মোগল যুগের শিল্প সংগঠনের পরিচয় দাও। Industrial organization of the Mughal era

Industrial organization of the Mughal era

মোগল যুগের শিল্প সংগঠনের পরিচয় দাও। বা,মুঘল যুগের শিল্প সংগঠনের পরিচয় দাও।


মুঘল যুগে ভারতের অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল কৃষি এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু দ্বাদশ শতকের পরবর্তীকালে ভারতে নগরায়নের সূত্র ধরে শিল্পক্ষেত্রে এক ব্যাপক গতি আসে। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে শিল্পের চাহিদা বৃদ্ধি পেতে থাকে। কৃষির সূত্র ধরেই হস্তশিল্পের বিকাশ ঘটে। এর পাশাপাশি বস্ত্র শিল্পের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন কারখানার বিকাশ ঘটে।

মুঘল সম্রাট বাবর এর লেখা থেকে জানা যায় যে কৃষিভিত্তিক কুটির শিল্পের ক্ষেত্রে ভারতীয় গ্রামীণ মানুষের ব্যাপক উৎসাহ ছিল। আখ ও তালের রস থেকে গুড় ও চিনি প্রস্তুত করার কাজ বেশ জনপ্রিয় ও লাভজনক ছিল। গুড়ের পরেই ছিল নীল উৎপাদন। ঢাকা, কাশিমবাজার, আগ্রা ইত্যাদি জায়গায় নীলের বাজার কেন্দ্রীভূত ছিল। সপ্তদশ শতকে ইউরোপীয় বণিক কোম্পানীগুলি বিদেশের নিল রপ্তানি শুরু করলে ভারতীয় নীল শিল্পে গতি আসে। কৃষিনির্ভর কুটিরশিল্পে তেল, তামাক, আফিম ও অন্যান্য মাদক পণ্যের উৎপাদন হতো।

মুঘল যুগে বহু দক্ষ কারিগর এর আবির্ভাব ঘটে যারা হস্তশিল্পে আত্মনিয়োগ করে। বিলাস দ্রব্য ও মূল্যবান 
আসবাবপত্র তৈরির জন্য মুঘল বাদশাহ এর উদ্যোগে ও সরকারি তত্ত্বাবধানে বেশ কয়েকটি কারখানা স্থাপিত হয়েছিল। তবে চাহিদা অতিরিক্ত বেশি থাকায় হস্ত শিল্পীরা নিজ নিজ গৃহে এই সকল দ্রব্য প্রস্তুত করতে শুরু করেছিল। হস্ত শিল্পের প্রধান উৎপাদনের মধ্যে ছিল বাসনপত্র, গৃহ ও কৃষি সরঞ্জাম, চর্ম দ্রব্য, অলংকার, ইট, কাগজ, নৌকা ইত্যাদি। এছাড়া ধাতুনির্মিত সরঞ্জামের মধ্যে ছিল বটি, বর্শা ইত্যাদি। পর্যটক নিকোলো কন্টি লিখেছেন যে ভারতীয় শিল্পীরা ইউরোপীয়দের চেয়েও বড় জাহাজ নির্মাণ করতে পারতো।

মুঘল শাসকদের উদ্যোগে অনেকগুলি রাষ্ট্রীয় কারখানা গঠিত হয়েছিল। এই কারখানাগুলি ছিল আকারে অনেক বৃহৎ। আবুল ফজলের লেখা থেকে জানা যায় আকবরের আমলে আগ্রা, ফতেপুর সিক্রি, লাহোর, আমেদাবাদ ও বিভিন্ন জায়গায় সরকারি কারখানা স্থাপিত হয়েছিল। সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকাল সৌখিনদ্রব্য তৈরীর জন্য অনেকগুলি কারখানা স্থাপিত হয়। এর পাশাপাশি প্রাদেশিক শাসক দের তত্ত্বাবধানে সেই সময় কারখানা স্থাপিত হতো। এছাড়াও বিদেশি বণিক ইংরেজ ও ওলন্দাজরা অনেকগুলি কারখানা তৈরি করেছিল।

