ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসান কখন ও কীভাবে হয়েছিল? অথবা,কীভাবে ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসান ঘটে? আন্তর্জাতিক রাজনীতির উপর এর কীরূপ প্রভাব লক্ষ্য করা যায়?

 ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসান কখন ও কীভাবে হয়েছিল? অথবা,কীভাবে ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসান ঘটে? আন্তর্জাতিক রাজনীতির উপর এর কীরূপ প্রভাব লক্ষ্য করা যায়?


ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসান কখন ও কীভাবে হয়েছিল?


 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত রাশিয়া এবং অনুগামী রাষ্ট্রগুলির সাথে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও তার অনুগামী রাষ্ট্রগুলির মধো নানা বিষয়ে মত পার্থকা ও সন্দেহ দেখা দেয় । এসময় ইউরোপের সাম্যবাদের প্রসারকে প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র টুম্যান নীতি ও মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহন করে। ফলে বিশ্ব-রাজনীতি দুটি ভাগে ভাগ হয়ে যায় -একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রপক্ষ এবং রাশিয়া ও তার অনুগামী রাষ্ট্র। যে কোন কারনে এই উভয় শিবিরে স্নায়ু যুদ্ধ বা ঠান্ডা লড়াই চলতে থাকে। পরস্পর বিরোধী দুই শক্তি-জোটের মধ্যে যে প্রবল বিদ্বেষ ও কূটনৈতিক বিরোধ দেখা দেয়, যার ফলে যুদ্ধের একটি বাতাবরন সৃষ্টি হয়, সেই অবস্থাকে বলে ঠান্ডা লড়াই বা স্নায়ু যুদ্ধ


ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসানঃ

ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসান কখন ও কীভাবে হয়েছিল? অথবা,কীভাবে ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসান ঘটে? আন্তর্জাতিক রাজনীতির উপর এর কীরূপ প্রভাব লক্ষ্য করা যায়?


প্রায় ৫০ বছর ধরে চলা ঠান্ডা যুদ্ধের ঠিক কবে অবসান ঘটে তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে তবে 1991 খ্রিস্টাব্দে ২৬ এর ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তের সময়কে অনেকে ঠান্ডা যুদ্ধের অবসান কাল বলে উল্লেখ করেছেন কারণ এর ফলে বিশ্ব রাজনীতি এক মেরু কেন্দ্রিক হয়ে যায় । বিভিন্ন সময়ে আয়োজিত একাধিক সম্মেলনে গৃহীত প্রচেষ্টার ফসল হিসেবে ঠান্ডা লড়াই রাজনীতির অবসান ঘটে ৷


সোভিয়েত ও মার্কিন নেতৃত্বাধীন দুই জোটের মধ্যকার ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসানের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয় বেশ কয়েকটি শীর্ষ বৈঠক ৷ এক্ষেত্রে বলা যায় আয়োজিত আফগানিস্তান সংকটকে কেন্দ্র করে পরমাণু যুদ্ধ রদের আলোচনা ছিল ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসানের প্রথম পদক্ষেপ ৷ ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসানের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের উদারপন্থী রাষ্ট্রপতি মিখাইল গর্ভাচড । তিনি আন্তরিকভাবে ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসান চেয়েছিলেন । এই উদ্দেশে তিনি ১৯৮৫সালে ১৯ নভেম্বরে জেনেভাতে মার্কিন রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রেগনের সাথে অস্ত্র-প্রতিযোগিতা হ্রাসের লক্ষ্যে এক শীর্ষ বৈঠক করেন । বৈঠকটি সফল হয় ।



 ১৯৮৭ সালে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ বুশের সাথে ওয়াশিংটনে একই উদ্দেশ্যে গর্বাচভ একটি বৈঠক করেন। এই বৈঠকের ফলশ্রুতিতে স্বাক্ষরিত হয় অন্তবর্তী দূরত্বের পারমাণবিক শক্তি-হ্রাস চুক্তি। এই চুক্তির ফলে যেমন বিশ্বে নিরস্ত্রীকরণের প্রচেষ্টা অনেকাংশে সফল হয়, তেমনি ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসানে এক গুরুত্বপূর্ন অগ্রগতি ঘটে। ঐতিহাসিক হবসনের মতে, ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রকৃত অবসান ঘটেছিল ওয়াশিংটন শীর্ষ বৈঠকে।



 ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসানে ১৯৮৯ সালের ঘটনাপ্রবাহ এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহন করেছিলয। ঐ বছর বার্লিন প্রাচীর পতন হয় এবং চেকোশ্লাভাকিয়ায় কমিউনিস্ট শাসনের অবসান ঘটে । এরপর একে একে পূর্ব-ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কমিউনিস্ট পার্টির একদলীয় শাসনের অবসান ঘটে । এসব ঘটনা ঠান্ডা লড়াইকে ক্রমে অপ্রাসঙ্গিক করে তোলে।


 এরূপ পরিস্থিতিতে ১৯৮৯ সালে ডিসেম্বরে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান মাল্টায় একটি শীর্ষ সম্মেলনে বসেন । এখানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট গর্বাচভ আমেরিকাকে বন্ধু বলে স্বীকার করে নেন । এবং তার পরের বছর ১৯৯০ সালের ২জুন দুই রাষ্ট্র প্রধান গর্বাচভ ও জর্জ বুশ এক যুগ্য বিকৃত দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ঠান্ডা লড়াই-এর অবসানের ঘোষণা করেন । ১৯৯১সালে ২৫ডিসেম্বর সোভিয়েত রাষ্ট্রপতি গর্বাচভের পদত্যাগ ও পরের দিন আনুষ্ঠানিকভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের অবলুপ্তির ঘোষণাকে অনেকেই বিশে ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসান বলে মনে করেন। 


