সুলতানি আমলে স্থাপত্য ও চিত্রকলার সম্পূর্ণ বিবরণ দাও।

সুলতানি আমলে স্থাপত্য ও চিত্রকলার সম্পূর্ণ বিবরণ দাও।

সুলতানি আমলে স্থাপত্য ও চিত্রকলার সম্পূর্ণ বিবরণ দাও। বা, সুলতানী যুগের স্থাপত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য কী ছিল?


সুলতানি আমলে স্থাপত্য ও চিত্রকলার সম্পূর্ণ বিবরণ দাও।

সুলতানি আমলে স্থাপত্য ও চিত্রকলার সম্পূর্ণ বিবরণ দাও।

 ⇒ স্থাপত্য ধারা খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দির মধ্যে বহির্ভারতে মুসলিম সম্প্রদায় তাদের সামাজিক ও ধর্মীয় প্রয়োজনে স্থাপত্য নির্মাণ পরিচালনার পরিবর্তন করেছিল ৷ যা তারা বাইজানটাইন, পারসিক এবং পূর্ব দিকের হিন্দু-বৌদ্ধা স্থাপত্য ধারার সংমিশ্রণে তৈরি করেছিল। সুলতানি আমলে প্রারম্ভিক পর্যায় ভারতবর্ষে মুসলমান স্থাপত্য ধারা ভারতবর্ষের ভৌগলিক খন্ডে আগুনে পোড়ানো ইট ও প্রস্তরের ব্যবহার করে সুপ্রাচীন স্থাপত্যধারা সম্পর্কে অবস্থিত হয়েছিল। তবে প্রাগ সুলতানিকাল পর্বের হিন্দু-বৌদ্ধ-জৈন স্থাপত্য ধারার যে চিন্তন তার থেকে সম্পূর্ণতই পৃথক ছিল। মুসলমান শাসকদের আমলে স্থাপত্য নির্মান ধারা। যে ধারায় বিশেষভাবে কার্যকার ছিল ধর্মীয় কাজে ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা। ভারতবর্ষে ধর্মীয় সমান, ও সৌধ নির্মাণে তুর্কিরা বেশি করে ব্যবহার করেছিল নতুন কলা কৌশল, কাঠামোগত উপাদান এবং জমায়েতগত প্রার্থনার জন্য স্থাপত্য ধারণার ক্ষেত্রের বিশালতাকে গুরুত্ব প্রদান।


এ সুলতানি আমলের স্থাপত্য রীতিকে পূর্ববর্তী ভারতবর্ষের প্রস্তর আলংকরণ রীতিকে মুখ্য বৈশিষ্ট্য হিসাবে ধরলেও, প্রারম্ভিক পর্বের ধর্মীয় স্থাপত্য ও সৌধ নির্মাণে হিন্দু কথপতিরা কারিগররা তথাকথিত ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্য রীতিতে বিশেষ ভূমিকা গ্রহন করেছিল। এই সময়কার স্থাপত্য রীতির একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল স্থাপত্যর বাইরে এবং ভিতরের দেওয়ালে চুন, বালি ও জলের মিশ্রনে প্রলেপ তৈরি করে আতরণ দেওয়ার রীতি । সুলতানি আমলের স্থাপত্য রীতিতে হিন্দু-বৌদ্ধ-জৈন স্থাপত্য রীতির সঙ্গে পশ্চিম এশিয়া মধ্য এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকার স্থাপত্য রীতির সংমির্শণ ঘটেছিল। সুলতানি আমলে মাঝামাঝি সময়কালে মুসলিমদের স্থাপত্যধারা পূর্ববর্তী হিন্দু-বৌদ্ধ- জৈন স্থাপত্য ধারার পার্থিব সৌন্দর্য কে আত্মকথ করে এক নতুন স্থাপত্য ধারার সৃষ্টি করেছিল। যাকে 'ইন্দো - ইসলামিক' স্থাপত্যধারা বলে ৷ স্থাপত্য ঐতিহাসিকরা চিহ্নিত করেছেন। সুলতানি আমলের স্থাপত্য জ্যামিতিক নকশা, লতাপাতার নকশা, প্রবৃত্ত কুরানের বানী প্রকৃতি এবং তারই সাথে স্বস্তিকা চিহ্ন, পদ্মফুল, ঘন্টা ইত্যাদি ভারতীয় প্রতীক চিহ্নেরও ব্যাবহার করা হয়েছিল। সুলতানির স্থাপত্য রীতিকে খিলান ও গম্বুজের ব্যবহার করে প্রশস্ত কক্ষ নির্মাণই মূল লক্ষ্য ছিল। সুলতানি আমলের স্থাপত্যধারাকে ৩টি ভাগে ভাগ করা যায় –


