দ্বি-মেরুকরণ বলতে কী বোঝ? -বর্ণনা করো।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সমগ্র বিশ্ব দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে ছিল। একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমী শক্তিবর্গের জোট সৃষ্টি হয়েছিল । অপরদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক জোট । পরোক্ষভাবে এই দ্বিমেরুকরণ সামাবাদী শক্তি এবং পুঁজিবাদী শক্তির মধ্যে ঘটেছিল । তাদের মধ্যে মিত্রতার জায়গায় এক সন্দেহের কালোছায়া প্রভাব বিস্তার করেছিল । এই সময় পৃথিবী যুদ্ধ থেকে বিরত ছিল কিন্তু পরস্পর পরস্পরকে আক্রমণ করেছিল । এই আক্রমণের প্রকৃতি ছিল বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সমাজতন্ত্রকে পশ্চিমীবর্গের হেয় প্রতিপন্ন করার আর সোভিয়েত ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স ইত্যাদি রাষ্ট্রকে পুঁজিবাদী ও নব্য সাম্রাজ্যবাদের ধারক ও বাহক হিসাবে প্রচার করেছিল ।
তবে দ্বিমেরুকরণকে নিরঙ্কুশ বলা যায় না । কারণ, এই দুই মহাজোটের বাইরের একটি তৃতীয় জোট অর্থাৎ জোট নিরপেক্ষ বা নির্জোট সংঘ গঠিত হয়েছিল । কারণ দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর যে উপনিবেশ স্বাধীনভাবে আত্মপ্রকাশ করেছিল তারা নিজোট গোষ্ঠী বলে পরিচিত ছিল । সুতরাং দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর বিশ্ব বাজনীতিতে দ্বি-মেরুকরণ ঘটেছিল এটাও ঠিক নয় । কারণ এই দুই মহাজোটের মধ্যে একটি তৃতীয় জোট গড়ে উঠেছিলি ।
প্রকৃতপক্ষে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর বিশ্বরাজনীতিতে এভাবে দ্বি-মেরুকরণ করলে। তা পরিস্থিতি বিচারে অতিসরলীকরণ বলে মনে হয়। একথাও ঠিক নয় যে কেবলমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্বরাজনীতিতে তাদের নিরঙ্কুশ আধিপত্য বজায় রাখতে পেরেছে। একারণে বলা যায় না যে, বিভিন্ন দেশে যারা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় পরাজিত হয়েছিল তারা অনেকেই অল্প সময়ের মধ্যেই নিজেদের ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিল। সেকারণে কোনো নতুন রাষ্ট্রের উত্থান যে কোনো সময়ে বিশ্বরাজনীতির এই রাজনৈতিক ভারসাম্যকে পরিবর্তন করতে পারে।
সাম্প্রতিককালের বিশ্বরাজনীতির বৈশিষ্ট্য আলোচনা করলে দেখা যায় যে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ দ্বি- মেরুকরণের বিরুদ্ধে কাজ করছে । যদি সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটেন, ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখতে সক্ষম হয়, সেক্ষেত্রে জাতিপুঞ্জও বিশ্বশান্তি বজায় রাখতে পারবে না । তথাপি একথা অনস্বীকার্য যে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ বিশ্বজনমত গঠনের দ্বারা এই দুই মহাশক্তিকে নিয়ন্ত্রিত করছে ।