বিশ্ব রাজনীতিতে কমিউনিস্ট চিনের উত্থান ও প্রেক্ষাপট আলোচনা কর বা,গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের জন্ম আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে কতটা প্রভাবিত করেছিল?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রাজনীতিতে যে ঠান্ডা লড়াই চলছিল পুঁজিবাদী ও সমাজতান্ত্রিক দুনিয়ার মধ্যে সেখানে চীনের উত্থান ঠান্ডা লড়াইকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল ৷ আসলে পৃথিবীর সর্ব জনবহুল রাষ্ট্রে চীনের সমাজতন্ত্রকে গ্রহণ এবং মার্কিনী নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী বিশ্বের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ১৯৪৫ এর পর আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে এক নতুন মাত্রা প্রদান করে ৷ বিশ্ব রাজনীতিতে চীনের উত্থান এবং তর্জনীতি আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি সম্মত আলোচনায় আমরা যে সকল গ্রন্থ গুলি সাহায্য পেয়ে থাকি তার মধ্যে অন্যতম হলো মাউরিস প্রণীত "Mou's China and after" কে এম থমাস রচিত "আমেরিকা ভার্সেস জাপান ইভেন্ট" রিচার্ড রচিত "মেকিং অফ মডার্ন চায়না" প্রভৃতি ৷
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
বিশ্ব রাজনীতিতে চীনের উত্থান এক বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাতের চীনের বিদেশনীতি যেভাবে বিকশিত হয়েছিল সময় সারণী অনুযায়ী তাকে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা প্রথম পর্যায়ে ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৯ , দ্বিতীয় পর্যায় ১৯৫৯ থেকে ১৯৭২, তৃতীয় পর্যায়ে ১৯৭২ থেকে ১৯৮৯, আর চতুর্থ পর্যায়ে ১৯৮৯ এর পর থেকে অধ্যকার সময় পর্যন্ত ৷ সময় সারণির পাশাপাশি পৃথিবীর দুই সুপার পাওয়ার অর্থাৎ মহাশক্তিধর দেশ রাশিয়া ও আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কের ঘাত প্রতিঘাত অনুযায়ী চীনের সম্পর্কের আবার চারটি পর্যায়ে বিভক্ত করে আলোচনা করা যায়। প্রথম পর্যায়ে অর্থাৎ চীনের সঙ্গে অপর সমাজতান্ত্রিক দেশ রাশিয়ার অত্যন্ত সহযোগিতা পূর্ণতার বন্ধুত্বের পর্যায় , দ্বিতীয় পর্যায়ে অর্থাৎ চীনের রাশিয়ার মধ্যে মতভেদজনিত কারণে সম্পর্কের অবনতি, তৃতীয় পর্যায় অর্থাৎ একাদশ শত্রু আমেরিকা সঙ্গে চীনের সম্পর্ক স্থাপন এবং চতুর্থ পর্যায়ে অর্থাৎ প্রথম পর্যায়ের বন্ধু রাশিয়া সঙ্গে চীনের পুনরায় সু সম্পর্কে চেষ্টা ।
রাশিয়া নেতৃত্বে পরিচালিত সমাজতান্ত্রিক জোটের মধ্যাকর সম্পর্ক চিনা বিদেশ নীতির একটি পর্যায়ে চীনের সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠিত হলে চীন এবং রাশিয়ার মধ্যে পারস্পারিক সহযোগিতা এবং বোঝাপড়া বহুগুণ বৃদ্ধি পায় ৷ সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম চীনে গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিলে এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করলে বুলগেরিয়া,রোমানিয়া,হাঙ্গেরি কোরিয়া, পোল্যান্ড, ভিয়েতনাম ইত্যাদি রাশিয়ার পদাঙ্গ অনুসরণ করে, সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে আর্থিক বিকাশে এর রাশিয়া বিশেষভাবে সহযোগিতা করলে চীনের চেয়ারম্যান মাউ-সে-তুং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট স্ট্যালিন এর সঙ্গে সোভিয়েত মৈত্রী চুক্তির মধ্য দিয়ে উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতা গড়ে তোলে ৷ চীনের চাংচু রেলপথ লুসুন এবং তানিয়ান সম্পর্কিত বিষয়ে রাশিয়া চীনকে অতি ন্যূনতম সুদের বিনিময় ঋণ প্রদান করে ঋন দান চুক্তি অনুযায়ী বাৎসরিক ১% সুদের বিনিময়ে রাশিয়া চীনের মাত্র ৫ বছরের জন্য ত্রিশ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেয় ৷ এছাড়াও বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ইঞ্জিনিয়ারিং রেলপথ, খনি ইত্যাদি ক্ষেত্রে রাশিয়া চীনকে সাহায্য করে ৷ তবে রুশ-চীন নীতি সব সময় সমভাবে বিকাশ লাভ করেনি পরবর্তীকালে একাধিক কারণে কিউবা সংকট ইত্যাদির প্রশ্নের ক্রমশত তিক্ততর হয়ে ওঠে ৷