(১). দিল্লী ও আজমির অঞ্চলের কথাপত্য ধারা,

(2). প্রাদেশিক কথাপত্য ধারা। 

(৩).ও হিন্দু স্থাপত্য ধারা।


দিল্লী ও আজমির অঞ্চলের অথাপত্য ধারাঃ 


কুতুবউদ্দিন আইবক দিল্লীতে 'কুবাতুল ইসলাম মসজিদ' এবং আজমিরে 'আড়াই দিনকা ঝোপড়া' মসজিদ নির্মাণ করে ছিলেন। হিন্দু ইসলামিক স্থাপত্য রীতির নিদর্শন হিসাবে এই দুটি স্থাপত্যকে চিহ্নিত করা হয়। এই দুটি স্থাপত্য হিন্দু স্থাপত্য রীতির সঙ্গে মুসলিম থাপত্য রীতির মিশ্রন বা তৈরী করা হয়েছিল। মুসলিম স্থাপত্য রীতিতে খিলান, গম্বুজ, মিনার এই নিদর্শনগুলি ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে হিন্দু স্থাপত্যর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্যকে নিদর্শন নির্মাণে প্রয়োগ করা হয়েছিল। কুতুবমিনার কুতুব উদ্দিন আইবকের আমলে নির্মাণ শুরু হলেও ইলতুতমিসের আমলে কাজ সমাপ্ত হয়। এটি সন্ত কুতু উদ্দিন বখতিয়ার কাকির নাম অনুসারে নামাঙ্কিত করা হয়েছিল। ইলতুতমিস তার রাজত্ব কালে নিজের সমাধিসৌধ, কে হাউস- ই - সামসি,জামি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। বলবন তার রাজত্বকালে নিজের সমাধি সৌধ এবং লাল প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন ৷ আলাউদ্দিন খলজি ও তার আমলে মুসলিম থাপত্য রীতির অনুসরণে দূর্গ, প্রাসাদ ও মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন।


                তুঘলক বংশের রাজত্বকালেও স্থাপত্য রীতির প্রয়োগ, দেখতে পাওয়া যায়। যেমন গিয়াস উদ্দিন নিজের সমাধি এবং তুঘলকরাদের শহর নির্মাণ করেছিলেন। আবার মহম্মদ বিন তুঘলক জাহান পানা নামে শহর নির্মাণ করেছিলেন। তবে ফিরোজ শাহ তুঘলকের রাজত্বকালে স্থাপত্য নির্মাণ একটি বিশেষ মাত্রা লাভ করেছিল -- ফিরুহবাদ শহর,কোটলা, ফিরুহবাদ প্রাসাদ, কালান মসজিদ,নিজের সমাধি সৌধ ইত্যাদির মাধমে সুস্পষ্ট হয় ৷ তিনি বড়ো স্থাপত্য নির্মাণের উৎসাহ দাতা ছিলেন। খলজিশাসকদের আমলে মুসলিম স্থাপত্য রীতিতে নির্মান খিলান, দেওয়াল গঠন, গম্বুজ নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছিল ৷ আবার যদি শাসকদের আসলে নির্মিত স্থাপত্য অলংকরণ ও সুক্ষ্ম কারুকাজ পুনরায় প্রয়োগ করা হয়েছিল। 




প্রাদেশিক যোগত্য ধারাঃ


দিল্লীর সুলতানির আধিপত্যের বাইরে অঞ্চল ভিত্তিক যেসব প্রাদেশিক স্থাপত্য ধারার উদ্ভব ঘটেছিল সেগুলি হল গুজরাট শৈলিধারা, মালব শৈলিধারা, যৌনপুর শৈলিধারা, বাংলার শৈলিধারা, বাহমনি শৈলিধারা, বিজাপুর ও গোলকুণ্ডা শৈলিধারা।



