পূর্ব ইউরোপের বার্লিন কংগ্রেসকে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিল
উনিশ শতকে সত্তরের দশকের মধ্যভাগে প্রাচ্য সমস্যা ইউরোপীয় রাজনীতিতে সংকট সৃষ্টি করেছিল ৷ তুরস্ক সাম্রাজ্যের দুর্বলতা সুযোগ নিয়ে প্রতিবেশী দেশ রাশিয়া ১৮৫৪ সালে তুরস্ক আক্রমণ করে তার বেশ কিছু অঞ্চল ছিনিয়ে নেয় ৷ তুরস্কের বিরুদ্ধে রাশির অগ্রসর নীতি প্রতিরোধ করার জন্য ব্রিটেন ফ্রান্স ও অস্ট্রিয়া ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ৷ এই যুদ্ধ ক্রিমিয়ার যুদ্ধ নামে পরিচিত ৷ ১৮৫৬ সালে প্যারিস শান্তি সম্মেলন এই যুদ্ধের অবসান ঘটায় ৷
১৮৭৬ সালে দুটি বলকান রাজ্য সার্বিয়া ও মন্টেনিগ্র তুরস্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ৷ কিন্তু তুরস্ক এই দুই অঞ্চলের বিদ্রোহকে কঠোর নিষ্ঠুরভাবে দমন করে ৷ এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ১৮৭৭ সালে এপ্রিল মাসের রাশিয়া তুরস্কের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালায় ৷ এই যুদ্ধের তুরস্ক পরাজিত হয় ৷ 1878 সালে সান টি স্টিফানোর চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে ৷ সান স্টিফানোর চুক্তি শর্ত গুলি হল (ক). তুরস্ক মন্টেনিগ্রো, সার্বিয়া, রোমানিয়া স্বাধীনতা স্বীকার করে নেবে (খ).কৃষ্ণ সাগর থেকে পশ্চিমে আলবানীর পর্বতমালা পর্যন্ত এবং দানিয়ুব নদী থেকে ইজিয়ান সাগর পর্যন্ত একটি বৃহৎ বুলগারিয়া রাজ্য গঠিত হবে (গ) কারস বাটুস প্রভৃতি কয়েকটি অঞ্চল তুরস্ক রাশিয়াকে দিয়ে দেবে (ঘ) তুরস্ক রাশিয়াকে যুদ্ধের জন্য ক্ষতিপূরণ দেবে ৷
ব্রিটেন, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়ার,জার্মানি প্রভৃতি ইউরোপীয় শক্তিগুলি সান স্টিফানোর চুক্তি মেনে নিতে অস্বীকার করেন ইউরোপীয় ও শক্তি গুলির চুক্তি কার্যকর না করার জন্য রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করে ৷ রাশিয়া সেই মুহূর্তে আরেকটি ক্রিমিয়ার যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি চাইনি। ৷ সিদ্ধান্ত হয় যে বিসমার্কের সভাপতি জার্মানির রাজধানী বার্লিনে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ৷ ১৮৭৮ সালের জুন মাসে বার্লিন সম্মেলন শুরু হয় আর এই সম্মেলন শেষ হয় ১৮৭৮ সালের ১৩ই জুলাই ৷
১৮৭৮ সালের বার্লিন সম্মেলন সান স্টিফানোর এর সন্ধি নাকোচ করে বার্লিন সন্ধি স্বাক্ষরিত হয় ৷ এই সন্ধের শর্ত অনুযায়ী (ক) রাশিয়ার বোসারভিয়া, বাটুস এবং আর্মেনিয়ার কিছু অংশ লাভ করে (খ).রোমানিয়া ও সার্বিয়ার স্বাধীনতা স্বীকৃত হয় (গ).ব্রিটেন সাইপ্রাস লাভ করে (ঘ) ইতালি আলবেনিয়া ও ত্রিপোলি লাভ করেন (ঙ). ফ্রান্স টিউনিস লাভ করেন ৷
বার্লিম সন্ধির ত্রুটি বিচ্যুতি গুলি হলঃ
- প্রথমতঃ বার্লিন বৈঠকে বলকান জাতিগুলির আশা-আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করা হয়েছিল এর ফলে বলকান জাতিগুলির মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয় এই কারণে সন্ধির স্বল্পকাল পরেই পূর্বাঞ্চল সমস্যা সংকরজনক হয়ে ওঠে।
- দ্বিতীয়তঃ বুলগেরিয়া জাতি বার্লিনের সন্ধির দ্বারা বুলগেরিয়ার বিচ্ছিন্ন থাকে তাদের প্রতি ভর অবিচার বলে গণ্য করেছিল ৷
- তৃতীয়তঃ ক্রীট দ্বীপকে গ্রিসের সঙ্গে যুক্ত না করায় ক্রীটবাসীরা ভয়ানক ক্ষুদ্র হয় ৷ ক্রীটের বেশিরভাগ আদিবাসী ছিল গ্রিক ৷ তারা তুর্কি শাসনে থাকতে রাজি ছিল না ৷ তুর্কিদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘাত চলতে থাকে।
- চতুর্থতঃ বসিনিয়া ও হার্জেগোভিয়া প্রদেশ দুটি অস্ট্রিয়াকে দেওয়ার সার্বিয়া ক্ষুদ্ধ হয ৷ সার্বিয়ার যেকোনো উপায়ে বসিনিয়া ও হার্জেগোভিয়া লাভের চেষ্টা করে ৷
বার্লিন সম্মেলন প্রাচ্য সমস্যা কোন স্থায়ী সমাধান করতে পারেনি । এই সন্ধির মধ্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বীজ লুকিয়ে ছিল ৷ বার্লিনের সন্ধিতে এই জার্মানির সাহায্যপুষ্ট অস্ট্রিয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে বলকান রাজনীতিতে নতুন একটি শক্তির উদ্ভব হয় ৷ এর ধারাবাহিক পরিণতি হল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।