তুমি কি মনে কর যে জার্মানির ঐক্য বিসমার্ক প্রধান স্থপতি ছিলেন বা,বিসমার্ককে কি জার্মানীর ঐকাকরণের স্থপতি বলা যায়? ব্যাখ্যা কর।
জার্মান রাজ্যগুলির মধ্যে প্রাশিয়া ছিল সবথেকে শক্তিশালী ৷ ১৮৬২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিসমার্ক প্রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হন । বিসমার্ক উপলব্ধি করেন যে জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরাল হল অস্ট্রিয়া ৷ তাই তিনি প্রাশিয়া নেতৃত্বে অস্ট্রিয়া কে বিতাড়িত করে জার্মানির ঐক্য সম্পন্ন করার নীতি গ্রহণ করেন ৷
রাজতন্ত্রের সমর্থক বিসমার্ক বিশ্বাস করতেন যে নিয়ন্ত্রান্তিক উপায় নয়, জার্মানির ঐক্য সাধিত হবে একমাত্র সামরিক শক্তির সাহায্যে ৷ তিনি প্রাশিয়ার আইনসভায় দাঁড়িয়ে বলেন ভোটের দ্বারা নয় রক্ত ও লৌহ নীতির দ্বারায় জার্মানির ঐক্য সাধিত হবে ৷ তিনি ১৮৬৪ থেকে ১৮৭০ সালের মধ্যে তিনটি যুদ্ধে সাহায্যে জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করে ৷
বিসমার্কের প্রথম যুদ্ধটি হলো ডেনমার্কের সঙ্গে স্লেজউইক ও হলস্টিনের সমস্যাকে কেন্দ্র করে ৷ অবস্থানগত দিক থেকে স্লেজ উইক ও হলস্টিন ছিল জার্মান ভূখণ্ডের অধীনে ৷ কিন্তু রাজনৈতিক দিক থেকে স্থানটি ছিল ডেনমার্কের রাজার অধীনে ৷ ১৮৬৩ সালে ডেনমার্কের রাজা নবম ক্রিস্টিয়ান আন্তর্জাতিক চুক্তি ভঙ্গ করে স্থান দুটিকে ডেনমার্কের অন্তর্ভুক্ত করলে বিসমার্ক অস্ট্রিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে ডেনমার্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন ৷ এই যুদ্ধ ইতিহাসে স্লেজ উইক হলস্টিনের যুদ্ধ নামে খ্যাত ৷ এই যুদ্ধে ডেনমার্ক পরাজিত হয় ৷ 1864 সালে ভিয়েনা চুক্তির মাধ্যমে ডেনমার্ক ওই দুটি অঞ্চলের ওপর থেকে যাবতীয় দাবি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় ৷ কিন্তু ওই দুটি অঞ্চলকে কেন্দ্র করে প্রাশিয়া ও অস্ট্রিয়ার মধ্যে বিরোধ বাধে বিরোধ মীমাংসার জন্য ১৮৭৫ সালে প্রাশিয়া অস্ট্রিয়ার মধ্যে গ্যাসটিন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ৷ এই চুক্তির মাধ্যমে পার্শিয়া লাভ করে স্লেজউইক এবং অস্ট্রিয়া লাভ করেন হলস্টিন ৷
বিসমার্ক ভালোভাবেই জানতেন যে এই জার্মানির ঐক্য সাধনের প্রশ্নে অস্ট্রিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ অনিবার্য ৷ তাই তিনি প্রথমে ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়নের সঙ্গে একটি গোপন চুক্তি স্বাক্ষর করেন ৷ চুক্তিতে স্থির হয় যে অস্ট্রিয়ার সঙ্গে প্রাশিয়া যুদ্ধে ফ্রান্স বেলজিয়াম বা রাইন অঞ্চল দখলে সাহায্য পাবে । অন্যদিকে বিসমার্ক অস্ট্রিয়ার কাজ থেকে ভেনেসিয়া প্রদেশটিকে নিয়েই ইতালিকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন ৷ বিনিময়ে যুদ্ধে এই ইতালির নিরপেক্ষ থাকার প্রতিশ্রুতি দেয় আবার পোল্যান্ডের জনগণের বিদ্রোহের সময় পার্শিয়া রাশিয়াকে নানাভাবে সাহায্য করেছিল ৷ তাই রাশিয়া আসন্ন অস্ট্রিয়া প্রাশিয়ার যুদ্ধে নিরপেক্ষ থাকার প্রতিশ্রুতি দেয় ৷ এইভাবে বিসমার্ক অস্ট্রিয়াকে ইউরোপে বিদ্রোহীন করে তোলে এরপর প্রাশিয়া গেস্টনের চুক্তিভঙ্গের অজুহাতে অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন ৷ ১৮৬৬ সালে সংঘটিত ও এই যুদ্ধ স্যাডোয়ার যুদ্ধ নামে পরিচিত ৷ স্যাডোয়ার যুদ্ধে প্রাশিয়া শোচনীয় ভাবে অস্ট্রিয়াকে পরাজিত করে ৷ ২৩ শে আগস্ট অস্ট্রিয়া ওপাশিয়ার মধ্যে প্রাগের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয় এবং যুদ্ধের অবসান ঘটে ৷৷
