১৭৭১ থেকে ১৯১৪ সালের মধ্যে এশিয়া ও আফ্রিকাতে ইউরোপীয় উপনিবেশ বিস্তার ব্যাখ্যা কর অথবা, ১৮৭১ থেকে ১৯১৪ সাল সাম্রাজ্যবাদের যুগ
সাম্রাজ্যবাদ বলতে বোঝায় একটি রাষ্ট্র তার উন্নততর সামরিক শক্তি ও প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দেশের এলাকার সম্পদ ও তার নাগরিকদের ওপর কর্তৃত্তা প্রতিষ্ঠা চেষ্টা ৷ ১৮৭১ থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত সময়কালকে সাম্রাজ্য বাদের যুগ হিসাবে চিহ্নিত করা হয় এই ৷ এই সময় সাম্রাজ্যবাদের সবচেয়ে লক্ষ দিক হল আফ্রিকা ও এশিয়ায় ইউরোপীয় শক্তির উপনিবেশ স্থাপন ৷
আফ্রিকাঃ
ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদের নগ্নপ্রকাশ ঘটেছিল আফ্রিকা মহাদেশ ৷ 1870 সাল পর্যন্ত কেবলমাত্র সাহারার উত্তরে আলজেরিয়ায় ফরাসি এবং আফ্রিকার দক্ষিণ সীমার উত্তমাংশ আন্তরিক ও ট্রান্সভালে ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল ৷ অবশিষ্ট মহাদেশ ছিল অনাবিষ্কৃত ৷ ১৮৭০ সালের পর ইউরোপীয় রাজ্যগুলি আফ্রিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে নিজ নিজ কর্তৃত্ব কায়েম করতে অগ্রসর হয় আর এর সূচনা হয় মিশরের ওপর ব্রিটেনের কর্তৃত্ব কায়েমের মধ্য দিয়ে ৷
ফ্রান্সের তত্ত্বাবধানে মিশরের সুয়েজ খাল খনন শুরু হলে মিশরে ফরাসি প্রভাব বৃদ্ধি পায় ৷ ব্রিটেনও মিশরের ওপর প্রভাব বিস্তারের জন্য সুযোগ খুজতে থাকে ৷ মিশর সুয়েজ খালে সিয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত নিলে ব্রিটেনের সামনে সুযোগ এসে যায় ৷ ব্রিটেন সুয়েজ খালের শেয়ার কিনে নেয় । ব্রিটেন ও ফ্রান্সের প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয় এর বিরুদ্ধে মিশর বাসি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন গড়ে তোলে, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স মিলিতভাবে এই আন্দোলন দমন করার সিদ্ধান্ত নেয় ৷ কিন্তু এই সময় ফ্রান্সের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়াই ফ্রান্স পিছিয়ে আছে এরকম অবস্থায় ব্রিটেন এককভাবে মিশর দখল করে নেয় ৷
ব্রিটেন নীল নদের উৎসভূমি সুদান অঞ্চলে কর্তৃত্ব কায়েম করলে সেখানে ব্রিটিশ বিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলন গড়ে তোলে ৷ জাতীয়তাবাদীরা একাধিক ব্রিটিশ সেনাপতিকে হত্যা করে রাজধানী খার্মে দখল করে নেয় কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ বাহিনীর নিষ্ঠুরভাবে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দমন করে কর্তৃত্ব পুনর প্রতিষ্ঠা করেন ৷
আফ্রিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলেও ফ্রান্স ও তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে অনেক আগে থেকে আলজেরিয়ার উপর ফ্রান্সের নিয়ন্ত্রণ ছিল ৷ এরপর বিসমার্কের মধ্যে ফ্রান্স তিনেশিয়া দখল করেন ক্রমে আফ্রিকার উত্তর উপকূল থেকে কঙ্গো পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ফ্রান্সের আধিপত্য স্থাপিত হয় ৷ জার্মানি আফ্রিকার ডোলাগোয়া উপসাগর অঞ্চল, সেন্ট লুসিয়া উপসাগরীয় অঞ্চল, জাম্বোবি, টোগোল্যান্ড,ক্যামেরুন অধিকার করেন ৷ ইতালীয় পিছিয়ে থাকেনিয়া এবিসিনিয়া উপকূলে ইতালির উপনিবেশ স্থাপিত হয় ৷
এশিয়াঃ
এশিয়ার মূল ভূখণ্ডে উপনিবেশ বিস্তারের জন্য ইউরোপীয় জাতি গুলির মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলে ৷ ব্রিটেন ভারতের উপর আধিপত্য বিস্তার করে ৷ ফ্রান্স থাইল্যান্ডে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উদ্যোগী হয় কিন্তু ব্রিটেনের চাপে ফ্রান্স পিছু হয়ে ওঠে ৷ ব্রিটেন আফিম যুদ্ধে চীনকে পরাজিত করে চীনের উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে ৷ রাশিয়া মঙ্গোলিয়ার একাংশ অধিকার করে রেলপথ নির্মাণ সমাপ্ত করে ৷
চীন যখন পশ্চিমে শক্তির অনুপ্রবেশ ঘটেছিল তখন জাপানের দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টি পড়ে ৷ মার্কিন সেনাপতি কমোডরর পেরিয়ে জাপানের উপকূলে উপস্থিত হন এবং যুদ্ধের ভয় দেখিয়ে বৈষম্য মূলক সন্ধি চাপিয়ে দেন ৷ অবশ্য কিছুকালের মধ্যেই বিদেশী শোষনে ক্ষুদ্র জাপান আধুনিককরণের দ্বারা স্বনির্ভর হয়ে ওঠে ৷ এরপর জাপান নিজেই সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ৷ ১৮৯৪ সালে জাপান চীন আক্রমণ করে মাঞ্চুরিয়া ফরমোজা পেসকডর প্রভৃতি অঞ্চল দখল করে । কোরিয়ার নামমাত্র স্বাধীনতা থাকলেও শেষ পর্যন্ত জাপান দ্বারা অধিকৃত হয় ।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি হল শ্রীলংকা মালয় সিঙ্গাপুর ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতিদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয় ৷ তবে পরবর্তীকালে ইংরেজদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয় ৷ সর্বপ্রথম পর্তুগিজদের উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয় ৷ কিন্তু পরবর্তীকালে ইংরেজগণ সিঙ্গাপুর সহ সমগ্র মালয় দখল করে নেয়। ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জগুলি দখল করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৷
সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির উপনিবেশ স্থাপনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা যুদ্ধ ডেকে এনেছিল ৷ প্রথম দিকে ইউরোপীয় দেশগুলি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল তবে পরবর্তীকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ৷