গুপ্ত যুগকে কি সুবর্ণ যুগ বলা যায় অথবা, গুপ্ত যুগকে "সূবর্ণযুগ" বলাটা কতটা যুক্তিযুক্ত
ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে আনুমানিক ৩২০-৫৫০ খ্রিষ্ঠাব্দ পর্যন্ত গুপ্ত শাসকদের শাসনকাল খ্যাতির আলোকে আলোকিত হয়ে আছে । এই সময়ে সম্রাজ্যের বিস্তার,সুশাসন আর্থিক উন্নয়নের পাশাপাশি ভাষা,সাহিত্য,বিজ্ঞান স্থাপত্য ও ভাস্কর্য চিত্রকলা সহ সংস্কৃতির জীবনে অভূতপূর্ব উন্নতি দেখা যায় ৷ আসলে দীর্ঘকাল রাজনৈতিক ঐক্য সৃজনশীল কাজে বিকাশের সহায়ক হয়েছিল । গুপ্ত যুগের এই সামাজিক রাজনৈতিক ও সংস্কৃতির উন্নয়নের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে আধুনিক বেশ কিছু ঐতিহাসিক এই যুগকে প্রাচীনকালের সুবর্ণ যুগ বা Classical Age বলে অভিহিত করেছেন । ঐতিহাসিকদের মত অনুযায়ী গুপ্ত সাম্রাজ্যকে তারা পেরিক্লিসের যুগ বা ইংল্যান্ডে এলিজাবেথের যুগ কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের হারুন-আল-রশিদের যুগের সঙ্গেও তুলনা করেছেন ৷ তবে সম্প্রতিককালের আধুনিক ঐতিহাসিকদের হিসাবে এই সময়গুলিকে সুবর্ণ যুগ হিসাবে মেনে নেওয়ার পক্ষপাতি নয় ৷ গুপ্ত যুগের সুবর্ণ সংক্রান্ত ধারণা বা অতিকথন বা একপ্রকার মিথ বা myth হয়ে আছে ৷তবে যে সকল ঐতিহাসিক গুপ্ত যুগকে Classical age বা সুবর্ণ যুগ হিসেবে অক্ষ্যায়িত করার পক্ষপাতি তারা মূলত সাহিত্য, বিজ্ঞান, সংস্কৃতির আলোকে উজ্জ্বলতাকে তুলে ধরে তুলে ধরেছেন ৷ কুষান সাম্রাজ্যের পতনের পর ভারতের রাজনৈতিক ঐকা সম্পূর্ণ ভাবে বিনষ্ট হয় । এক্ষেত্রে গুপ্ত সম্রাটগন সেখানে ভারতবাসিকে রাজনৈতিক নিরাপত্তা দান করে ঐক্যবদ্ধ সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন । যার ফলে একদিকে যেমন-ভ্রদেশে রাজনৈতিক ঐক্য শক্তিশালি পয়েছিল, অন্যদিকে বৈদেশিক আক্রমনের ভয় দূর হয়েছিল ।একথা অবশ্য সত্য যে গুপ্ত যুগের সাহিত্যের অভূতপূর্ব বিকাশ ঘটেছিল ৷ বিশেষ করে সংস্কৃতি সাহিত্য নবজন্ম লাভ করেছিল ৷গুপ্ত যুগে কাব্য,মহাকাব্য,নাটক, পুরাণ,ধর্মশাস্ত্র, অর্থশাস্ত্র , ব্যাকরণ, বিধান,দর্শন, চিকিৎসাশাস্ত্র, জ্যোতিষবিদ্যা, বিজ্ঞান সমস্ত ক্ষেত্রে একাধিক কালজয়ী গ্রন্থ রচনা হয়েছিল ৷
মহাভারতের যদিও বহু পূর্ব থেকে রচিত হওয়া শুরু হয়েছিল তবে গুপ্ত যুগে মহাভারতের শ্লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয় একলক্ষ পুরান গুলির সংকলনের কাজও গুপ্ত যুগেও বিরাট গতি লাভ করেছিল মার্কিনডেও পুরান এই সময়ে রচিত হয় বায়ু পুরাণ ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ এবং বিষ্ণুপুরাণেরও সংকলন কাজ শুরু হয় এবং এই যুগেই শেষ হয় মূল পুরাণের পাশাপাশি কিছু উপপো পুরানো রয়েছে। মূল কুরআনের ন্যায় উপকরণের সংখ্যা ১৮ বেশ কিছু উপূরণ যে বৃহৎ ধর্ম পুরাণ এই যুগে রচিত হয় তাছাড়াও কাত্যায়নের ধর্ম শাস্ত্র এই যুগেই সংকলন হয় ব্যাস এর ধর্ম শাস্ত্র এই যুগে সংকলন হয় কামুন্দুকীও নীতি স্যার গ্রন্থটিও গুপ্ত যুগেই উপহার ৷
