বাণিজ্যিক বিপ্লব সম্পর্কে আলোচনা কর
যদি তোমরা এটিকে ৫ নম্বর হিসাবে লিখতে চাও তাহলে প্রথম তিনটি প্যারা ও শেষের প্যারাটি দিয়ে শেষ করতে পারো ৷
সমগ্র ষোড়শ এবং শতদশ শতক জুড়ে ইউরোপ মহাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের যে বিপুল সম্প্রসারণ ঘটে তাকে ঐতিহাসিকরা বাণিজ্যিক বিপ্লব বা Commercial Revolution বলে আখ্যায়িত করে থাকেন ৷ আসলে পঞ্চদশ শতক থেকে ভৌগোলিক আবিষ্কারের হাত ধরে বহির্বিশ্ব থেকে বিপুল পরিমাণে সোনা,রুপা ও বুলিয়ান ইউরোপে প্রবেশ করে ৷ পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিস্তৃতি, নতুন বাজারের সম্প্রসারণ,ভূমধ্যসাগর,বাল্টিক অঞ্চল এবং আটলান্টিক উপকূল ধার বৃহত্তর বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে ওঠায় বাণিজ্যিক বিকাশ অত্যন্ত দৃঢ়তা লাভ করে ৷
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
এক পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় ১৪৯০ নগাথ ৭৫০ টি জাহাজ ইউরোপ থেকে পণ্য পরিবহন করত ৷ ১৫৫৭ থেকে ৫৮ তে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২১৫১ এবং এই শতকের শেষ দশকে তা পৌঁছায় ৫৫৫৪ তে ৷ ১৫০৬ সালে স্পেন থেকে আমেরিকার পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪৪৮০ টন, সেইখানে ষোড়শ শতকে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬,১৪০ টন ৷ এখান থেকেই অনুমান করা যায় যে বাণিজ্যের বিস্তার কি বিপুলভাবে বেড়েছিল ৷ আলোচ্য সময়কালে ফ্লোরেন্সের পাশাপাশি জেনোয়া , লিভোর্নো,লন্ডন ও হ্যাম্বার শহরগুলি বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল ৷
ষোড়শ শতকে এই বাণিজ্যিক বিপ্লব অবশ্য আকশ্মিক ভাবে ঘটেনি, পূর্ববর্তী কাল পর্বে প্লেগ মহামারী যা ব্ল্যাক ডেথ নামে পরিচিত ৷ এই মহামারী ইউরোপীয় জনসংখ্যার উপর মারাত্মক আঘাত আনে ৷ ইউরোপীয় বিভিন্ন অঞ্চলে জনসংখ্যা ১২ থেকে ৬০ শতাংশ কমে যায় ৷ তবে ষোড়শ শতকে প্লেগের প্রকোপ কমে গেলেও জনসংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে যা বাণিজ্য সম্প্রসারণ থেকে একান্ত আবশ্যিক ছিল ৷ ষোড়শ শতকে পণ্য দ্রব্যের উৎপাদন হার যেমন বেড়েছিল তা থেকেও ইউরোপের বাজারে অধিক মাত্রায় বেড়েছিল স্বর্ণ ও রৌপের খণ্ডের জোগাড় ৷ এর ফলে ইউরোপ মহাদেশের ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি ঘটেছিল ৷ তাই মুদ্রাস্ফীতি যেমন দ্রব্যমূল্য বিপ্লব বা price Revolution ঘটিয়েছিল অন্যদিকে তেমনি এই প্রক্রিয়া বাণিজ্যিক বিপ্লবকে ও ত্বরান্বিত করেছিল ৷
ষোড়শ শতকে ইউরোপে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে সংহতি রেখে নতুন নতুন পণ্য সমাহার পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ইউরোপে আগমন হতে থাকে ৷ যেমন কোকো আসত আমেরিকা থেকে,চীন থেকে আসতো পোর্সেলিন, পাচ্য থেকে আসতো নীল এবং নিকট দূর পাচ্য থেকে আসতে চা ও কফি ৷ তমনি ইউরোপে উৎপাদিত পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যেত ৷ আলোচ্য কাল পর্বে ইউরোপে ক্রীতদাস সংগ্রহ দ্রুতহারে বৃদ্ধি পেতে থাকে ৷ যা কাঁচামাল ও পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক হয়েছিল ৷
আলোচ্য পর্বে বাণিজ্য বিপ্লবের একটি অন্যতম কারণ ছিল মুদ্দাস্ফীতি বা 'Money economie'-র ব্যাপক প্রচলন এর ফলে কেবল শহর অঞ্চল নয় গ্রাম অঞ্চলকেও বাণিজ্যিক লেনদেনের অতিদ্রুততা লাভ করেন ৷ পূর্বের বিনিময় প্রথার পরিবর্তে নগদ লেনদেনের হঠাৎ করে বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ এর সহায়ক হয় ৷ ব্যাংকের ক্ষেত্রেও একদা ইতালিক একক কৃতিত্ব ছিল ৷ কিন্তু ক্রমাগত জার্মান,ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্সে ব্যাংকিং ব্যবস্থা অতীত দ্রুত সমৃদ্ধি লাভ করেন যা বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ এর জন্য একান্তই আবশ্যক ছিল ৷ বহু স্থানের মার্চেন্ট ব্যাংকাররাও আর্থিক লেনদেনের উদ্দেশ্যে এক্সচেঞ্জ খুলে ছিল ৷
আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে অ্যান্টওয়ার্প হয়ে ওঠে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ৷ তাই দেখা যায় ১৬১০ শতক জুড়ে ইউরোপের মহাদেশকে কেন্দ্র করে বাণিজ্যিক অর্থনীতির বিপুল নগরায়ন ঘটে ৷ ভৌগোলিক অভিযানের হাত ধরে একাধিক ভূখণ্ডের সঙ্গে ইউরোপের সংযোগ সাধিত হয় । ফলে কাঁচামাল আমদানি উৎপাদিত পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি পায় ৷ লাতিন আমেরিকায় বিপুল সোনা-রুপা ইউরোপের বাজারে আসার ফলে সেই সম্পদ বাণিজ্যিক শ্রীবৃদ্ধি সহায়ক হয় ৷ আফ্রিকা থেকে আগত ক্রীতদাসরা উৎপাদন প্রক্রিয়াকে দ্রুততা দান করে ৷ নতুন নতুন বাণিজ্যিক কেন্দ্র এবং নগরায়নের সম্প্রসারণ এটিও ইউরোপীয় বাণিজ্যিকে স্ফিত করতে সাহায্য করে ৷ পাশাপাশি ব্যাংকিং ব্যবস্থা দ্রুততা লাভ,মানি এক্সচেঞ্জ এর সুবিধা, সর্বোপরি বিনিময় প্রথার পরিবর্তে নগদ অর্থনীতির বিস্তার এই সমস্ত কিছুই ছিল বাণিজ্যের একান্তই সহায়ক শক্তি আর এই উপাদান গুলি আদর্শ সমন্বয়ের মধ্যে দিয়ে ষোড়শ-সপ্তদশ শতকে ইউরোপে সংঘটিত হয় 'Commercial Revolution' বা বাণিজ্যিক বিপ্লব ৷