প্রাগের সন্ধির শর্ত গুলি হলঃ
এই সন্ধি শর্ত অনুযায়ী
ক ১৮১৫ সালে তপতী জার্মান রাষ্ট্রসঙ্ঘের বিলুপ্ত ঘটে খ্যান ওভার ক্যাসেল স্লেজ হলস্টিনের ওপর পার্সের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয় গার্সিয়া নেতৃত্বে উত্তর জার্মানির রাষ্ট্রগুলিকে নিয়ে একটি যুক্তরাষ্ট্র গঠিত হয় ঘ পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভিনেশিয়া প্রদেশটিকে ইতালিতে দেওয়া হয়।
শ্যাডোয়ার যুদ্ধের ফলে উত্তর জার্মানির ঐক্যবদ্ধ হলেও দক্ষিণ জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজ বাকি ছিল উপলব্ধি করেন যে দক্ষিণ জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হলে ফ্রান্সের সঙ্গে যুদ্ধ অনিবার্য তাই বিসমার্ক ইউরোপের রাজনীতিতে ফ্রান্সকে মিত্রহীন করে তুলতে উদ্রোগী হন। অন্যদিকে ১৮৬৮ সালে স্পেনে এক গণবিদ্রোহ দেখা দিলে স্পেনের রানী ইসাবেল সিংহাসন চিত হয় স্পেনের জনগণ জার্মানির হোয়েন জাল বংশের প্রতিনিধি ছিল প্রিন্স লিউ পলানকে স্পেনের সিংহাসনে মনোনীত করেন ফলে পূর্ব দিকে পারছেন এবং পশ্চিমের স্পেন উভয় জায়গাতেই হয় রাজবংশ শাসন ফ্রান্সকে আতঙ্কিত করেছিল তাই ফ্রান্সের অনুরোধমতো পারসিয়ার রাজা প্রথম উইলিয়াম পরামর্শে লিওপোল্ড স্পেনের সিংহাসনে বসতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন কিন্তু ফ্রান্সের সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ন এতে সন্তুষ্ট হয়নি ৷
স্ত্রী ভবিষ্যতে যাতে স্পেনে কোনদিনই জার্মান বংশীয় কোন প্রতিনিধি সিংহাসন আরোহন করতে না পারে তার প্রতিশ্রুতি আদায় তৎপর হয় তিনি এই প্রতিশ্রুতি আদায়ের জন্য এইমস নামক গ্রামে বিশ্রামরত প্রথম উইলিয়ামের নিকট গুনে দিতে নামে এক দূতকে প্রেরণ করেন প্রথম উইলিয়াম একটি টেলিগ্রাম যোগে গাউন্ড বিনোদিতির সঙ্গে সাক্ষাৎকারের বিবরণ কে জানিয়ে দেন দেন বিসমার্ক এই টেলিগ্রামের কিছু অংশ বিকৃতি ভাবে সংবাদপত্রে প্রকাশ করে যাদের ধারণা তৈরি হয় যে প্রথম উইলিয়াম ফ্রান্সের দুধকে অপমান করছেন এতে ফ্রান্সের জনগণ উত্তেজিত হয়ে পার্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঘোষণায় দাবি জানাবে এবং ১৮৭০ সালে ফ্রান্স পারসিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ইতিহাসে এই যুদ্ধ সেডানের যুদ্ধ নামে পরিচিত এই যুদ্ধে ফ্রান্স শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয় ১৮৭১ সালে ফ্রাঙ্কফুর্টের সন্ধি স্বাক্ষর করে ফ্রান্স জার্মানিকে মেইড ও আলসার লোডেন অঞ্চল ছেড়ে দিতে ও ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রচুর অর্থ দিতে বাধ্য হন।
তিনটি যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে বিসমার্ক পার্শিয়ার নেতৃত্বে জার্মানির ঐক্য সাধন সম্পন্ন করেন প্রথম উইলিয়াম ঐক্যবদ্ধ ও জার্মানির সম্রাট হিসেবে ঘোষিত হন বিসমার্কের রক্ত ও লৌহ নীতির জয় সূচিত হয় ৷