সমাজতত্ত্বের, উদ্ভবে ফরাসি বিপ্লবের গুরুত্ব আলোচনা করো। অথবা, ফরাসি বিপ্লব এবং সমাজতত্ত্বের সম্পর্ক আলোচনা কর ৷ অথবা, সমাজতত্বের উদ্ভবে ফরাসি বিপ্লব কীভাবে নেতৃত্ব দিয়েছিল
ফ্রান্সে 17৪৭ খ্রিস্টাব্দে জ্ঞানদীপ্ত ও বৌদ্ধিক চিন্তাধারার উন্মেম যে বিপ্লবের পথ সুগম করেছিল এবং যার দ্বারা গোড়া কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মীয় শাসনের অবলুপ্তি ঘটে, সামাজিক পরিবর্তনের পাশাপাশি ফরাসি সমাজ ব্যবস্থার শ্রেণিগত অসাম্য দূর হয়েছিল। তা ফরাসি বিপ্লব নামে খ্যাত । ফরাসি বিপ্লবের দ্বারা সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার অবসান এবং এক নতুন সমাজ ব্যবস্থার সূচনা হয়েছিল । এই বিপ্লবের প্রভাব ইউরোপের সীমানা ছাড়িয়ে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল ।
ফরাসি বিপ্লবের সময় ফ্রান্সে যুক্তির অবতারণা ঘটে, যা ফ্রান্সের মানুষকে ভীষনভাবে প্রভাবিত করে । সকল সামাজিক ঘটনায় যুক্তিসিদ্ধ প্রমাণে উদ্যোগী হয়ে ওঠা ঐক্য, যুক্তিতর্ক, বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তাভাবনা ও কার্যকারণ মূলক ফলাফলের যারা উদ্ভাবক ছিলেন তারা হলেন- মন্তেস্কু, রুশো, ভলতেয়ার, জন লক প্রভৃতি।
178৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে 1791 খ্রিস্টিাব্দের মধ্যে ফ্রান্সের সংবিধান পরিষদ গঠিত হয়েছিল । মূলত তৃতীয় এস্টেটের সদস্য দের নিয়ে এবং অপর দুই এস্টেটের কিছু উদারনৈতিক ব্যক্তিত্বকে নিয়ে।
প্রথমতঃ এই পরিষদ স্বৈরাচারী শাসকের অবলুপ্তি ঘটিয়ে বাক, স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিল ৷
দ্বিতীয়তঃ সাথে সাথে প্রথম ও দ্বিতীয় এস্টেট ভুক্তদের বিশেষ অধিকার বিলোপ করেছিল ৷
তৃতীয়তঃ রাজতন্ত্রের পেছনে ঐশ্বরিক মতবাদের সমর্থন করা হয়েছিল । গুরুত্বপূর্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন কার্যকর করা হয়েছিল ।
সংবিধান পরিষদে মানব অধিকার ঘোষনা করা হয় এবং বলা হয় যে আইনের দৃষ্টিতে সকল মানুষ সমান হয়ে জন্মেছে এব্য, সমান হয়েই থাকবে।
১৭৯৩ জানুয়ারি ফ্রান্সের রাজা ষোড়শ লুই কে রাষ্ট্রদ্রোহী, বিশ্বাসঘাতক অভিযোগে শিরচ্ছেদ করা হয় এবং ফ্রান্সে প্রজাতন্ত্র ঘোষিত হয় । ১৭৯৫ সালে ডাইরেক্টরেট শাসন গঠিত হয়, এই দপ্তর ৭ বছর ব্যাপী চলে । ১৮০১ সালে কী করসিকা দ্বীপে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট নামের এক সেনানায়ক এই ডাইরেক্টরেটকে বাতিল করে দেয় এবং ফ্রান্সের পরিচালন কার্যভার গ্রহণ করে । ফ্রান্সকে স্থায়ী সরকার প্রদান করে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট কর্তৃক ডাইরেক্টরেটকে বাতিল করার দ্বারা ফরাসি বিপ্লবের সমাপ্তি ঘটে । ফরাসি বিপ্লবের দ্বারা কেবল সমাজ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন নয় সমগ্র ইউরোপের পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল । যথা- রাজনৈতিক কাঠামোর পরিবর্তন, সামন্ততন্ত্রের অপসারণ, গনতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা, সামাজিক ও মানবীয় দৃষ্টিভঙ্গির উল্লেখ, সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা ও অসাম্যের অবসান । জন্মগতভাবে প্রাকৃতিক ও সামাজিক সম্পদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, যুক্তি ও কার্যকার সম্পর্কের দ্বারা বিচার বিশ্লেষণ, ধর্মের শাসনের অবসান, বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তা ভাবনার প্রতিষ্ঠার ফলে নতুন সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি তথা সমাজতত্ত্বের উদ্ভব হয় ।