বার ভূঁইয়া কারা এবং তাঁদের উৎপত্তির ব্যাখ্যা

 বার ভূঁইয়া কারা এবং তাঁদের উৎপত্তির ব্যাখ্যা

বার ভূঁইয়া কারা এবং তাঁদের উৎপত্তির ব্যাখ্যা

ম্রাট আকবরের রাজত্বকালে বাংলা মুঘল সাম্রাজ্যের একটি সুবা বা প্রদেশে পরিণত হলেও এখানে তখন কার্যকরভাবে মুঘল শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। উত্তর-পশ্চিম বাংলার নগর ও দুর্গ এলাকায় মুঘল শাসন সীমাবদ্ধ ছিল। বাংলার বিখ্যাত জমিদারগণ মুঘল শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এসব জমিদারদের নিজস্ব নৌবহর ও সৈন্যদল ছিল। তাঁরা সম্মিলিতভাবে মুঘল আধিপত্যের বিরুদ্ধে সম্রাট আকবরের খ্যাতনামা সমরনায়কদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হন। বাংলার ইতিহাসে এসব জমিদাররা বার ভূঁইয়া নামে খ্যাত। বার ভূঁইয়া বলতে বারজন প্রসিদ্ধ ভূ-স্বামী বুঝালেও আসলে এসব জমিদারদের সংখ্যা ছিল অনেক। মুসলমান এবং হিন্দু- উভয় সম্প্রদায়ভুক্ত ছিলেন এ জমিদারগণ।


আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন

মুঘল বিজয়ের প্রাক্কালে অনেক ভূঁইয়া বা জমিদার বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে স্বাধীনভাবে শাসন করতেন। এদের অনেকে বিভিন্ন জায়গীরদার বা ইজারাদারদের বংশধর ছিলেন এবং উত্তরাধিকারসূত্রে জমিদারীর মালিক হয়েছেন। তাছাড়া আফগানদের পতনের পর কোন কোন পাঠান সর্দার বাংলায় আশ্রয় নেন এবং বিভিন্ন জায়গায় তাঁরা স্বাধীন জমিদারী প্রতিষ্ঠা করেন। ড. আবদুল করিমের মতে, বাংলায় বার ভূঁইয়াদের উৎপত্তি হয় আফগান শাসনামলে। শেরশাহের পুত্র ইসলাম শাহের মৃত্যুর পর দিল্লিতে যেমন রাজনৈতিক বিশৃক্সখলা দেখা দেয়, বাংলায়ও তদ্রুপ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করে। এরূপ পরিস্থিতিতে উদ্ভব হয় বার-ভূঁইয়াদের। গৌড় বা তান্ডার কেন্দ্রীয় শাসনের প্রতি অনুগত থাকলেও অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে তাঁরা স্বাধীন ছিলেন। পরবর্তীতে এ জমিদাররা মুঘলদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।


বার ভূঁইয়াদের নেতৃত্ব দেন সোনারগাঁও-এর জমিদার ঈশা খান এবং পরে তাঁর পুত্র মুসা খান। ভাওয়াল অঞ্চলে গাজী পরিবার ছাড়াও অন্য দু'জন বড় জমিদার ছিলেন মজলিস পরতাপ ও মজলিস কুতুব। ফতেহ খান দক্ষিণ সিলেটে, করিমদাদ মুসাজাই ও ইব্রাহিম মোড়ল কিশোরগঞ্জে, আনোয়ার খান বানিয়াচঙ্গে, তাজ খান ও সলিম খান হিজলী এবং শামস খান বীরভূমের জমিদার ছিলেন। পাবনা অঞ্চলে মাসুম খান কাবুলী ও তাঁর পুত্র মির্যা মুমিন শক্তিশালী জমিদারী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আফগান দলনেতাদের মধ্যে সাহসী ব্যক্তিত্ব ওসমান খান লোহানী এবং বায়জিদ কররানী শ্রীহট্ট অঞ্চলে সামন্ত শাসকের মতো প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হন। বার ভূঁইয়াদের মধ্যে হিন্দু ভূস্বামীরাও ছিলেন। এদের মধ্যে যশোহরের প্রতাপাদিত্য,বিক্রমপুরের চাঁদ রায় ও কেদার রায়, শাহাজাদপুরের রাজা রায়, চান্দ্রপ্রতাপ বা মানিকগঞ্জের বিনোদ রায় ও মধু রায়, চন্দ্রদ্বীপের পরমান্দ রায়, ভুলুয়ার অনন্ত মানিক্য ও লক্ষণ মানিক্য, বাঁকুড়ার বীর হামির ছিলেন প্রধান। বাংলায় মুঘল কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে এসব জমিদারগণ প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। সোনারগাঁও-এর জমিদার ঈসা খানের নেতৃত্বে জমিদারদের বাহিনী সম্রাট আকবরের সেনাপতিদের বিরুদ্ধে লড়াই করে বহু ক্ষেত্রে তাঁদের পরাভূত করেন। সেজন্য সম্রাট আকবরের শাসনকালে বাংলার অধিকাংশ জায়গায় মুঘল কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়নি।

তোমাকে অনেক ধন্যবাদ বার ভূঁইয়া কারা এবং তাঁদের উৎপত্তির ব্যাখ্যা এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