কংগ্রেসের সুরাট অধিবেশনের (১৯০৭) গুরুর দেখো।
জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠায় কুড়ি বছর পর কংগ্রেসের মধ্যে নরমপন্থী চরমপন্থী নামে দুটি গোষ্ঠীর উদ্ভব হয়। উভয় গোষ্ঠীর মধ্যে মতাদশাগত বিদেশ দেখা দিতে থাকে। বঙ্গভঙ্গের পর এই বিরোধ আরও বৃদ্ধি পায়। ১৯০৭ খ্রিঃ সুরাট অধিবেশনে এই মতপার্থক্য চরম আকার ধারণ করে। এর ফলে কংগ্রেস দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এই ঘটনা 'সুরাট বিচ্ছেদ' নামে পরিচিত।
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
১৯০৫ খ্রিঃ বারাণসীর কংগ্রেস অধিবেশনে নরমদধূ ও চরমপন্থী বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন নরমপন্থীরা আনুমোদন করলেও চরমপন্থীদের দাবী মেনে তাহা ভারতের সর্বত্র ছড়িয়ে দেবার প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে। ফলে চরমপন্থীরা ক্ষুব্ধ হয়।
পরের বছর কলকাতায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের অধিবেশনে দুই গোষ্ঠীর বিরোধ আরও তীব্র হয়। সভাপতির পদ নিয়ে অসন্তোষ দানা বাঁধলে প্রবীন দাদাভাই। নৌরজিকে সভাপতি করে অবস্থার সামাল দেওয়া হয়। এই অধিবেশনে স্বরাজ লাভ। কংগ্রেসের মুখ্য উদ্দেশ্য বলে ঘোষণা করা হলেও স্বরাজের প্রকৃত অর্থ নিয়ে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মতপার্থক্য থেকে যায়।
এই পরিস্থিতিতে ১৯০৭ খ্রিঃ কংগ্রেসের সুরাট অধিবেশনে চরমপন্থীদের তীব্র বিরোধীতা সত্ত্বেও নরমপন্থী নেতা রাসবিহারী ঘোষ সভাপতি পড়ে নিযুক্ত হন। কলকাতা অধিবেশনে 'স্বরাজ', 'বয়কট' নিয়ে যেসব প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল সেগুলি পরিবর্তনের চেষ্টা হলে সভায় তীব্র গোলযোগ শুরু হয়। উভয়পক্ষের মধো হাতাহাতি, চেয়ার ছোঁড়াছুঁড়ি শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত পুলিশ এসে শান্তি রক্ষা করে। এরপর চরমপন্থীরা সভাকক্ষ ছেড়ে চলে আসে। এভাবে কংগ্রেস দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।
সুরাট কংগ্রেসের গুরুত্বঃ
প্রথমতঃ কংগ্রেস যে একটি ঐক্যবদ্ধ সংগঠন ছিল সুরাট কংগ্রেসে তাতে ফাটিল দেখা যায়। ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে, এই সময়ে কংগ্রেসের 'জাতীয়' নামের কোনো সার্থকতা ছিল না।
দ্বিতীয়তঃ ব্রিটিশরা এই ঘটনায় খুশি হয় এবং তারা নরমপন্থী -দের আরও কাছে টেনে নেয়। নরমপন্থীদের সন্তুষ্ট করতে মর্লে--মিন্টো সংস্কার প্রবর্তন করা হয়।
তৃতীয়তঃ কংগ্রেসের ভাঙনের ফলে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সাময়িক ভাটী এলেও অচিরেই তাতে পূর্ণ জোয়ার এসেছিল। ঐতিহাসিক সুমিত সরকারের মতে, কংগ্রেসের এই ভাঙন জাতীয় আন্দোলনকে আরও শক্তিশালীই করেছিল।