আন্তর্জাতিক রাজনীতির উপর প্রভাবঃ



সোভিয়েত রাশিয়াসহ পূর্ব ইউরোপের রাষ্ট্রগুলিতে আকস্মিকভাবে কমিউনিস্ট শাসনের অবসান ঘটনার ফলে অধিকাংশ লোকেরই ধারণা হয় যে, বিশ্ব রাজনীতির অনেক সমস্যাই অলৌকিকভাবে দূর হয়ে যাবে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রে সৌহাদ্য ও সম্প্রীতির কোনরূপ অভাব থাকবে না। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি হয়ে উঠল সম্পূর্ণ এর বিপরীত এবং অল্পদিনের মধ্যেই নতুন নতুন সমস্যা আন্তজাতিক রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আত্মপ্রকাশ করতে শুরু করে ৷


তবে রাশিয়া এবং পূর্ব ইউরোপের অন্যান্য কমিউনিস্ট দেশগুলির অবিশ্বাস্যভাবে রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে পশ্চিমের দেশগুলি আর তাদের শত্রু বলে পক্ষপাতী ছিল না। ১৯৯০ সালে আটলান্তিক চুক্তি সংস্থা এবং ওয়ারশ ট্রল দেখা চুক্তির স্বাক্ষরকারীগণ একটি নতুন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন যে, তাঁরা এখন থেকে আর পরস্পরবিরোধী নয় এবং তাঁদের সংগৃহীত কোনো অস্ত্র আত্মরক্ষা ছাড়া আর অন্য কোনো ব্যাপারে ব্যবহৃত হবে না। এভাবে প্রায় পাঁচ দশক পরে ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসান ঘটে এবং পৃথিবীর শান্তিপ্রিয় মানুষগুলি স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। কিন্তু ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসান ঘটলেও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আবার নতুন নতুন সমস্যার সৃষ্টি হতে থাকে।


সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের পর আণবিক অস্ত্র পর্যবেক্ষণের সমস্যা জটিল আকার ধারণ করে । রাশিয়ার মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও আন্তর্জাতিক পুলিশ বাহিনীর দায়িত্ব পালন করতে অস্বীকর করে । ফলে আণবিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত দায়িত্বহীন রাষ্ট্রগুলির কার্যকলাপ ও অভিসন্ধি সম্পর্কে সকলেই সন্ধিহান হয়ে ওঠে । বিশেষত ইরাক, ইরান, লিবিয়া প্রভৃতি রাষ্ট্র নানাভাবে আন্তর্জাতিক শান্তি বিঘ্নিত করে তুলতে শুরু করে । ফলে ১৯৯০ -এর দশকের আণবিক অস্ত্রশস্ত্র তত্ত্বাবধান করার সমস্যা ক্রমেই জটিল হয়ে উঠতে শুরু করে।


 রাশিয়া ও তার প্রভাবাধীন রাষ্ট্রগুলিতে আকস্মিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে সেগুলিতে অর্থনৈতিক জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়। পূর্বতন সাম্যবাদী রাষ্ট্রগুলির প্রায় প্রত্যেকটিতেই খাদ্যাভাব ছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিসপত্রের প্রবল অনটন দেখা দেয়। তাছাড়া এই সব দেশের নিয়ন্ত্রণাধীন বাজারকে মুক্ত বাজারে পরিণত করার সমস্যাও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। পশ্চিমী রাষ্ট্রগুলির কাছ থেকে তাদের প্রচুর আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজন দেখা দেয়। এরূপ সাহায্য না পেলে পূর্ব ইউরোপে রাষ্ট্রগুলির পক্ষে রাজনৈতিক স্থায়িত্ব আনয়ন করা অসম্ভব ছিল।


 পোল্যান্ডের জনসাধারণ সংযুক্ত ও শক্তিশালী জার্মানীর পুনর্গঠিত হওয়ার পর অত্যন্ত সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে। তাদের ধারণা হয় যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ওনার ও নীসে নদীর অন্তবর্তী জার্মান রাজ্যের যে অংশ পোল্যান্ডের সাথে যুক্ত হয়েছিল, সংযুক্ত জার্মানী হয়ত সে অঞ্চল আবার দাবি করতে পারে। অপরদিকে রাজনৈতিক অশান্তির ফলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে বহুলোক জার্মানীতে আশ্রয় গ্রহণ করতে শুরু করে এবং ১৯৯২ পর্যন্ত প্রায় ১৬ হাজার বাস্তুহারা প্রতি মাসে জার্মানীতে প্রবেশ করতে শুরু করে। বিদেশীদের জার্মানীতে অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে নব-নাৎসী নামে পরিচিত দক্ষিণপন্থীরা তীব্র প্রতিবাদ করে। তাদের মতে পূর্ব জার্মানীর শিল্প ও বানিজ্যের পুনর্গঠনের সমস্যায় জর্জরিত জার্মানীর পক্ষে বিদেশীদের দায়িত্ব নেওয়া কোনক্রমেই সম্ভব নয়।


 সাম্যবাদী রাষ্ট্রগুলির পতন পশ্চিম ইউরোপের রাষ্ট্রগুলি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানের সম্পর্কের মধ্যেও পরিবর্তন আনয়ন করে। সামাবাদের বিরোধীতা করার প্রয়োজনেই এতদিন পর্যন্ত এইসব বাষ্ট্রের মধ্যে রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ঐ সব রাষ্ট্রের মধ্যে নানা কারণে মতানৈকা দেখা দিতে শুরু করে। যেমন- বসনিয়ায় গৃহযুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের শাস্তিরফি বাহিনীর বায়নির্বাহের জন্য অর্থ প্রদান করতে অস্বীকার করলে পশ্চিম ইউরোপের রাষ্ট্রগুলির সাথে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে।


About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