অবৈধ আফিম ব্যবসা বন্ধ করার জন্য কমিশনার লিন-সে-শু কি কি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন What steps did Commissioner Lin-Tse-Shu take to stop the illegal opium trade?

 অবৈধ আফিম ব্যবসা বন্ধ করার জন্য কমিশনার লিন-সে-শু কি কি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন


প্রথম ইঙ্গোচীন যুদ্ধ বা আফিম যুদ্ধের পিছনে লিন-সে-শু ভূমিকাটি অস্বীকার করা যাবে না । মাঞ্চু সরকার ১৮৩৮ সালে বেআইনি আফিম ব্যবসা কে বন্ধ করার জন্য মরিয়া প্রচেষ্টা চালায় ৷ চীন সরকার লিন-সে-শু নামক সুদক্ষ অফিসার কে ক্যান্টনের কমিশনার নিয়োগ করলে ৷ ইঙ্গ-চীন সম্পর্ক এক নতুন মাত্রা পায় । আফিম ব্যবসাকে কেন্দ্র করে চীনা রাজ দরবারে দুটি পরস্পর বিরোধীগোষ্ঠীর সৃষ্টি হয় । একদল চেয়েছিলেন আফিম ব্যবসাকে আইনসিদ্ধ করা হোক, তাহলে চোরাপথে আফ্র আমদানি বন্ধ করা হবে ৷ তেমনি অন্য দিকে সরকারের আয় বাড়বে ৷ অন্য একদল এই ব্যবসাকে উৎখাত করতে চেয়েছিলেন ৷ এমনকি চিনা অধিকাংশ বুদ্ধিজীবীরা এই ব্যবসা কে মানতে পারেননি । তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সরকার চীন থেকে বেআইনে আফিম ব্যবসা বন্ধ করার জন্য লিন-সে-শু দায়িত্ব দিয়েছিলেন ৷ সেই সময়ে এই কাজ লিন-সে-সুর থেকে অন্য কেউ দক্ষ ছিল না তা বলাই যায় ।




লিন-সে-শু ছিলেন তৎকালীন চীনের এক বিশেষ শিক্ষিত ব্যাক্তি সমসাময়িক ঘটনাবলী পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার প্রতিকার জ্ঞান ছিল ৷ পাশ্চাত্য বণিকদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি জানতেন এই সদ ব্যক্তিত্বকেই চীনা বাসি নীল আকাশের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন ৷ লিন-সে-শুর চরিত্র এবং ব্যক্তিত্ব ছিল নীল আকাশের মত নির্মল ও পরিচ্ছন্ন ৷ তিনি ১৮৪৯ সালে ১০ই মার্চ কমিশনার হিসেবে ক্যান্টনে এসেছিলেন ৷ বন্ধ করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছিলেন ৷ যে সব চেনা বনিক এই অসৎ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে তিনি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ৷



লিন-সে-শু উপলব্ধি করেছিলেন বিদেশীরা বেআইনি আফিম ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছিল ৷ তাই ব্যবসা বন্ধক করে দেওয়ার অর্থ বিদেশি তথা ইংল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হওয়া এবং যুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি হওয়া ৷ প্রথম দিকে তিনি প্রত্যক্ষ সংগ্রামে জড়িত হতে চাইনি তিনি বিদেশিদের শক্তি সম্পর্কে বেশি সচেতন ছিলেন ৷ তিনি প্রথমদিকে আফিম ব্যবসার ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে প্রচার চালিয়েছিলেন ৷ এই ক্ষতিকারক ব্যবসা সংঘের যেসব চিনা বণিক জড়িত ছিলেন তিনি তাদের কঠোর শাস্তি দিয়েছিলেন ৷ তিনি দেশীয় বিদেশি বণিকদের মজুদ আফিম তার হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন ৷ কিন্তু তার আদেশে বিদেশি বণিকরা মানতে চাইনি, দেশের স্বার্থে তিনি বেআইনি বন্ধ করতে চেয়েছিলেন ৷ তিনি এই সিদ্ধান্তকে অটল ছিলেন যে বিদেশীদের এই ব্যবসা তিনি বন্ধ করবেন তিনি প্রয়োজনে বিদেশীদের সঙ্গে যুদ্ধে ঝুঁকি নিতেও রাজি ছিলেন ৷ তিনি বিদেশিদের আদেশ দেন তাদের মজুদ করা বেআইনি সমস্ত আফিম তার হাতে তুলে দিতে হবে । ভবিষ্যতে বিদেশীরা এই ধরনের ব্যবসা করবে না এই অঙ্গীকারও তাকে করতে হবে ৷



