আত্মশক্তি আন্দোলন সম্পর্কে বিবরণ দাও 'বা' এই আন্দোলন এর বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা বার? 10/20
বিদেশী সাম্রাজ্যবাদীদের মৃগয়াভূমি হয়ে পড়েছিলো চিন, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন চিনারা উপলব্ধি করেছিলো চিনকে শক্তিশালী করতে হলে চিনের আধুনিকি করণের প্রয়োজনীয়তা সবথেকে জরুরী, ৷ বালক সম্রাট তুংচির রাজত্বকালে চিনে পাশ্চাত্যের অনবারণে কিছু সাংস্কার ও আধুনিকিকরণের প্রচেষ্টা হয়েছিলো ৷ কিন্তু বেশ কিছু রক্ষনশীল রাজকর্মচারী এই প্রচেষ্টাকে মানতে পারেননি, তারা চিনকে আধুনিক শিল্প দ্বারা সমৃদ্ধশালী বারার বিরোধী ছিলেন । কিন্তু তারা সঙ্গে সঙ্গে এটা অনুমান করেছিলেন যে চিনকে বিদেশীদের গ্রাম থেকে বাচাতে গেলে এবং চিনকে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রে রুন্তরিত করতে হলে চিনকে পাশ্চাত্য প্রযুক্তিবিদ্যার সাহায্য নিতে হবে ৷, তারা অনুভব করেছিলেন পাশ্চাত্য শক্তি আছেকে যে অপরাজয়ের শক্তি হিসাবে বিশ্বের দরবারে নিজেকে জাহির করেছে তার পিছনে রয়েছে প্রযুক্তি নির্ভর সামরিক শক্তি ৷ তারা এই উপলব্ধি থেকে এই সিদ্ধান্তে এসেছিলেন যে চিনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী বারার জন্য বিদেশীদের প্রযুক্তি কে ব্যবহার করতে হবে ৷ তবেই পাশ্চাত্য শক্তির আগ্রাসনকে প্রতিহত করা যাবে । এই উদ্দেশ্যে চিনের নানাস্থানে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বেশকিছু অস্ত্র কারখানা নির্মিত হয়েছিলো । সামরিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যার প্রয়োগের প্রক্রিয়াই চিনের ইতিহাসে 'আত্মশক্তি আন্দোলন' নামে পরিচিত ।
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
আত্মিশক্তি আন্দোলন শুরু হয়েছিলো তুংচি যুগে এবং চলেছিলো ১৮৯৫ সাল পর্যন্ত ৷ ওয়ে-ইউয়ান এর মতে বর্বরদের শক্তি দ্বারাই বর্বরদের পরাজিত করতে হবে । একই ধরনের বক্তব্য রবীন্দ্রনাথের রচনায় পাওয়া যায় । তিনি বলেছিলেন " ইউরোপ যে শক্তিতে পৃথিবীতে সর্ব জয়ী হয়ে উঠেছে, একমাত্র সেই শক্তি দ্বারাই তাকে ঠেকানো যায়, নইলে তার চাকার নীচে পড়তেই হবে এবং একবার পড়লে কোনো কালে আর উঠবার এক উপায় থাকে না।" ইমানু্যুয়েল শ্যু চিনের এই আত্মশক্তি আন্দোলনকে তিনটি পর্বে ভাগ করেছেন । তার মতে ১৮৬১-১৮৭২ পর্যন্ত ছিলো এই আন্দোলনের প্রথম পর্ব । ১৮৭২ থেকে ১৮৮৫ পর্যন্ত ছিলো এই আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্ব, এবং ১৮৮৫ – ১৮৯৮ পর্যন্ত ছিলো এই আন্দোলনের অন্তিম পর্ব।
১৮৬০ এর দশক ছিলো এই আন্দোলনের পটভুমি রচনার উল্লেখযোগ্য সময় । চিনকে আধুনিক রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলার এক সার্বিক প্রয়াস এই পর্বে লক্ষ্য করা গিয়েছিলো । পাশ্চাত্য শক্তিবর্গ ও চিনা রাজপুরুষেরা যৌথভাবে চিনকে আধুনিক রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলায় যত্নবান হয়েছিল । বিদেশীদের সাহায্যে এইসময় সমুদ্র শুল্ক বিভাগ পড়ে উঠেছিলো । বহিবানিজ্য থেকে এ চিন এসময় প্রচুর অর্থ পেয়েছিলো, এইসময় বিদেশীদের সাথে চিনাদের সম্পর্ক বেশ ভালো হয়েছিলো । চিনারা জাপানকে অনুসরন করতে চেয়েছিলো, জাপান আধুনিকিকরণকে বাস্তবায়িত করে উন্নতির যে চরম শিখরে উঠেছিলো । চিনাজনগণকে তাতে উৎসাহিত করেছিলো ।
