কোরিয়া যুদ্ধের কারণ সম্পর্কে আলোচনা করো।
কোরিয়া ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা পর্যন্ত জাপানের কর্তৃত্বাধীন ছিল ৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কালে মার্কিন সেনা ও সোভিয়েত লাল ফৌজ জাপানের হাত থেকে করিয়াকে মুক্ত করে ৷ অবশেষে জাপান সম্পূর্ণরূপে পরাজিত হলে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে আগস্ট মাসে ৩৮ ডিগ্রি অক্ষরেখা বরাবর কোরিয়ার উত্তরাংশে রাশিয়া এবং দক্ষিণাংশে আমেরিকার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয় ৷ এরপর এই দুই শক্তি সমগ্র কোরিয়ায় তাদের প্রাধানা স্থাপনের জন্য সচেষ্ট হল । এভাবে কোরিয়ার ভাগ্য ঠান্ডা লড়াইয়ের আবর্তে জড়িয়ে পড়ল ।
১৯৪৫ সালে আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে মস্কোয় এক বৈঠকের মাধ্যমে একটি 'যুগ্ম কমিশন' গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় । এই কমিশন কোরিয়ায় একটি অস্থায়ী সরকার গঠনের চেষ্টা করবে। কিন্তু এই চেষ্টা ব্যর্থ হয় । ফলে ১৯৪৭ সালে আমেরিকা সমস্যাটি জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভায় উত্থাপন করে । জাতিপুঞ্জ সমস্যা সমাধানে ভারতীয় কূটনীতিবিদ মেনন -এর সভাপতিত্বে নয়জন সদস্য বিশিষ্ট একটি অস্থায়ী কমিশন( United nations temporary commission on Korea বা UNTCOK) গঠন করে । কোরিয়ায় শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধামে একটি জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা ও কোরিয়া থেকে বিদেশী সেনা প্রত্যাহারের দায়িত্ব এই কমিশনের হাতে দেওয়া হয় । ভারতীয় কূটনীতিবিদ কে.পি.এস মেনন এই কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন ৷
রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত উত্তর-কোরিয়ায় এই কমিশনকে কোনো কাজ করতে দেওয়া হয় নি । এরপর ১৯৪৮ সালে জাতিপুঞ্জের তত্ত্বাবধানে দক্ষিণ-কোরিয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় । এই নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ-কোরিয়ায় মার্কিন আজ্ঞাবাহক একটি সরকার গঠিত হয় । সিওল হয় এই সরকারের রাজধানী । জাতিপুঞ্জ এই সরকারকে সমগ্র কোরিয়ার একমাত্র বৈধ সরকার বলে ঘোষনা করে । এইসাথে আরো বত্রিশটি রাষ্ট্র এই সরকারকে স্বীকৃতি দেয় । এভাবে দক্ষিণ-কোরিয়া একটি মার্কিন খাঁটিতে পরিণত হতে থাকে ।
একই সময়ে উত্তর-কোরিয়ার কমিউনিস্ট নেতা কিম-উল-সুঙ্গ -এর নেতৃত্বে ও সোভিয়েত মদতে তিনি সেখানে গণতান্ত্রিক কোরিয়া ( People's Democratic republic of Korea ) নামে একটি সরকার গঠন করেন পিয়ং ইয়ং হয় এর রাজধানী । সোভিয়েত রাশিয়া এই সরকারকে স্বীকৃতি জানায় । এভাবে কোরিয়াকে কেন্দ্র করে-দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধের পরিবেশ গড়ে ওঠে । ১৯৫০ সালে ২৫ জুন উত্তর-কোরিয়ার সেনাবাহিনী ৩৮ডিগ্রী অথরেখা অতিক্রম করে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রবেশ করে দুই পক্ষের মধ্যে প্রত্যক্ষ লড়াই শুরু হয় ৷