আদি মধ্যযুগের দক্ষিণ ভারতের মন্দির স্থাপত্য রীতি সম্পর্কে আলোচনা কর অথবা, দাবির শৈলী রীতি সম্পর্কে আলোচনা কর

 আদি মধ্যযুগের দক্ষিণ ভারতের মন্দির স্থাপত্য রীতি সম্পর্কে আলোচনা কর অথবা, দাবির শৈলী রীতি সম্পর্কে আলোচনা কর 


আদি মধ্যযুগের দক্ষিণ ভারতের মন্দির স্থাপত্য রীতি সম্পর্কে আলোচনা কর অথবা, দাবির শৈলী রীতি সম্পর্কে আলোচনা কর

আদি মধ্যযুগীয় কাল পর্বে বিন্ধ পর্বত এর উত্তর অঞ্চলের নাগর শ্রেণীর বিকশিত রূপ আমরা দেখতে পাই ৷ একই সময় দক্ষিণ ভারতের দ্রাবিড় শিল্প শ্রেণীর বিকাশ ও ঘটেছিল ৷ যদিও এর সূচনা হয়েছিল পশ্চিম চালুক্য এবং পল্লবদের হাত ধরে, তবে আদি মধ্যযুগের বিন্ধ পর্বতের দক্ষিণ অংশে রাষ্ট্রকূট ও চোল শাসনকালে দ্রাবিড় শিল্পরীতে বিকাশ চরম শিখরে পৌঁছায় ৷ বিন্ধ পর্বতের দক্ষিণ অঞ্চল মূলত দুটি ভাগে বিভক্ত করা যায় দাক্ষিণাত্য আর সুদৃঢ় দক্ষিণ ৷ এই দুটি অঞ্চলে এই সময় ক্ষমতাশালী ছিল রাষ্ট্রকূট এবং চোল শক্তি ৷ আলোচনার সুবিধার্থে আমরা এই পর্বতের শিল্পশৈলীকে দুটি ভাগে ভাগ করে আমরা আলোচনা করব ৷



দাক্ষিণাত্যঃ

          

                                   অষ্টম শতকের মধ্যভাগ্যের দাক্ষিণাত্যের রাজনৈতিক ক্ষমতা চালুকদের নিকট হতে রাষ্ট্রকূটদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসেন কিন্তু স্থাপত্য শৈলীর কোনোভাবেই বিঘিন্ন হয়নি ৷ রাষ্ট্রকূটদের মন্দির স্থাপত্য আলোচনা প্রসঙ্গে দাক্ষিণাত্যের মন্দির নগরী হিসেবে পরিচিত জৈন মন্দিরটির কথা বিশেষভাবে আলোচিত । এই মন্দিরটি দ্রাবিড় শ্রেণীতে নির্মিত ৷ মন্দিরটির পূর্ব মুখি হতে ত্রিস্তর বিমান উপস্থিত, পরিকল্পনাগত দিক থেকে বর্গাকৃতি কিন্তু ভিত্তি থেকে ক্রমশ উপরের দিকে উঠে পিরামিডের আকার ধারণ করেছেন ৷ নিচে রয়েছেন বর্গগৃহ এই মন্দিরটির প্রধান চারটি অংশ হল মুখমন্ডল ,মন্ডপ, ছোট অন্তরাল ও গর্ভগৃহ ৷



দ্রাবিড় শৈলী অবলম্বনে রাষ্ট্রকূটদের শাসনে নির্মিত সর্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট ধরনের মন্দির হল ইলোরার কৈলাসনাথ মন্দির ৷ সমগ্র মন্দির প্রাঙ্গণের পরিধি ৩০০ ফুট লম্বা এবং ২০০ ফুট চওড়া, বিস্ময়কর এই মন্দিরটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল  রাষ্ট্রকূট শাসক দন্তী দুর্গের আমলে এবং সমাপ্ত হয়েছিল তার উত্তরসূরী প্রথম কৃষ্ণের রাজত্বকালে ৷ দ্রাবিড় স্থাপত্যশৈলীর প্রধান চারটি বিশিষ্ট ইলোরার কৈলাসনাথ মন্দিরের পরিলক্ষিত হয় এগুলি হল বিমান, মণ্ডপ, নদীমণ্ডপ ও  গোহুরম এগুলির মধ্যে বিমান ও মন্ডপের সমন্বিত আয়তন ১৫০×১০০ ফুট এছাড়াও ২৫ ফুট উঁচু একটি উন্নত স্তম্ভ মূলতচতুষ্কোণ পীড়িকা উপস্থিত আর এর উপরের দন্ডায়মান বিমান ও মন্ডপ, মন্ডপের সমতল ছাদটিকে ধরে আছে এর চার কোণে ৷ অবস্থিত চারটি করে মোট ১৬ টি স্তম্ভ এর ফলে হলটি বিভক্ত হয়ে পড়েছে ৷ ক্রুশাকারের স্তর পরিবেশিত স্থানে মন্ডপ থেকে একটি পার্শ্ব প্রকোষ্ঠ গর্ভগৃহ এলাকার কাছে চলে গেছে । যেটি চারটি স্তরে বিন্যস্ত হয়ে ক্রমশ উপরের দিকে উঠে গেছে এবং শেষ পর্যন্ত গম্বুজাকৃতির উপাকার রূপ ধারণ করেছে ৷ সবকিছু মিলিয়ে বলা যায় ইলোরার এই কৈলাসনাথ মন্দির দ্রাবিড় স্থাপত্য রীতির এক উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে আছে ৷