গুজরাট শৈলি ধারা


এই শৈলিধারার উল্লেখযোগ্য স্থাপত্যগুলি হল জামি মসজিদ, "ছিলান খান ও গাজির মসজিদ'। এই স্থাপত্যগুলিতে মুসলমান স্থাপত্যরীতিকে অনুসরণ করা হয়েছিল। ভারতীয় স্থাপত্য রীতির প্রভাব দেখতে পাওয়া যায় রানী সিপারার মসজিদে ৷


মালব শৈলিধারা

এই স্থাপত্য শৈলিধারার বিশেষ দিকগুলি হল স্থাপত্যর আকার বিশাল, অলংকরন এবং স্থাপত্য ব্যবহার করা প্রস্তর মাধ্যম। তাই অথাপত্যের অন্যতম নিদর্শন হল, মান্ডুর জামি মসজিদ (1456 খ্র:),


যৌনপুরে শৈলিধারা


গাঙ্গেয় উপত্যকায় যৌনপুরকে কেন্দ্র করে এই স্থাপত্য শৈলীর উন্মেষ ঘটেছিল। পারসিক স্থাপত্যর অনুসরনে দুটি মসজিদ যথাক্রলে বরবকের মসজিদ (1377 খ্রীঃ) এবং অটাল মসজিদ (1436 খ্রীঃ) এছাড়া লাল দরজা মসজিদ ৷ হিন্দু মুসলিম থাপত্য শৈলির সংমিশ্রনে নির্মিত হয়েছিল। 


বাংলারর শৈলিধারা


বাংলার শৈলিধারায় প্রস্তর সহজলোভ্য না হওয়ায় আগুনে পোড়ানো ইটের ব্যবহার অধিক পরিমাতো হয়েছিল। তবে কোনো কোনো স্থাপত্য নির্মানের ক্ষেত্রে বহিরাগত প্রস্তর এবং আগুনে পোড়ানো ইটের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। বাংলা শৈলীর আরও একটি বৈশিষ্ট হলে বাংলার প্রচলিত খড়ের চালার আকারে খিলান নির্মাণ। বাংলার প্রাচীনতম মুসলিম স্থাপত্য হল "জাফর খাঁ গাজির" সমাধি সৌধ। এছাড়া গৌড়ের বড়োসোনা মসজিদ একটি অনবদ্য মুসলিম আপত্য। 



 বাহমনি শৈলীধারা


বাহমনি স্থাপত্যশৈলী ধারা কিছুটা স্বতন্ত্রভাবে বিকাশলাভ করেছিল। এরই শৈলী ধারাতে ভারতীয়, ইরান, তুর্কি ও মিশর স্থাপত্য শৈলীর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। যেমন- জামি মসজিদ হচ্ছে এই স্থাপত্য কীর্তির অন্যতম নিদর্শন।


বিজাপুর ও গোলকুন্ডা শৈলীধার


আদিল শাহির বংশের রাজত্বরালে থাপত্য নির্মাণে এই অঞ্চল এ তার বিশেষ স্থান দখল করে। গম্বুজ নির্মানে এই আমলে উৎকৃষ্ট নিদর্শন হল "আদিল শাহের সমাধি সৌধ" এই ধরনের গম্বুজ ভারতবর্ষের মুসলিম স্থাপত্য আর দেখা যায়নি। তবে বিজাপুরের গম্বুজ ছিল গোলাকৃতি। কিন্তু গোলকুণ্ডার গম্বুজের মধ্যবর্তী অংশটি ছিল গোলাকার এবং উপর ও নিচের অংশটি ছিল অপেক্ষাকৃত সরু ৷


হিন্দু স্থাপত্যধারাঃ


সুলতানি আমলেও গুজরাট, রাজস্থান ও বিজয়নগরকে কেন্দ্র করে হিন্দু স্থাপত্যধারা বিকশিত হয়েছিল। বিজয়নগরের রাজা কৃষ্নদেব রায়ের আমলে নির্মিত বিটল স্বামীর মন্দির এবং অন্যতম নিদর্শন। রাজস্থান মন্দির ও প্রাসাদ স্থাপত্য নির্মাণেও হিন্দু রীতির অনুসরণ করা হয়েছিল। এরও মধ্যে রানাকুণ্ডের কীর্তি স্তম্ভ ও প্রাসাদ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনিও স্থাপত্যের বিশেষ অনুরাগী ছিলেন। 

তোমাকে অনেক ধন্যবাদ সুলতানি আমলে স্থাপত্য ও চিত্রকলার সম্পূর্ণ বিবরণ দাও। এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