জেনেভা সম্মেলন সম্পর্কে আলোচনা কর
জেনেভা সম্মেলন (১৯৫৪ সাল)• ১৯৫৪ সালের মে মাসের জেনেভা সম্মেলনে ব্রিটেন, ফ্রান্স যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, উত্তর কোরিয়া, লালচীন, ভিয়েৎমিন ও ভিয়েতনামের প্রতিনিধিগণ মিলিত হয়ে দূর প্রাচ্যের বিশেষত কোরিয়া ও ভিয়েতনামের সমস্যাগুলির সমাধান করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কমিউনিষ্ট প্রতিনিধিবর্গ গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে কোরিয়ার সংযুক্তিকরণে আপত্তি করিলে ও ইন্দোচীনে দক্ষিণ ভিয়েতনামকে কোনরূপ সুবিধা দিতে অস্বীকার করলে এই সম্মেলন ব্যর্থ হয়।
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
কোরিয়া ও ইন্দোচীনে যুদ্ধের উদাহরণ হইতে শিক্ষালাভ করে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তার জন্য এবং প্রশান্ত মহাসাগরে স্বীয় প্রাধান্য রক্ষা করার জন্য ১৯৫৫ সনের ২৩শে ফেব্রুয়ারী বৃটেন, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ও ফিলিপাইনকে নিয়ে, "দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সন্ধিসংস্থা” নামে একটি মিত্রগোষ্ঠীর সৃষ্টি করে।
এদিকে ১৯৫৩ সনের জানুয়ারী মাসে সেনাপতি আইসেনহাওয়ার যুক্ত-রাষ্ট্রের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ৫ই মার্চ ষ্ট্যালিনের মৃত্যু হইলে ম্যালেন-কভ রাশিয়ার প্রধান মন্ত্রিরূপে নিযুক্ত হন । এই দুই নবনির্বাচিত রাষ্ট্র-নায়কের শান্তিপূর্ণ ঘোষণার ফলে অনেকেরই মনে হয়েছিল যে ঠাণ্ডাযুদ্ধের অবসান ঘটিবে । কিন্তু এই আশা সফল হয়নি । N. A. Τ. Ο. (North Atlantic Treaty Organisation) ও S. E. A. T. O. (South East Asiatic Treaty Organisation)-এর প্রত্যুত্তর স্বরূপ ১৯৫৫ সনের ১৪ই মে ৮টি পূর্ব ইয়োরোপীয় কমিউনিষ্ট রাষ্ট্রের মধ্যে "পূর্ব ইউরোপীয় সন্ধি সংস্থা" নামে একটি মিত্র গোষ্ঠির সৃষ্টি হয় । আলবেনিয়া, বুলগেরিয়া, চেকোশ্লভাকিয়া, পূর্বজার্মানী, পোল্যান্ড, রুমানীয় ও রাশিয়া পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে মিলিত হয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা-মূলক একটি মৈত্রীচুক্তিতে আবদ্ধ হয়।
মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমী শক্তিগোষ্ঠীকে কমিউনিষ্ট প্রভাব ও আরব জাতীয়তা-বাদের সম্মুখীন হইতে হয়। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম রাষ্ট্রগুলির জনসাধারণ দরিদ্রও অনুন্নত হইলেও তাহাদের চিরাচরিত ধর্মপরানয়তার জন্য এই অঞ্চলে কমিউনিষ্ট প্রভাব বিস্তারলাভ করিতে পারে নাই। ১৯৫৫ সনের নভেম্বর মাসে ইরাক ও ইরাণ যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় বৃটেন, পাকিস্তান ও তুরস্কের সহিত মৈত্রী সম্পাদন করিয়া "মধ্যপ্রাচ্য সন্ধি সংস্থা" নামক একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থার সৃষ্টি করে। এই চুক্তি বাগদাদ চুক্তি নামেও পরিচিত। মধ্যপ্রাচ্যের নেতৃত্বকামী মিশর বাগদাদ চুক্তির প্রতিদ্বন্দ্বীরূপে আরবলীগকে শক্তিশালী করিতে চেষ্টা করে। কিন্তু এই চেষ্ট। সম্পূর্ণ সফল হয় নাই। কেবলমাত্র সৌদি আরাবিয়া ও ইয়েমেন মিশরকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করিতে থাকে। ১৯৫৮ সনের জুলাইমাসে একটি সামরিক বিদ্রোহের ফলে ইরাকে রাজস্ত্র লোপ পায় এবং সেনাপতি কাসেম শাসনকর্তৃত্ব লাভ করেন। ১৯৫৯ সনের মার্চমাসে ইরাক বাগদাদ চুক্তি ত্যাগ করিলে ইহাকে 'কেন্দ্রপ্রাচ্য জাতি গুলির সন্ধি সংস্থা, (Cento) নামে অভিহিত করা হয়।
ইন্দোনেশিয়ার সরকার ডাচ নিউগিনি হইতে ওলন্দাজদিগকে বিতাড়িত করিবার জন্য অনেক চেষ্টা করিয়া ব্যর্থ হইয়াছে। যুক্তরাষ্ট্র এই বিষয়ে রাষ্ট্রসংঘে হল্যান্ডকে সমর্থন করিয়া আসিতেছে। এদিকে কমিউনিষ্টচীন ইহার ভূখণ্ডের নিকটবর্তী মাংসু ও কুয়েময় দ্বীপগুলি চিয়াং কাইশেকের হাত হইতে উদ্ধার করিবার জন্য ১৯৫৫ সন হইতে চেষ্টা করিতেছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের ফলে এই চেষ্টা সফল হয় নাই।