পাশ্চাত্য প্রযুক্তির প্রয়োগে চিনে আধুনিক যন্ত্রপাতি নির্মানের উপর অনেক আগে থেকেই গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিলো । এক্ষেত্রে লিন-সে-স্যুর উদ্দ্যেগ বিশেষভাবে স্মরণীয়, তিনি ভারত, সিঙ্গাপুর, ম্যাকাও থেকে যেসব বিদেশি সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়েছিলো সেগুলিকে চিনাভামায় অনুবাদ করার কথা বলেছিলেন । তিনি ক্যান্টনের কমিশনার ২০০টির বেশি বিদেশি বন্দুক কিনেছিলেন, কিভাবে বন্ধুক তৈরী বারা হয় সে সম্পর্কে বই- গুলিকে অনুবাদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, লিন -সে-সুর এর মতো ওয়েই-২১ ভাষা, ইউয়ান পাশ্চাত্য সম্পর্কে অনেক তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন । চিনে বিদেশী ,বিজ্ঞান, প্রযুক্তি শিক্ষার জন্য আনক বিদ্যালয় গড়ে উঠেছিলো । বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি কেনার জন্য বিদেশে প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছিলো ৷
প্রথম পর্বে আত্মশক্তি বৃদ্ধি আন্দোলনের মধ্যে মূল বিষয় ছিলো সামরিক শক্তিকে উন্নত করা । পাশ্চাত্য শক্তির অনুকরণে 1861 সালে তিয়েন-সিনে চিনা সৈন্যদের সামরিক প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা হয়েছিলো যা পিকিং ফিল্ড ফো নামে পরিচিত । যুবরাজ কুং ও ও চিনা সামরিক পরিষদের সদস্য ওয়েন-সিয়াং সংগঠনের সাথে ছিলেন । তারা ১৮৬১ সালে একটি আগ্নেয়াস্ত্র নির্মানের কারখানা স্থাপন করেন । এই কারখানায় কার্তুজ ও গোলাবারুদ তৈরী করা হত, আবার ১৮৬২ সালে লি-হুং-চ্যাং সাংহাইতে গোলাবারুদ কারখানা স্থাপন বকরেন । ফুচাও বন্দরে একটি ছোট জাহাজ নির্মান করেখানা এখান এই কারখানার শিক্ষা প্রতিষ্ঠ নির্মিত হয়েছিলো, এখান থেকে প্রচুর জাহাজ নির্মিত হয়েছিলো । যন্ত্রপাতি এসেছিলো ফ্রান্স থেকে, এই কারখানার সঙ্গে দুটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিলো, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেখানো শেখানো হত জাহাজ নির্মান প্রযুক্তি ও ফরাসি ভাষা এবং অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেখানো হত নৌবিদ্যা ও ইংরেজিভাষা । ফুচাও বন্দরে নির্মিত এই কারখানাকে তাই আত্মশক্তি বৃদ্ধি আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক বলা চলে ৷
প্রথম পর্বে আত্মশক্তি আন্দোলনের যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান কলকারখানা নির্মিত হয়েছিলো,সেখানে গুলি বিষয় লক্ষ্য এই পর্বে বেশি পরিমানে শিল্প প্রতিষ্ঠান দালনের যেসব শিল কতগুলি সামরিক শিল্প গড়ে তোলার প্রয়াস লক্ষ্য করা যায় । শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মানের সময় বিদেশীদের সাহস্য, হয়েছিলো, কিন্তু তাদের যোগ্যতাকে বিচার হয়নি । বিদেশি হলেই এই সত্য বা এই মে তার সব বিষয়ে ঞ্জান থাকবে তা বারা ঠিক নয় বাস্তব কথাকে চিনা রাজ পুরুষ উপলব্ধি করতে পারেননি ৷ ফলে দেখা যায় পেশাগত দিক থেকে এক ডাক্তার ছিলেন হ্যালিতে ম্যাকডনি ৷ ফলে দেখা মায় ম্যাকার্টনি, তাকে নানকিং-এ অস্ত্রাগার গোত্রে তোলার দায়িত্ব দেওয়া জন্য হয় ৷ আবার ফুচত্তি তে জাহাজ নির্মান কারখানার তদারকি করার দেওয়া হয় ৷ দুজন ফরাসিকে অথচ তাদের জাহাজ নির্মানের দায়িত্ব দেওয়া কোনো পূর্ব 'অভিজ্ঞতা ছিলো না ৷ চিনে প্রতিষ্ঠিত কারখানা থেকে যেসব অস্ত্রশস্ত্র ও জাহাজ নির্মিত হয়েছিলো সেগুলি গুনগত দিক দিকে দিয়ে বিদেশীদের থেকে অনেক নিম্নমানের ছিলো । এছাড়াও আমলাতান্ত্রিক অদক্ষতা, বিদেশীদে উপর আতিরিক্ত মাত্রায় নির্ভরতা প্রথম পর্বের আত্মশক্তি বৃদ্ধির আন্দোলনকে দুর্বল করে দিয়েছিলো ৷