মুঘল যুগে বস্ত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে কার্পাস বস্ত্র শিল্প ছিল 
সবার অগ্রে। চরকা ও তাঁতের মাধ্যমে কার্পাস বস্ত্র নির্মিত হতো। বস্ত্রবয়ন শিল্পে বাংলার বিশেষ খ্যাতি ছিল। ইউরোপীয় পর্যটকরা বাংলার মসলিন বস্ত্র শিল্পের প্রশংসা করেছেন। মা হুয়ানের বর্ণনা থেকে জানা খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকে ভারতে সিল্ক বস্ত্র শিল্পের বিকাশ ঘটে। গুটি পোকার চাষ ও কাঁচা সিল্ক উৎপাদনের কাজে অগ্রণী ছিল বাংলা। মোগল যুগে ভেড়া উট আঙ্গুরা প্রভৃতি থেকে উৎপন্ন করা হতো। মোর ল্যান্ডের বিবরণ থেকে জানা যায় ভারতে সোনা ও সিল্ক মিশ্রিত করে উন্নত রেশম বস্ত্র প্রস্তুত করা হতো।


মোঘল যুগের শিল্পীদের কারিগরী দক্ষতা প্রশংসনীয় হলেও প্রযুক্তিবিদ্যার ঘাটতি ছিল। আর এই ঘাটতি উৎপাদিত পণ্যের মান কে অনেকটা নিম্নগামী করেছিল। মোগল যুগে ভারতের কৃষিজীবী মানুষ কৃষি ও শিল্প উভয় কাজে নিযুক্ত ছিল। প্রথমদিকে তারা নিজেদের প্রয়োজনে শিল্প উৎপাদন করত। অনেক স্থানের কৃষক সম্প্রদায় নিজেদের স্বার্থে কারিগরদের নিষ্কর জমি বা নগদ বেতন দিয়ে শিল্পোৎপাদনে নিয়োজিত রাখত। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে গ্রামগুলি অনেকটা স্বনির্ভর হয়ে উঠেছিল। নৃতত্ত্ববিদগণ এই পদ্ধতিকে 'যজমানি পদ্ধতি' বলে অভিহিত করেছেন।


মোঘল যুগের শিল্পীদের কারিগরী দক্ষতা প্রশংসনীয় হলেও প্রযুক্তিবিদ্যার ঘাটতি ছিল। আর এই ঘাটতি উৎপাদিত পণ্যের মান কে অনেকটা নিম্নগামী করেছিল। মোগল যুগে ভারতের কৃষিজীবী মানুষ কৃষি ও শিল্প উভয় কাজে নিযুক্ত ছিল। প্রথমদিকে তারা নিজেদের প্রয়োজনে শিল্প উৎপাদন করত। অনেক স্থানের কৃষক সম্প্রদায় নিজেদের স্বার্থে কারিগরদের নিষ্কর জমি বা নগদ বেতন দিয়ে শিল্পোৎপাদনে নিয়োজিত রাখত। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে গ্রামগুলি অনেকটা স্বনির্ভর হয়ে উঠেছিল। নৃতত্ত্ববিদগণ এই পদ্ধতিকে 'যজমানি পদ্ধতি' বলে অভিহিত করেছেন।

অধ্যাপক জে. এন. সরকারের মতে, মুঘল যুগের রাষ্ট্র বা অভিজাত বর্গ কেউই বিজ্ঞানিক আবিষ্কারের অজানা পথে পা বাড়াতে উদ্যোগ দেখাননি। আবার দরিদ্র ভারতীয় কারিগরদের পক্ষে ঝুঁকি ও ব্যয়বহুল নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করার সাহস দেখানো সম্ভব ছিল না। ভারতীয় কারিগরদের স্বাধীন বলা হলেও কার্যত তাদের অবস্থা দাসদের চাইতে উন্নত ছিল না। এর সাথে যুক্ত হয়েছিল প্রশাসনিক উদাসীনতা। আগ্রার ডাচ কুটিয়াল এর বিবরণ থেকে জানা যায় যে শ্রমিকদের উপর অত্যাচার চলতে দু'ভাবে-1. তাদের মজুরি ভীষণ কম দেয়া হতো। 2. কোন কোন ক্ষেত্রে রাষ্ট্রই শ্রমিকদের উপর নিপীড়ন করত।




তোমাকে অনেক ধন্যবাদ মোগল যুগের শিল্প সংগঠনের পরিচয় দাও। Industrial organization of the Mughal era এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