ভদ্র ছিলেন একজন বিখ্যাত কবি তার রচিত ভোটটি কার বা রাবণ বধ কাব্য একাধারে যেমন সাহিত্যের আলোকে অতি সমৃদ্ধ তেমনি ছাত্রদের ব্যাকরণ শিখতে অতি প্রয়োজনীয় পঞ্চতত্ত্বের রচয়িতা বিষ্ণু শর্মা গুপ্ত যুগেরই সম্পদ ছিল। শূদ্রকের নাটক নিচ্ছো কোটি কম দশটি অংক বিশিষ্ট ছিল এতে বনিক জারদত্ত ও গণিকা বসন্ত সেনার প্রণয়নের কাহিনী নিয়ে রচনা করা হয়েছিল দুর্যোধনের কাছে পাশা খেলায় হেরে গিয়ে পান্ডবদের অরণ্যযাত্রা কেউ বারবি লেখেন কিরা তোর জন্য নিরঞ্জন
দিনটা একজন দার্শনিক এবং কবি উভয়ই ছিলেন। এই যুগের সবচেয়ে বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন একজন পশু বন্ধু। সপ্তমী বহু ধর্মকোষ পারমান্য সাতিকা পঞ্চকুণ্ড টিন মহাবিশ্ব প্রকাশ প্রকরণ সবচেয়ে সুপরিচিত সৃষ্টি বিজ্ঞানের কাজগুলি খুঁজে বের করার প্রয়াসে সেই সময়ে সর্বোত্তম সম্পদ বুদ্ধ যোগ রচিত হয়েছিল। বৈজ্ঞানিক সাহিত্যের রচয়িতাদের মধ্যে ছিলেন আর্যভট্ট। তিনি উল্লেখ করেছেন যে পৃথিবী তার উপন্যাসে হাজার হাজার বার স্থির নয়, যা অনেক পরে, বরাহমিহিরের সাহিত্যিক দক্ষতা কোপার্নিকাস দেখিয়েছিলেন, যিনি তার সুপরিচিত পঞ্চসিদ্ধি কা বৃহস সংহিতায় বেশ কিছু জ্যোতিষশাস্ত্রীয় ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন। বাদশা তার কামসূত্রে পুরুষ-মহিলা লিঙ্গের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও দিয়েছেন।
গুপ্ত যোগ ছিল সাহিত্য, স্থাপত্য এবং শিল্প সহ সকল ক্ষেত্রে সমৃদ্ধির আলো। এই সময়ে, ভাস্কর্য মন্দির স্থাপত্য তার গৌরবের শিখরে পৌঁছেছিল। ইলোরা এবং অজন্তা শিল্পের মহিমা দ্বারা গুপ্ত শিল্পের প্রাধান্য ছিল। আরেকটি উল্লেখযোগ্য কেন্দ্র হল ইলোরা, যেখানে অমরাবতী, মথুরা এবং সারনাথের ব্রাহ্মণ জৈন মন্দির এবং বৌদ্ধ ভাস্কর্যগুলি শিল্পের সুষমায় পরিপূর্ণ, যা যুগ যুগ ধরে মানুষের উপকার করে আসছে।
গুপ্ত যুগের অসাধারণ বৃদ্ধি সত্ত্বেও, সমসাময়িক এবং মার্কসবাদী ইতিহাসবিদরা একমত নন যে এই যুগকে শিল্প স্থাপত্য, অর্থনীতি, এবং সরকার সবকিছুর আলোকে স্বর্ণযুগ হিসাবে গণ্য করা উচিত। এই দিন এবং যুগে মহিলাদের অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়। এই দিন এবং যুগে নারীদেরকে কুকুরের মতো খাঁটি এবং সমানভাবে চিত্রিত করা হয়েছে। বিশুদ্ধ ব্যক্তিদের শহরে প্রবেশের অধিকার হারিয়ে গেছে। চীনা নথিগুলি প্রমাণ করে যে গুপ্ত যুগে ক্ষুধা লেগেছিল। অনেক সমসাময়িক শিক্ষাবিদ গুপ্ত যুগকে স্বর্ণযুগ হিসেবে স্বীকার করতে নারাজ কারণ, দারিদ্র্যের কারণে অনেক মানুষ পরিচর্যার সুযোগ ছাড়াই মারা গেলেও, রোমিলা থাপারের অধ্যয়ন প্রমাণ করে যে এই যুগটি শ্রেণীকরণের অস্তিত্বগত দ্বিধাদ্বন্দ্বের শীর্ষে ছিল। মহাবিশ্বের ক্রমবর্ধমান শক্তি।