সুকার্নোর অধীনে ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনের উপর একটি সংক্ষিপ্ত লেখ অথবা,ইন্দোনেশিয়ার জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে ড. সুকর্ণ-এর ভূমিকা লেখ অথবা, ইন্দোনেশিয়ার মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতায় ড. সুকর্ণ- এর অবদান আলোচনা করো।

সুকার্নোর অধীনে ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনের উপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা
জাভা, সুমাত্রা, বোর্নিয়ো এবং একশোরও বেশি ছোটো বদ্ধে কতার প্রস্তুতি চ ছ। দ্বীপ নিয়ে গঠিত ইন্দোনেশিয়া একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। আঠারো শতক থেকে এগোলে সুকর্ণ র প্রায় এই দ্বীপ রাষ্ট্রে ডাচ বা ওলন্দাজদের উপনিবেশ গড়ে ওঠে। অনেক ৩২৫ খ্রি.. ১৪ আ ঘাতপ্রতিঘাত পেরিয়ে শেষপর্যন্ত ড. সুকর্ণ-এর নেতৃত্বে ইন্দোনেশিয়া স্বাধীনতা ফিরে পায়।
ইতিপূর্বে হল্যান্ডে গঠিত (১৯২২ খ্রি.) বা ইন্দোনেশিয় ইউনিয়নের সদস্য ছিলেন পেশায় ইঞ্জিনিয়ার সুকর্ণ। সুকর্ণ- এর নেতৃত্বে গড়ে ওঠে PNI দল। অল্পদিনের মধ্যে এই দল ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক দল হয়ে ওঠে। সুকর্ণের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এই রাজনৈতিক দলটি ইন্দোনেশিয়ার পূর্বেকার রাজনৈতিক দল PKI-এর জনপ্রিয়তাকে ছাপিয়ে যায়।
সুকর্ণ-এর নেতৃত্বে PNI দল ইন্দোনেশিয়ার সকল অকমিউনিস্টদের একজোট করে এবং অসহযোগীতার নীতি গ্রহণ করে। এই দল কৃষক ও শ্রমিকদের অধিকার। প্রতিষ্ঠা ও মর্যাদা বৃদ্ধির ওপর জোর দেয়। পাশাপাশি এই দল। সাম্রাজ্যবাদ ও ধনতন্ত্রের বিরোধিতা করে।
সুকর্ণ-এর নেতৃত্বে উজল করো। ১। ইন্দোনেশিয়ার জাতীয়তাবাদী দল দলীয় পতাকা হিসেবে লাল ও সাদা ল্লা। পতাকা গ্রহণ করে। ইন্দোনেশীয় ভাষা ও জাতীয় সংগীত 'ইন্দোনেশিয়া যান বয়া' (বৃহত্তর ইন্দোনেশিয়া) গ্রহণ করে। এইভাবে এই দল ইন্দোনেশিয়াবাসীর অন্তরে জাতীয়তাবাদের বীজ বপন করে। লের আন্দোলন দমন: ডাচ সরকার ইন্দোনেশিয়ার জাতীয়তাবাদী তার আন্দোলন দমনের লক্ষ্যে সুকর্ণ-সহ চারজন জাতীয় নেতাকে বন্দি করে,
জাতীয় দল ভেঙে দিয়ে তাকে বেআইনি ঘোষণা করে। এই সময়ে এই দুই নেতা মহম্মদ হাত্তা ও সুতান জাহরির বিদেশে শিক্ষা শেষ করে শফিরে আসেন ও আন্দোলনে মনোন, বন্দিশা থেকে মুক্ত হয়ে সুরুর্ণ প্রোঃ জাতীয় আন্দোলনে মনোনিবেশ করেন। তিনি ইন্দোনেশিয়ার ২২ গোষ্ঠীগুলিকে একজোট করে পারতাই ইন্দোনেশিয়া নামে এক সিংগাঠন গড়ে তোলেন। ডাচ সরকারের কুনজরে পরে তিনি পুনরায় ২৯ হন এবং তাঁকে বিদেশে নির্বাসনে পাঠানো হয়। এদিকে হান্ডা ও প্রেরিরকেও নিউগিনিতে বন্দি শিবিরে পাঠানো হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জার্মানি প্রান্ড দখল করে নিলে (১৯৪০ খ্রি.) ইন্দোনেশিয়ায় হল্যান্ডের পেনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটে। এই সুযোগে জাপান ইন্দোনেশিয়া মেল করে নেয় (১৯৪২ খ্রি.)। জাপান ঔপনিবেশিক সরকার সুকর্ণকে প্রেমে থেকে মুক্তি দেয়। জাপানি কর্তৃপক্ষ সুকর্ণ ও হান্ডাকে ব্যবহার করে ইন্দোনেশিয়াবাসীর সাহায্য লাভের চেষ্টা করে।
