,বৈদিক যুগের চতুরাশ্রম প্রথার উপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

​চতুরাঃশ্রম বলতে কী বোঝো অথবা,বৈদিক যুগের চতুরাশ্রম প্রথার উপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

 চতুরাঃশ্রম বলতে কী বোঝো অথবা, বৈদিক যুগের চতুরাশ্রম প্রথার উপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

চতুরাঃশ্রম বলতে কী বোঝো


পরবর্তী বৈদিকযুগে এমনকী বৈদিকোত্তর পর্বের সমাজের একটি অন্যতম দিক ছিল আশ্রম ব্যবস্থা। আশ্রম বলতে জীবনের পর্যায়কে বোঝায়। এক-একটি আশ্রম হল জীবনের এক-একটি পর্যায়। আলোচ্য সময়কালে মানুষের জীবন চারটি পর্যায়ে বিভক্ত ছিল। এই পর্যায়গুলি হল যথাক্রমে-ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থ ও সন্ন্যাস। এই চারটি পর্যায়ের একত্রিত রূপকে বলা হয় চতুরাশ্রম। প্রতিটি পর্যায়ের জন্য বিশেষ বিশেষ কর্তব্য নির্দিষ্ট হয়। জীবনের এই চারটি পর্যায়ের জীবনধারা ছিল ভিন্ন ভিন্ন। প্রথম পর্যায় হল ব্রহ্মচর্য। শৈশব ও কৈশোর নিয়ে এই পর্যায়। এই পর্যায়ে উপবীত গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেক ব্যক্তির শৈশব ত্যাগ করে একজন ব্রহ্মচারীর জীবন বেছে নেওয়ার ধারা সাধারণভাবে প্রচলিত ছিল। এই পর্বে ছাত্র হিসেবে গুরুগৃহ থেকে ব্রহ্মচর্য পালনের সঙ্গে সঙ্গে বেদ, বেদাঙ্গ, ব্যাকরণ, শিক্ষা, ছন্দ প্রভৃতি বিদ্যা অধ্যয়ন করতে হত।


দ্বিতীয় পর্যায়টি হল গার্হস্থ্য । এহ পর্যায়ে গুরুগৃহে শিক্ষার কাজ সমাপন করে তাকে নিজ গৃহে ফিরে আসতে হত। এর পর বিবাহ করে সে একজন পূর্ণ গৃহী মানুষে পরিণত হত এবং সংসার জীবন পালন করত। গুরুগৃহ থেকে নিজ গৃহে ফিরে আসার পর তার এমানি: 'উপকর্বাণ' নামে পরিচিত হত। আর যারা গুরুগৃহে থেকে যেতেন এবং অধ্যাপনার বধি নিজে গ্রহণ করতেন তাদের নৈষ্ঠিক ব্রহ্মচারী বলা হত। গার্হস্থ্য ধর্ম পালনের অর্থ হল বিবাহ নারীরা করে স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদিসহ সাংসারিক জীবনযাপন করা। জীবনের মধ্যভাগের ওপর কিছুকাল প্রথার অতিবাহিত হলে এবং বংশধরদের ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত করার পর ওই গৃহস্থ ব্যক্তিকে দেবতে গৃহত্যাগ করে বনে গিয়ে তপস্বীর জীবন গ্রহণের ধারা বলবৎ ছিল। এই পর্যায়ে তপস্যা ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে সকল পার্থিব আকর্ষণের মোহ থেকে আত্মার বন্ধন মুক্তি ঘটাতে পুরুতে হত। এই পর্যায়কে বলা হত বাণপ্রস্থ। সর্বশেষ পর্যায়টি ছিল সন্ন্যাস পর্যায়। তাঁরা এই অধীন সময় সর্বস্ব ত্যাগ করে, সর্বপ্রকার জাগতিক ও মানসিক বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে নিঃসঙ্গভাবে ঈশ্বর চিন্তায় নিমগ্ন হতেন। লোকালয়ের বাইরে কোনো বৃক্ষতল বা কোনো পরিত্যক্ত গৃহ ছিল তাদের আশ্রয়স্থল। ভিক্ষাবৃত্তিকে সম্বল করে পরিব্রাজকের মতো তাঁরা একস্থান থেকে অন্যস্থানে ঘুরে বেড়াতেন।


উপরিউক্ত এই আশ্রম ব্যবস্থা বা চতুরাশ্রম ব্যবস্থা নিঃসন্দেহে এক আদর্শ সমাজের চিত্র তুলে ধরে। কিন্তু এই ব্যবস্থা সর্বদা বাস্তবে রূপায়িত হত তা জোর দিয়ে বলা সম্ভব নয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ বেশিরভাগ তরুণ ব্রহ্মচর্য পর্যায়ের মধ্য দিয়ে প্রায় যেত না। অনেকে এই পর্যায় অতিক্রম করলেও গৃহে ফিরে গার্হস্থ্য পর্যায় অতিবাহিত করার পর তৃতীয় পর্যায়ের দিকে আর প্রায় অগ্রসরই হত না। উল্লেখিত এই পর্যায়গুলি অনেকক্ষেত্রে পরস্পর বিরোধী ছিল। যেমন গার্হস্থ্য ও বাণপ্রস্থ জীবনধারার মধ্যে সুগভীর পার্থক্য ছিল। অনুমিত হয় একই জীবনে এই সমস্ত বিষয়গুলির কাজ সমাপ্ত করতে গেলে যে ব্যবস্থার প্রচলন দরকার তাকেই বাস্তবায়িত করার প্রয়াস থেকে চতুরাশ্রমের এই আদর্শ পরিকল্পনা উদ্‌ভূত হয়েছিল।

 

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