আত্মশক্তি বৃদ্ধির দ্বিতীয় পর্বে সামরিক ক্ষতির পরিবর্তে সম্পদ বৃদ্ধির ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে । চিনারা এখন উপলব্ধি করেছিলেন ৷ সম্পদ হল -শক্তির আসল উৎস ৷ শক্তি শালীর প্রধান শর্ত হল সম্পদ ৷ চিনারা অনুভব করেছিলেন অযুক্তি নির্ভর প্রতিংখ্যা ব্যবস্থার সুষ্ঠ অনেক বেশি, কেননা আধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও শিল্প উদ্দ্যেগের প্রয়োজন হয় ৷ 1876 সালে লি-পুর-চ্যা বলেছেন চীনে দীর্ঘস্থায়ী দূর্বলতার উৎস হল তার দরিদ্রতা, আর্থাৎ এই আত্মশক্তি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জাহাজ নির্মান,রেলপথ নির্মাণ, খাল খনন দেওয়া হয়েছিল । টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা প্রবর্তন প্রভৃতিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল।
এইসময় সরকারি উদ্যোগ যেমন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল তেমনি বেসরকারি উদ্দ্যোগে শিল্পপ্রতিষ্ঠাম গড়ে উঠেছিল ৷ বেসরকারি উদ্দ্যোগে ক্ষেত্রে সরকারের নিয়ন্ত্রন ছিল । এইটাকে বেসরকারি উদ্যোগ গুলির মধ্যে অন্যতম ছিল-চায়না মার্চেন্টস স্টিমড নেভিগেশন কোম্পানি, সাংহাই কটন ক্লথ মিলস, এবং ইম্পেরিয়াল টেলিগ্রাস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ৷ এইসব কোম্পানি গুলোর মূলধন সরবরাহকারি ছিল বেসরকারি বনিকরণ, এই কোম্পানিগুলিকেও নিয়ন্ত্রণ করত সরকারি আমলাদের , আক্ষেতা ও দূর্নীতির পরিনিতিতে এইসব শিল্প উদ্যোগ তেমনি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারেনি ৷
আত্মশক্তি বৃদ্ধি আন্দোলনের হীন পর্বে সামরিক ও শিল্প স্থাপনের উপর গুরুত্ব যেমন ছিল তেমন হালকা ও মাঝারি শিল্পের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। এই পর্বে লি-হাং-চাং এর উদ্দ্যোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও উহার প্রদেশের গর্ভনর জেনারেল এবং নানকিং -এর গর্ভনর জেনারেল লিং-ফুল-ই এর ভূমিকা উজ্জ্বল ছিল । 1889 সাথে চ্যাং চি-তুং ক্যান্টনে একটি লৌহ কারখানা স্থাপন করে, 1890 সালে ইয়েতে কয়লা খনি উত্তলন করে । 1891 সালে লি-হাং-চাং লুচাং এ কাগজের কল ও লৌই কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । 1894 সালে সরকার ও বণিকদের কারখানা গড়ে উঠেছিল ৷ এয়ার্নে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বস্ত্র কারখান স্থাপিত হয়েছিল।
সুতরাং আধুনিকীকরনের মাধ্যমে চিনকে শক্তিশালী করে তোমার সে প্রয়াস চালানো হয়েছিল আত্মশক্তি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তা কিন্তু ব্যর্থ হয় ৷ আত্মশক্তি আন্দোলন কারীরা পাশ্চাত্যের অনুকরণে চিনকে গড়তে চেয়েছেন । কিন্তু এ কাজ করতে রেখে চীনের ঐতিহ্য, রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনচর্চার আমুল সংস্কার করা দরকার ছিল । চিনাদের মনে এইে ধারনা ছিল যে, চিনা সংস্কৃতি পাশ্চাত্য সংস্কৃতি । সামাজিক কাঠামোর কোনো মৌলিক সংস্কার ভাবে পাশ্চাত্য দেশের অনুকরনে দেশের অনুকরণে না করে তারা আধুনিক শিল্পান্নত রাষ্ট্রে পরিনত গিয়েছিল পরিনতে তারা ব্যর্থ হয়ে ছিল । এই আত্মশক্তি আন্দোলন ব্যর্থ হলেও চিনের ভবিষ্যত ইতিহাসে উপর এই আন্দোলনের সুগভী প্রভাব পড়ছিল । চিনের আকাশে পরবর্তীকালে যেসব নতুন সম্ভাবনার পার ছিল তার মধ্যে অন্যতম হল এই আত্মশক্তি আন্দোলন ।