জাপানকে যুদ্ধে সাহায্য দানের এখাস দিয়ে সুকর্ণ এক লক্ষ সেনাবিশিষ্ট এক সামরিক সংগঠন গড়ে তোলার সুযোগ পান। এ ছাড়াও তিনি জাতীয়তাবাদীদের নিয়ে গোপনে ঘধীনতার প্রস্তুতি চালিয়ে যান। শেষপর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান হেরে গেলে সুকর্ণ স্বাধীনতার জন্য এক প্রস্তুতি কমিটি গঠন করেন (১৯৪৫ খ্রি.. ১৪ আগস্ট)। এর তিনদিন পরে অর্থাৎ ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ১৭ আগস্ট সুকর্ণ-এর নেতৃত্বে ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা ঘোষিত হয় ও এক প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সুকর্ণ-এর নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী নেতারা সরকারের পাঁচটি নীতি অর্থাৎ পঞ্চশীল ঘোষণা করেন। এগুলি ছিল-জাতীয়তাবাদ, আন্তর্জাতিকতাবাদ, সম্মাতি, সমাজিক ন্যায়বিচার ও ঈশ্বর বিশ্বাস। স্বাধীনতা ঘোষণার পর নতুন * সকার কয়েকটি সমস্যার মুখোমুখি হয়, যথা-পঞ্চশীলের বিরোধিতা, PNI দলের বিভাজন ও PIR গঠন, কমিউনিস্টদের অভ্যুত্থান ও গাবিনেট সদস্যদের অপহরণ পরিকল্পনা প্রভৃতি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে জাপান হেরে গেলে ওলন্দাজরা পুনরায় ইন্দোনেশিয়ায় নিজেদের ঔপনিবেশিক শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠায় তৎপর হয়। সুমাত্রা ও জাভা বাদে ইন্দোনেশিয়ার অবশিষ্ট অংশ ওলন্দাজদের অধীনে চলে যায়। এক্ষেত্রে ব্রিটিশ সৈন্যরা ডাচদের পূর্ণ মদত জোগায়। শুধু তাই নয় জাভায় ঢুকে ব্রিটিশ সেনারা দু-লক্ষ ওলন্দাজ বন্দিদের মুক্ত করে। এই প্রেক্ষাপটে রানি উইলহেল মিনা ইন্দোনেশিয়া সম্পর্কে এক ঘোষণা জারি করেন। এই সময়ে সমগ্র ইন্দোনেশিয়া দু-ভাগে ভাগ হয়ে যায়। এর এক ভাগ ছিল সুকর্ণ-এর প্রজাতন্ত্রের অধীনে আর অপর ভাগে ছিল মিত্র শক্তির সাহায্য নিয়ে হল্যান্ডদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ। এই প্রেক্ষাপটে ব্রিটেনের মধ্যস্থতায় ইন্দোনেশিয়া ও হল্যান্ডের মধ্যে লিঙ্গজ্যোতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় (২৫ মার্চ, ১৯৪৭ খ্রি.)। এই চুক্তিতে ঠিক হয়- [I] জাভার বিভিন্ন অঞ্চল নিয়ে এক সংবিধান সভা ডাকা হবে। (ii) হল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়াকে নিয়ে একটি ইউনিয়ন গঠন করা হবে যে ইউনিয়নে থাকবে প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক সম্পর্ক ও অর্থ দপ্তর। স্বাভাবিকভাবেই ইন্দোনেশিয়ার জাতীয়তাবাদীরা এই চুক্তি মেনে নেয়নি।
মার্কিন উদ্যোগ ও ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা লাভ:
UNO-এর মধ্যস্থতায় ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে একটি সম্বি স্বাক্ষরিত হয় এবং ইন্দোনেশিয়া স্বাধীনতা পায়। গঠিত হয় ষোলোটি অঙ্গরাজ্য বিশিষ্ট ইউনাইটেড স্টেটস অব ইন্দোনেশিয়া। স্বাধীন - ইন্দোনেশিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি হন ড. সুকর্ণ এবং প্রধানমন্ত্রী হন মহম্মদ - হান্ডা। ও. সুকর্ণ-এর নেতৃত্বে ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় আন্দোলন বিশ্বের অন্যান্য দেশের পরাধীন জাতিগুলিকে উদ্বুদ্ধ করে।