সব আপস তার সব রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে লিন-সে-শু ও কঠোর ব্যবস্থা জন্য তৈরি হয়েছিলেন ৷ ১৮৩৯ সালে ২৮ শে মার্চ তিনি বেআইনি আফিম ব্যবসা বন্ধ করার জন্য ব্রিটিশ কুঠি বা ফ্যাক্টরিগুলিকে অবরোধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন ৷ প্রায় দেড় মাস বিদেশিদের ক্যান্টনে অবরুদ্ধ অবস্থায় রেখেছিলেন বাধ্য হয়ে ইংরেজরা তাদের রাজ প্রতিনিধি ক্যাপ্টেন চাল এলিয়েনের হাতে তাদের সমস্ত আফিম জমা দিতে হয়েছিলেন এবং লিন-সে-শু হাতে তুলে দিতে হয়েছিল ৷ বিশ হাজার পেটি বাজেয়াপ্ত আফিম প্রকাশ্যে নষ্ট করেছিলেন এই ঘটনায় ইংরেজ বনিরা ক্ষুদ্র ও অপমানিত হয়েছিলেন এবং কিভাবে এই অপমানের প্রতিশোধ নেওয়া যায় তার প্রহর গুন ছিলেন ৷



লিন-সে-শু ইংরেজ বণিকদের এক চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করতে বলেছিলেন যে তারা ভবিষ্যতে চিনে আর আপি মানবে না কিন্তু ইংরেজ বণিকরা এই ধরনের চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেনি । এই ঘটনায় ইঙ্গোচীন সম্পর্ককে খারাপ করেছিলেন ৷ লিন বণিকদের কাছ থেকে তারা ভবিষ্যতে চীনে আনবে না এই প্রতিশ্রুতি আদায় করতে বাধ্য হয়ে ৷ তাদের ক্যান্টন ছেড়ে ম্যাকাও চলে যেতে বাধ্য করেন ৷ এই ঘটনা ইংরেজদের অপমানিত করেছিলেন ৷ এইসব ঘটনাগুলি থেকে আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে লিন-সে-শু বিজয়ী হয়েছিলেন ৷ কিন্তু বাস্তব অন্য কথাই বলে লিন-সে-শু ব্রিটিশ জাতির আত্মবিশানে আঘাত করেছিলেন মুখ বুঝে সহ্য করার শিক্ষা তাদের অভিধানে ছিল না ।



১৮৩৯ সালে ৭ই জুলাই ইংরেজরা লিন-ওয়ে-সি নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করেন ৷ ক্যান্টনের কমিশনার এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ইংরেজিদের তার হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন ৷ কিন্তু ইংরেজ প্রতিনিধি এলিয়ট নানা অজুহাতে বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন ৷ আসলে ইংরেজিদের বক্তব্য ছিল ব্রিটিশ নাগরিকদের বিচার করার কোন অধিকার চীনাদের নেই দোষীদের বিচার এলিয়ট করবে তিনি বিচারের নামে প্রহসন করেছিলেন ৷ ইংরেজদের যোগ্য জবাব দেওয়ার জন্য তাদেরকে খাদ্যদ্রব্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ করেছিলেন ৷ তিনি পর্তুগিজদের ব্রিটিশদের ম্যাকাও থেকে তাড়ানোর নির্দেশ পর্যন্ত দিয়েছিলেন ৷ ১৮৪৯ সালে ২৬ শে আগস্ট ব্রিটিশরা ক্যান্টন থেকে চলে গিয়েছিলেন কমিশনার লিন-সে-শু ওইদিন বিজয়ের মত ক্যান্টনের পরিবহন করেছিলেন ৷ ইমানুয়েল সু এর ভাষায় ,"up to this point line had won ar a every staff theke conflict" ৷



আফিম যুদ্ধ শুরু হওয়ার পিছনে লিন-সে-শু ভূমি কাকে অস্বীকার করা যাবে না ৷ লিন-সে-শুর ভূমিকা ইংরেজিতে অসুবিধায় ফেলেছিলেন বে-আইনি আফিম আমদানি করে ইংরেজ বণিকেরা প্রচুর মুনাফা লাভ করেছিলেন ৷ লিন-সে-শু তাদের অসাধু ব্যবসায়ী বাধা দিয়েছিলেন ৷ সামরিকভাবে ইংরেজরা পিছু হটলেও বাস্তবে দেখা যায় লিন-সে-শুর ভূমিকায় প্রথম ইঙ্গোচীন যুদ্ধের ক্ষেত্রে পথ করেছিল ৷ প্রথম ইঙ্গোচীন যুদ্ধ বা আফিমের যুদ্ধের চীনের পরাজয় হয়েছিল এর ওপর চাপিয়ে দিয়েছিলেন তাদের অপমানের জবাব ।

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