সুদূর দক্ষিণঃ


মন্দির স্থাপত্যের দ্রাবিড় শৈলীর মন্দির নির্মাণের ক্ষেত্রে শুরুর দক্ষিণ ভারতের শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতা অনস্বীকার্য ৷ চোল শাসনামলে মন্দির স্থাপত্যের দ্রাবিড় শৈলী সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে ছিল চোল দের শাসনকালে নির্মিত মন্দিরগুলিকে দুটি পর্যায়ের বিভক্ত করা যায় যথা (১). আদি পর্যায় অর্থাৎ  বিজয়ালয় এর সময় থেকে 998 খ্রিস্টাব্দের রাজরাজ (the greate) এর সিংহাসন আরোহণের পূর্ব পর্যন্ত (২). পরবর্তী পর্যায়ে অর্থাৎ রাজ রাজ দ্যা গ্রেট এর পর থেকে একাদশ শতক পর্যন্ত ৷


চোল আমলে আদি পর্যায়ে নির্মিত অসংখ্য মন্দির গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল মেল মলয়ের বিজয়ালয়ের চোলেশ্বর  মন্দির ,ক রে বাল শ্রুবিমনিয়ম মন্দির, ত্রিরূক্কওলয়ের মন্দির, কুল্লমগীত্র মন্দির, ব্রহ্মপুরিশ্বর মন্দির, কুম্ভ কেমনে নাগেশ্বর স্বামী মন্দির, শ্রীনিবাস নাল্লুড়ো কুরঙ্গ নাথ মন্দির , কৌল উত্তর এর অগস্তিথর মন্দির ও চোলেশ্বরের জোড়া মন্দির এবং ত্রিরুবলিশ্বরম শিব মন্দির বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ৷ এই সমস্ত মন্দির গুলি নির্মিত হয়েছিল বিজয়ালয়, প্রথম আদিত্য প্রথম পরান্তর এবং উত্তম চোলে রাজত্বকালে ৷ নবম ও দশম শতকের এই মন্দিরগুলি ছিল পাথরে নির্মিত এবং এগুলির আয়তনে ছিল ক্ষুদ্রাকার ।


চোলদের আদি পর্বের মন্দির গুলির মধ্যে এর দাবির স্থাপত্য শৈলীর ক্রমবিকাশ লক্ষ্য করা যায় ৷ বিজয়ের চোলেশ্বর মন্দির কুলঙ্গ নাথের মন্দির এবং নাগেশ্বর স্বামীর মন্দিরে প্রথমটির গর্ভীয় বৃত্তাকার তবে শেষ দুটির বর্গাকার বর্গ গৃহের উপস্থিতি এ লক্ষ্যণীয় ৷ নাথের সমগ্র মন্দিরটির একটি মৃত্তিকার গর্ভের উপর দন্ডায়মান এর ভিত্তি স্তর এলাকা বর্ক হয়ে উল্টো পদাকৃতি নিয়েছে পদ্মাকার এই ভিত্তি থেকে দ্বিস্তর বিশিষ্ট বিমান ক্রমশ উঁচু হয়ে ওপরের দিকে উঠে গেছে । মন্দিরটির শীর্ষদেশে অবস্থিত একটি সম্প্রসারিত বর্গাকার স্তূপিকা আর এই স্তূপিকাটির চারিদিকে রয়েছে চারটি পলম্বিত কুলঙ্গি ৷


