প্রতি ধর্ম সংস্কার আন্দোলন বলতে কী বোঝো ?
ধ র্ম সংস্কার আন্দোলন ও প্রটেস্টান মতবাদ দ্রুত ইউরোপের বিস্তীর্ণ অংশে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল ৷ ধর্মপ্রাণ ক্যাথলিকদের মধ্যে গভীর হতাশার দৃঢ় হয়েছিল যে ক্যাথলিকবাদ অদূর ভবিষ্যতে মানব সমাজ থেকে বিলীন হয়ে যাবে ৷ এই সময় কিছু প্রকৃত ধর্মপান ও সৎ যাজক এবং নিষ্ঠবান ক্যাথলিক অনুগামী মানুষ ক্যাথলিক গির্জার সংস্কারের দাবিতে সচ্চার হন । এরা উপলব্ধি করেন যে কেবল প্রটেস্টানবাদের প্রতিবাদ করে ক্যাথলিক চার্চকে রক্ষা করা যাবে না । এর জন্য প্রয়োজন ক্যাথলিক গির্জাকে দুর্নীতিমুক্ত করা এবং যাজকদের ত্যাগ,তিতিক্ষা ও সেবার জন্য ক্রতি করে সাধারণ খ্রিষ্টানদের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করা ৷ এই জন্য ষোড়শ শতকে ইউরোপে ক্যাথলিক চার্জ ও ধর্মের শুদ্ধিকরণ আন্দোলন শুরু হয় ৷ এটি প্রতি ধর্ম সংস্কার আন্দোলন বা কাউন্টার ইনফরমেশন মোমেন্ট নামে পরিচিত ।
আরও পড়ুন
প্রতি ধর্ম সংস্কার আন্দোলনে "society of jesus" ছিল অন্যতম ৷ ক্যাথলিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা হলেন ইগ্নেসিয়াস লয়োলা ৷ লয়োলা পোপের নির্দেশকে চরম বলে মনে করতেন ৷ পৃথিবীর যে সকল অঞ্চলে ধর্মের প্রচার হয়নি সেই সকল অঞ্চলে লয়োলার অনুগামীরা ধর্ম প্রচার করতেন ৷ সমগ্র ইউরোপ জুড়ে লয়োলার অনুগামীরা ১০০ টি শাখা প্রতিষ্ঠা করে ৷ এরা চার্জের শিক্ষা এবং ক্যাথলিক বাদের প্রসারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল ৷ প্রোটেস্টান মতবাদের বিপক্ষে রুখে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে লয়োলা বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল ৷
তবে ইউরোপ জুড়ে প্রটেস্টান মতাদর্শের দ্রুত বিকাশ এবং ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা ক্যাথলিক চার্চকে ভীষণভাবে উগ্র করে তোলেন ৷ ফলত ক্যাথলিক মতবাদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে তারা দ্বিবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করেন ৷ একটি ক্ষেত্রে তারা প্রোটেস্টান মতাদর্শের প্রত্যক্ষ বিরোধিতা চালিয়ে যান ৷ এরা পাশাপাশি চার্জের দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দুর্নীতি দূরবীকরণের সচেষ্ট হয় ৷ চার্জ-বৈষয়িক সুখ-স্বাচ্ছন্দের থেকে আধ্যতচর্চার মননিবেশের কথা বলেন ৷ চার্চের সঙ্গে জড়িত সকল ব্যক্তিকে দুর্নীতির অনাচার এবং অতিরিক্ত ইন্দ্রিয় সুখ থেকে দূরে থাকার কথা বলা হয় । এই সকল কারণগুলি দৃঢ় করে ক্যাথলিক মতাদর্শের গৌরব বৃদ্ধিতে "প্রতিধর্ম সংস্কার" আন্দোলন বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেন ৷
প্রতিধর্ম সংস্কার আন্দোলন পরিচালিত হয় তিনটি সংস্থার দ্বারা এগুলি হল ধর্মগত তার অপরাধ তদন্তের জন্য ইনকুইজিশন, যাজকগণ কর্তৃক গঠিত বিচারসভা "Counscil of Trent" এবং জেসুইট সম্প্রদায় বিশেষ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সংগৃহীত বিশেষ কর্মসূচি ৷ এই সময় নতুন পোপ হন দ্বিতীয় জুলিয়াস ৷ তিনি সম্রাটের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নিজের ক্ষমতার স্থায়িত্বকরণ করেন এই সময় লুথার অনুগামীদের আলোচনার অংশগ্রহণের অধিকার দেওয়া হয় । ধর্মচারণের বিভিন্ন আচার শাস্ত্রীয় ভিত্তি সম্পর্কে প্রশ্নের মীমাংসা করা এবং তা লিপিবদ্ধ করা হয় ধর্মসভায় ৷ পরবর্তী পোপ পঞ্চম পায়াস দুইধরনের কমিউনিয়ন গঠনের মাধ্যমে প্রোটেস্টানদের সঙ্গে বিরোধ মেটানোর সিদ্ধান্ত নেন ৷ এখন থেকে কাউন্সিলের সম্মেলন গুলিতেও ক্যাথলিক ও প্রটেস্টানদের ডাকা হয়।
জেসুইট সম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার ফলে পোপের কর্তৃক অক্ষুন্ন রাখার ব্যবস্থা করা হয় এবং প্রটেস্টান মতবাদের বিস্তারিত পথের সক্রিয় প্রতিরোধ গড়ে তোলার ব্যবস্থা করা হয় । এছাড়াও নতুন নতুন অঞ্চলের খ্রিস্ট ধর্মের প্রচারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ৷ ইনকুইজিশনের মাধ্যমে স্পেন,ইতালীয়, ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান ধর্মাবলম্বীদের দমনের ব্যবস্থা করা হয় ।
তবে ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল যাজক,বিশপ,পাদ্রী প্রমুখদের ভেঙে পড়ার নৈতিকতাকে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা লক্ষ্য করা গিয়েছিল । তারা নিজেদের ভাবমূর্তিকে ফিরিয়ে আনার জন্য বাইবেলের প্রকৃত আদর্শ অনুসারে পরিচালিত হবার চেষ্টা করেছিলেন ৷
১৫৪৫ থেকে ৬৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বেশ কিছু সংস্কার প্রবর্তনের দ্বারা সংস্কার আন্দোলনকে গতিশীল করে তোলে ৷ এই আন্দোলনের বিকাশে কয়েকটি কারণ ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য - প্রথমত ,প্রটেস্টান নেতৃত্ব সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন প্রোটেস্টান্টরা নিজেরাই লুথারপন্থী,কেলভিনপন্থী ইত্যাদি বিভক্ত হয়ে পড়ে ৷ দ্বিতীয়ত আলোচ্য সময়ে তৃতীয় পল সামাজিকভাবে ছিলেন অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব ৷ ধর্ম সংস্কার আন্দোলনকে গ্রহণযোগ্যতা দিয়েছিল তাই বলা যায় ধর্মীয় অবস্থা এই ধর্মের নামে সংগঠিত অধর্মের বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রোটেস্টান আন্দোলন ধর্মের অসারতা এবং ধর্মের নামে সংঘটিত অযৌক্তিকতাকে যেমন অসারতা প্রমাণিত করে তেমনি ক্যাথলিক মতাদর্শ নিজেদের ভুল ত্রুটি শুধরে নিয়ে পুনরায় প্রকৃত এবং মানবিক ধর্মে ফিরিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেন