মুঘল যুগে সুফি সিলসিলার বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা করো?

 মুঘল যুগে সুফি সিলসিলার বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা করো?

মুঘল যুগে সুফি সিলসিলার বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা করো?


মুঘল আমলে ধর্মীয় ক্ষেত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো মুসলিম সমাজে নতুন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উত্থান। আইন-ই- আকবরীতে এই মধ্যবর্তী উদারনৈতিক মুসলিম ধর্মানুরাগীদের মোট ১৪ টি সম্প্রদায় বা সিলসিলার কথা উল্লেখ আছে। যার মধ্যে চারটি সম্প্রদায় বা সিলসিলা অধিক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। চিশতী, সুরাবর্দি, কাদিরিয়া, নক্সবন্দী। এঁরাই ছিলেন ভারতের সুফিবাদের প্রধান প্রবক্তা।



বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সুফিসাধকরা প্রধানত ইরান, সিরিয়া, তুর্কি প্রভৃতি স্থান থেকে ভারতে আসেন। প্রথমে উত্তর ভারতে আগমন করেন। তারপর সেখান থেকে ধীরে ধীরে এর প্রসার ঘটাতে থাকেন। সুফিসাধকরা সাধারণত ধর্মীয় সংকীর্ণমনার ঊর্ধ্বে সাধারণত ধর্মীয় ছিলেন। তাঁরা জাত-পাত, জাত-পাত, জাতি-সম্প্রদায়ের জাতি-সম্প্রদায়ের ভেদাভেদ করতেন না। সবাই তাদের কাছে সমমর্যাদা পেতো। সুফিসাধকরা পুরো ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়েন এবং ধর্মপ্রচার আত্মনিয়োগ করেন।


যে সকল সুফিসাধক ধর্ম প্রচারে এসেছিলেন তাদের মধ্যে শেখ মইনুদ্দিন চিশতীর চিশতীর নাম নাম বিশেষভাবে বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তিনি ১১৯২ সালে ভারতে আসেন। আজমীরে ১১৯৫ খ্রিস্টাব্দে তার দরগা স্থাপন করেন। তাঁর সরল, ত্যাগী ও আল্লাহের প্রতি নিবেদিত জীবনবোধ বহু ভক্তের শ্রদ্ধা আকর্ষণ করে। শেখ কুতবউদ্দীন বখতিয়ার কাকী ও শেখ হামিদউদ্দীন সুফী ছিলেন তাঁর দুই প্রধান শিষ্য। বহু হিন্দু শেখ মৈনুদ্দিন চিন্তীর দরগায় শ্রদ্ধা জানাতে যেতে থাকেন। শেখ সেলিম চিন্তী ছিলেন আকবরের প্রেরণা। বাস্তবক্ষেত্রে চিন্তীবাদীরা সকল মানুষের সমান মর্যাদা ও অধিকার, সকল ধর্মের ঐক্যের কথা ও ধর্মীয় সঙ্কীর্ণতার বিরোধিতা করতেন। চিন্তীবাদী পণ্ডিতরা কোরাণ শরীফের ব্যাখ্যা রচনা করেন। চিন্তীবাদের ওপর সুফীবাদের গভীর প্রভাব ছিল।



সুরাবর্দি সম্প্রদায় শেখ শিহাবুদ্দিন ওমর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয় ১২৩৪ সালে। শেখ শিহাবুদ্দিনের ধর্ম প্রচারের মূল ক্ষেত্র ছিল সিন্ধু ও মুলতান। তিনি সুফিবাদের অন্যতম এক মহাপুরুষ ছিলেন। তিনি তার অনুগামীদের ধর্মীয় রীতি সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দিতেন। সুফিবাদের বিকাশ এবং ধর্মীয় গোঁড়ামির দূরীকরণে এবং সমাজ হতে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ বিলোপে শেখ শিহাবুদ্দিনের অবদান অনন্য। এই সম্প্রদায় রাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত এবং জাগীর ভোগ করতো। এটাই ছিল চিশতী সম্প্রদায়ের সঙ্গে পার্থক্য।



সুফিসাধকদের মধ্যে যার নাম খুবই পরিচিত তিনি : শেখ আব্দুল কাদির জিলাহ। তিনি মূলত বাগদাদে তার জিলাত কাদিরি সম্পদায় পতিষ্ঠা করেন। তিনি খবই সাধারণ অনাড়ম্বর জীবনযাপন করতেন। ইসলামের প্রচার প্রসারে নিজেকে নিয়োজিত করেন। তার প্রচেষ্টায় বাগদাদ থেকে এ সুফিবাদের বিস্তার ভারতবর্ষে চলে আসে। সৈয়দ মুকদায় জিলানী এ সম্প্রদায়কে সংঘবদ্ধ করেন। শেষ পর্যন্ত একটি গোষ্ঠী মৌলবাদী দৃষ্টি নেয় অপর গোষ্ঠী উদারপন্থী দৃষ্টি নেয়। সৈয়দ বান্দাগী মহম্মদ ঘাউত কদিরি সম্প্রদায়কে সিন্ধুদেশে প্রতিষ্ঠা করেন (১৫১৭ খ্রীঃ)। মহম্মদ ঘাউতকে কাদিরি পন্থীরা  অলৌকিক শক্তির অধিকারী বলে মনে করতেন।




নক্সবন্দি সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সৈয়দ বাহাউদ্দিন নক্সবন্দি। তিনি তুরস্ক হতে উত্তর ভারত হয়ে ভারতের পাঞ্জাবে এসে সুফিবাদের প্রচারে নিজেকে নিয়োজিত করেন। পাঞ্জাব ও কাশ্মিরে নক্সবন্দি সম্প্রদায়ের প্রভাব সবচেয়ে বেশি ছিল। তবে এখান থেকে শেখ আমেদ শিরহিন্দির নেতৃত্বে নেতৃত্বে (১৬২৪ খ্রীঃ) নক্সাবন্দী সম্প্রদায়ের প্রভাব আশেপাশের অঞ্চলেও তা ছড়িয়ে পড়ে। শেখ আহমদ শিরহিন্দি সমন্বয়বাদী, মানবপ্রেমী, ধর্ম সমন্বয় ও নীতির ঘোর বিরোধী ছিলেন।  তিনি মনে করতেন যে, এই নীতি নিলে ইসলামের মূল আদর্শ ভেঙে যাবে। তিনি ছিলেন ঘোর মৌলবাদী।




উপরের এই চারটি সূফী সিলসিলার সঙ্গে আরও বেশ কয়েকটি সম্প্রদায় যুক্ত হয়েছিল। সেগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল শেখ বদরুদ্দীন দ্বারা স্থাপিত- ফিরদৌসী  সম্প্রদায়, শাহ আবদুল্লাহ সত্তারী প্রতিষ্ঠা করেন- সাত্তারি  সম্প্রদায়, সৈয়দ মোহাম্মদ মাহদী- মাহদী সম্প্রদায় স্থাপন করেন। মিঞা বায়াজিদ আনসারী- রৌশনীয়া সম্প্রদায় স্থাপন করেন। আফগান ও পাঠান উপজাতিগুলি রৌশনিয়া আন্দোলনের প্রভাবে মুঘলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। সুন্নী ধর্মাবলম্বীদের প্রতি তারা ঘৃণা প্রকাশ করলে উলেমা সম্প্রদায়ও চটে যান। মুঘল বাহিনী এই আন্দোলন দমিয়ে দেয়।




 বহুকাল পূর্ব হতে ভারতে সুফি-সাধকদের আগমন ঘটে। সাধারণ মানুষকে ধর্মীয় সংকীর্ণতা হতে বের হয়ে আসার বাণী ও তত্ত্ব প্রচার করেন। মানুষের মাঝে ভালোবাসার বাণী এবং ঈশ্বরের বাণী প্রচারে নিজেদের ব্যাপৃত রাখেন।


তোমাকে অনেক ধন্যবাদ মুঘল যুগে সুফি সিলসিলার বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা করো? এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