এশিয়া সহ তৃতীয় বিশ্বের উপর চীন সদা সতর্ক দৃষ্টি অর্পণ করেছিলেন ৷ চীনা অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে অঞ্চলগুলি সেগুলির উপর কর্তৃত্ব কায়েম রাখতে সক্ষম হয় ৷ এর আগে পঞ্চাশ দশকে মার্কিন রাষ্ট্রপতি আইজেন হার্বাট চীনের কমিউনিস্ট শাসনের অবসানের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন পরে এ জোট নিরপেক্ষ এশিয়ার অন্যান্য ক্ষুদ্র দেশগুলির সঙ্গে চীন মোটামুটি ভাবে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করেন ৷ ১৯৮৮ তে এক চুক্তির দ্বারা ভুটানের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন, মায়ানমারের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক মোটের উপর ভালোই ছিল । ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধে চীন ভিয়েতনাম কে মুক্ত কণ্ঠে সমর্থন যাপন করেন ৷ তবে এশিয়ার ভূখণ্ড চীন এবং ভারতের সম্পর্কবাহের পরিচালিত হয়নি ৷ চীনের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পূর্ণ হলে ভারতীয় নেতারা চীনকে স্বাগত জানায় নি ৷ ১৯৬২ সালে ভারতের উত্তর-পূর্ব এবং লাদাখের সীমান্ত বিরোধী নিয়ে ১৯৬২ সালে চীন ভারতের যুদ্ধের সূচনা হয়, পরে সীমান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য joint working গ্রুপ গঠন করা হলে ভারতের সাথে চীনের তিক্ততা কমতে শুরু করে ৷
তবে ২০০৯ সালে প্রথম দিক থেকে ভারত চীন সম্পর্ক আবার তিক্ত হতে শুরু করে ৷ অরুণাচল প্রদেশের ধর্মগুরু দালাইলামাকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলে চীন ভারতের বিরূপ মনোভাবাপন্ন হয়ে ওঠে ৷ এরপর অক্টোবর মাসে কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রচারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং অরুনাচলে উপস্থিত হলে চীন বিরূপ প্রতিক্রিয়া করে ৷ এছাড়া কাশ্মীরকে কেন্দ্র ২০০৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১৮০ বার চীনা সৈন্যরা ভারতের সীমান্তে প্রবেশ করে ফলের সম্পর্ক তিক্ত হয় তবে ৷ ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর দুই রাষ্ট্রের উত্তেজনা প্রশমনের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও চীনা প্রধানমন্ত্রী জিয়াবাও দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা করে ৷
তাই বিশ্ব রাজনীতিতে চীনের উত্থান যথেষ্ট আলোচিত বিষয় ৷ বহু সংখ্যক সীমানাযুক্ত চীন তাইওয়ান , মালেশিয়া, ফিলিপিন, ভিয়েতনামের সঙ্গে দ্বীপপুঞ্জ সংক্রান্ত সমস্যার অস্থির ৷ তবে এই চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও একটি স্থিতিস্থা আসতে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা অনুমান করেছে । চীনের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও যথেষ্ট অস্থির আর এই সকল কারণেই চীন প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পাদিত করেছেন "ট্রিটি অফ ফ্রেন্ডশিপ এন্ড কর্পোরেশন" এর মধ্য দিয়ে এশিয়ার কাজাকিস্তান , ইরাকিস্তান, উজবেকিস্তান,তাজাকিস্তান ইত্যাদি রাষ্ট্রের সঙ্গে সন্ত্রাস মোকাবিলার পক্ষ গড়ে তুলেছেন "সান্যাল কর্পোরেশন অর্গানাইজেশন" এইসব কিছুর মধ্যে দিয়ে চীন ক্রমশ বৃহৎ শক্তি হিসেবে বিশ্ব রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ করেছেন ৷