ন্যাম (NAM) এর অর্থ কী?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহিত পরেই যুদ্ধের প্রয়োজনে গড়ে ওঠা 'মিত্রশক্তি' ভেঙে যায়। একদিকে সোভিয়েত রাশিয়া ও অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বিশ্ব দুটি পরস্পর বিরোধী গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে যায়। সোভিয়েত রাশিয়া ও তার মিত্রবর্গের ধনতন্ত্রবাদ ভীতি এবং অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমি রাষ্ট্রবর্গের সামাবাদ-ভীতি থেকেই এই দুই পরস্পর বিরোধী গোষ্ঠীর উৎপত্তি হয়। এই দুই গোষ্ঠীর কোনটিতেই যোগ না দিয়ে, স্বাধীন ভারত উভয় গোষ্ঠীর সঙ্গেই বন্ধুত্ব বা সমদূরত্ব বজায় রেখে সম্পূর্ন স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে বৈদেশিক সম্পর্ক পরিচালনার যে নীতি গ্রহন করে তাহাই বিশ্বে জোটনিরপেক্ষ নীতি নামে পরিচিত।
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
ভারতের জোটনিরপেক্ষ নীতির বৈশিষ্ট্যঃ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে বিশ্বের দুই প্রধান শক্তিগোষ্ঠী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট ও সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোটের বাইরে থেকে ভারত নিরপেক্ষতা নীতি অবলম্বন করে চলে।
ভারতের জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি সম্পূর্নরূপে শান্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। ভারত বিশ্বাস করে যে, শান্তিপূর্ন পদ্ধতিতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধান সম্ভব। এজন্য কোরিয়া, মধ্যপ্রাচ্য প্রভৃতি দেশে ভারত শান্তির পথ ধরে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে সচেষ্ট।
উপযুক্ত সামরিক শক্তির অভাব থাকলেও ভারত স্বাধীনভাবেই তার পররাষ্ট্রনীতি প্রয়োগ করতে সদাসচেষ্ট। অন্য কোনো রাষ্ট্রকে অনুসরণ করে বা অপরের পরামর্শ মেনে ভারত তার পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করতে চায় না।
ভারত বর্ণবৈষম্য ও জাতিগত বিদ্বেষের বিরোধী। তাই দক্ষিন আফ্রিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর শ্বেতাঙ্গদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে ভারতকে প্রতিবাদ জানাতে বা ইতিবাচক ভূমিকা নিতে দেখা যায়। দক্ষিন-আফ্রিকা, ভিয়েতনাম, নামিবিয়া এবং কঙ্গোর ঔপনিবেশিকতা বিরোধী মুক্তিযুদ্ধে ভারত সক্রিয় সমর্থন জানিয়েছে।
ভারতের জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণের উদ্দেশ্যঃ
এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে এমন একটা জায়গায় ভারতের অবস্থান, যা তাকে মধ্যপ্রাচা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাথে সংযোগ স্থাপনকারী দেশে পরিণত করেছে। পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল, ভুটান, চিন, ব্রহ্মদেশ, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশের আভ্যন্তরীন ও পররাষ্ট্রনীতির প্রভাব পড়েছে ভারতের বিদেশ-নীতিতে।
সুপ্রাচীন কাল থেকেই অহিংসা, শান্তি, সহমর্মিতা ও সহনশীলতার আদর্শে ভারত বিশ্বাসী। হিৎসা জর্জরিত পৃথিবীতে বুদ্ধ ও অশোকের বাণী ভারতবর্ষের সীমানা ছাড়িয়ে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। ক্ষমতার শীর্ষে উঠেও আকবর ও শিবাজি সহনশীলতার কথা প্রচার করেন। পরবর্তীকালে ভারত এই মহান আদর্শ ও ঐতিহ্য বহন করতে প্রয়াসী হয়।