রাজরাজ দ্যা গ্রেটে এবং তার পুত্র রাজেন্দ্র চোলের রাজত্বকালে অর্থাৎ চোল সাম্রাজ্যের গৌরব উজ্জ্বল কালে দ্রাবিড় মন্দির স্থাপত্যশৈলীর উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছায় ৷ রাজা রাজা গ্রেটের আমলে ১০১০ খ্রিস্টাব্দে তাঞ্জরের নির্মিত হয়েছিল রাজ-রাজেশ্বর মন্দির ,বৃহদেশ্বর শিব মন্দির আর রাজেন্দ্র চোলের নতুন রাজধানী গঙ্গাইকুন্ড চোলপুরামে ১০২৫ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ কাজ হয়েছিল এক বিখ্যাত মন্দির যেটি তার গঙ্গা-বঙ্গ বিজয়ের সার্থক ৷


আয়তন গত দিক থেকে অর্থাৎ প্রায় ৫০০ ফুট লম্বা এবং ২৫০ ফুট চওড়া চতুর্ভূজাকারের এই বিশাল প্রাচীর দ্বারা পরিবেষ্টিত তাঞ্জরের বৃহদ্বেশ্বর মন্দিরটি দ্রাবিড় স্থাপত্যশৈলীর এক বলিষ্ঠ নিদর্শন ৷ প্রাচীর বিস্তৃত মন্দির প্রাঙ্গনে সমুখ ভাবে অর্থাৎ পূর্বদিকে দেয়াল ঘেঁষে অবস্থিত গোহুরম, এই মন্দির প্রাঙ্গণের প্রধান আকর্ষণ ৷ এছাড়াও দেবগৃহ এবং এর উপরে অবস্থিত শূচবিমান বা শিখর যার উচ্চতা প্রায় ১৯০ ফুট এই সুবিসাল বিমানটিকে তিনটি প্রধান অংশে ভাগ করা যায় যথা, অন্তর দেশ বা গর্ভগৃহ যে এলাকাকে পদক্ষেণ করে ওঠা বর্গাকার দেহভাগ 13টি ক্রমহ্রাসমান অঞ্চল বা স্তরে বিভক্ত পিরামিডাকৃতি অংশ এবং এর সর্বোচ্চ অবস্থিত গম্বুজ আকৃতি বিশিষ্ট স্তুপাকার ৷ তবে বিমানটির পিরামিড একটি অংশটিকে পল্লব স্থাপত্যের অনুকরণ বলা চলে ৷ প্রখ্যাত শিল্প বিশেষজ্ঞ পার্সি ব্রাউন তাঞ্জোরের মন্দির কে গঠন শৈলীর নিরিখে "ভারতীয় স্থাপত্যের প্রষ্ঠিপাথর বলা চলে ৷"


বিশলতা এবং দ্রাবিড় স্থাপত্যের বিচারে প্রথম রাজেন্দ্র চোলের আমলে নির্মিত গঙ্গায় কণ্ডচলপুরামের মন্দিরটি বিশেষভাবে উল্লেখ্য ৷ চতুর্ভুজ প্রকাণ্ড প্রকল্প বৈশিষ্ট্য ৩৪০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১০০ ফুট প্রশ্নের আয়তন বিশিষ্ট ৷ এই মন্দির মণ্ডপ ও বিমানের আয়তন সুবিশাল ৷ মন্ডল পূর্ব দিকের দেয়ালের মাঝখানে অবস্থিত এর প্রধান প্রবেশপথে এছাড়াও দুটি বাড়তি প্রবেশ পথ আছে এবং পদ দুটির দুপাশে রয়েছে দুটি দাম্ভিক দ্বাড় পালের মূর্তি ৷ মন্ডপটি তুলনামূলকভাবে নিচু এবং এর ছাদ সমতল , এই ছাদের সঙ্গে বিমানকে যুক্ত করেছেন একটি গলি ৷ বিমানটি পিরামিডাকৃতি সমতল বা আনভৃমিক বিচারে তাঞ্জরের মন্দিরে তুলনায় বড় হলেও উচ্চতার দিক থেকে নয় ৷ এই মন্দিরের নিচের অংশের গঠন তাঞ্জরের অনুরূপ ৷ কিন্তু পরবর্তী স্তরে তাঞ্জরের মন্দিরের নির্মাণের পরামর্শ হ্রাস মান ১৩ টি স্তরের পরিবর্তে এখানে রয়েছে মাত্র ৮ টি। 


                          ~  সমাপ্ত~

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