চীনা চুক্তি ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর
ঊনবিংশ শতকে চীনে দুরবলতার সুযোগ গ্রহণ করে ব্রিটিশ, ফ্রান্স, জার্মানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি শক্তি গুলি চীনের প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ গুলি নিজেদের দেশের স্বার্থে ব্যবহার করে সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছিল ৷ প্রথম ইঙ্গ চীন যুদ্ধের পর স্বাক্ষরিত অসম চুক্তি গুলি প্রথম সন্ধি ব্যবস্থা নামে পরিচিত ৷ প্রথম ইঙ্গচিন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে চীন ব্রিটেনের সাথে চীন নানকিং চুক্তি স্বাক্ষরিত করে ৷ নানকিং শক্তির পরিপূরক হিসাবে ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটেন ও চীনের মধ্যে বোগের সন্ধি চুক্তি হয় ৷ ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ওয়াংশিয়ার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ৷ ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে চীন ও ফ্রান্সের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় ৷ ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে চীনের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স যুদ্ধ শুরু করলে সেই সুযোগে রাশিয়া চীনের সঙ্গে আগুনের সন্ধি স্বাক্ষরিত করে ৷ এইগুলি একত্রে প্রথম সন্ধি পদ্ধতি নামে পরিচিত ৷
নানকিং চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ক্যান্টন, সাংহাই, নিম্ফো এই পাঁচটি চিনা বন্দর ইউরোপীয় বণিকদের অবাধ বাণিজ্য ও বসবাসের জন্য খুলে দেওয়া হয় । এর সঙ্গে কোহং সংস্থার বণিকদের মাধ্যমে চীনের সঙ্গে ব্রিটেনদের বাণিজ্যের প্রথা বন্ধ হয় ৷ আবার ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে বোগের চুক্তির দ্বারা ব্রিটেন চিনে অতিরিক অধিকার লাভ করে ৷ এই চুক্তিতে চীনা জনগণ চীনের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শাসনব্যবস্থা ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণে আসে ৷ চুক্তির মাধ্যমে মার্কিন নাগরিকরা চীনের অতিরাষ্ট্রিক অধিকার লাভ করেন ৷ হোয়াং মেম্বার সন্ধিতে স্থির হয় ফ্রান্স চীনে অতি রাষ্ট্রের ক্ষমতা লাভ করবে এবং ফরাসি বণিকদের জন্য পাঁচটি বন্দর খুলে দেওয়া হয় ৷ আইগুনের সন্ধির দ্বারা রাশিয়া উত্তর চীনের বেশ কিছু এলাকায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে ৷
দ্বিতীয় আফিম যুদ্ধের পরবর্তীকালে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স চীনকে যুদ্ধে পরাজিত করে চীনের ওপর তিয়েনসিন চুক্তি ছাপিয়ে দেয় ৷ ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দের চীনের আরো কিছু সুযোগ-সুবিধা স্বাক্ষর করে পিকিং এর সঙ্গে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয় এগুলি দ্বিতীয় সন্ধি ব্যবস্থা নামে পরিচিত ৷ তিয়েনসিন চুক্তি দ্বারা চীনে ১০টি বন্দর বিদেশিদের কাছে উন্মুক্ত করা হয় এবং বিদেশীরা চীনে অবাধ ভ্রমণ বসবাস, খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারের অনুমতি লাভ করে ৷ আবার ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে পিকিং কনভেনশন দ্বারা চীনের কুলি ব্যবস্থা স্বীকৃতি লাভ করে ৷ এছাড়াও বিদেশীদের কাছে তিয়েনসিন সহ ১১ টি বন্দর উন্মুক্ত করা হয় ৷
১৮৫৮ থেকে ৬০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চীন বিভিন্ন পাশ্চাত্য রাষ্ট্রের সাথে অসম শর্তের ভিত্তিতে যে অপমানজনক চুক্তি গুলি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়েছিল ৷ তার ফলে চীন একটি আধা উপনিবেশিক রাষ্ট্রে পরিণত হয় ৷ ঐতিহাসিক ঈমানুয়েল সু বলেছেন,"১৮৬০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সন্ধি ব্যবস্থা মাধ্যমে প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি চীন পশ্চিমের কাছে পুরোপুরি পরাজিত ও অপমানিত হয় ৷ মাঞ্জু রাজবংশের মর্যাদায় হানি ঘটে এবং বিদেশীদের চাপের মুখে মানুষের সরকারের নির্লজ্জ আত্মসমর্পণ ১৮৫০ থেকে ৭০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মাঞ্জু বিরোধী কৃষক বিদ্রোহের পথ প্রশস্ত করে ৷