মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা কী?
ভারতে ক্ষমতা হস্তান্তরের কাজ দ্রুত সম্প্রসারণ করার জন্য। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট লর্ড ওয়াভেল-এর জায়গায় লর্ড মাউন্ট ব্যাটেনকে ভাইসরয় নিয়োগ করে ভারতে পাঠান ১৯৪৭ আলের ২২ শে মার্চ । লর্ড মাউন্টব্যাটেনের প্রথম দিকে লক্ষ্য ছিল অখন্ড ভারত। তাই তিনি ২৪ শে মার্চ থেকে ৬ই মে এর ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ১৩৩টি বৈঠক করে। কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি বুঝতে পারেন যে, ভারত বিভাগ ছাড়া ভারতীয় সমস্যার কোনো সমাধান নেই । যদি এই কাজে দেরি হয় পাঞ্জাব বাংলা সহ ভারতের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়বে ৷ এই আশঙ্কা করে তিনি ইংল্যান্ডে মান এবং ব্রিটিশ সরকারের অনুমোদন নিয়ে ৩ রা জুন ভারত বিভাগের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে । তিনি জানান সম্ভবত ১৫ই আগস্টের মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তরের কাজ সম্পন্ন হবে। মাউন্টব্যাটেনের এই পরিকল্পনী মাউন্টব্যাটেন প্রস্তার নামে পরিচিত ।
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
মাউন্টব্যাটেনের প্রস্তাবে বলা হয়
- ভারতবর্ষকে বিভক্ত করে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্র গড়ে তোলা হবে।
- মুসলমান প্রধান প্রদেশ সিন্ধু, বালুচিস্তান, উত্তর সীমান্ত প্রদেশ; পশ্চিম পাঞ্জাব ও পূর্ব বাংলা নিয়ে পাকিস্তান গঠিত হবে।
- পাঞ্জাব ও বাংলাকে বিভক্ত করে কোন আঞ্চলকে কোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত করা হলে তার জন্য একটি সীমানা নির্ধারণ কমিশন গঠন করা হবে ।
- দেশীয় রাজ্যগুলি ইচ্ছা করলে যে কোনো ডোমিনিয়ানে মুক্ত হতে পারবে।
- যতদিন না পর্যন্ত সংবিধান রচিত হচ্ছে ততদিন সরকার কর্তৃক নিযুক্ত একজন গভর্নর ওই ডোমিনিয়ানে শাসনে থাকবে ।
- আসামের শ্রীহট্ট জেলা কোন ডোমিনিয়ানের সঙ্গে যুক্ত হবে তা গণভোটে স্থির হবে
- দেশীয় রাজ্যগুলির নিজ নিজ রাজ্যে সার্বভৌম ক্ষম ক্ষমতা লাভ করবে এবং ইচ্ছা করলে তারা যেকোন ডোমিনিয়নে যোগ দিতে পারবে
- প্রতি ডোমিনিয়ন এর নির্বাচিত গণপরিষদ নিজ এলাকায় সংবিধান রচনা করবে
- যতদিন না সংবিধান রচিত হচ্ছে ততদিন ব্রিটিশ সরকার কর্তৃত্ব নিযুক্ত একজন গভর্নর জেনারেল ওই ডোমিনিয়নের শাসনে থাকবেন।
- স্বাধীনতা লাভের পর ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কোন আইন ওই দুই ডোমিনিয়ন এর বলবৎ থাকবে না অতি ডোমিনিয়নের নির্বাচিত আইনসভার নিজ নিজ দেশের জন্য আইন রচনা করবে
লর্ড মাউন্টব্যাটেন প্রায় দেড় মাসের মধ্যে গান্ধিজী, জহরলাল নেহেরু, প্যাটেল, জিন্না এবং দেশীয় রাজাদের সঙ্গে প্রশ্ন ১৩৩ টি বৈঠকে বসে ভারত নিভাজন আটকানোর জন্য কিন্তু, তিনি ব্যর্থ হন । জিন্নার সঙ্গে কথা বলার পর তিনি বুঝতে পারেন যে জিন্ন কখনোই পাকিস্তান প্রস্তাব থেকে ফিরে আসবে না । গান্ধিজীত প্রথম দিকে মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন । অবশ্য পরে তিনি বুঝতে পারেন যে দেশভাগ সাম্পদায়িক দাঙ্গা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে । সর্দার বল্লব ভাই প্যাটেলও মনে করেন যে, ভারত ভাগ কংগ্রেসের পরাজয় নয় । বরং তৎকালীন পরিস্থিতিতে দেশ ভাগই ছিল সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ । সুতরাং বলা যায় যে, মাউন্টব্যাটেন রিকল্পনার ফলে ভারতীয়রা ব্রিটিশদের হাত থেকে মুক্তি পেল ঠিকই কিন্তু ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে একটি হল -পাকিস্তান অপরাটি ভারত । যেটি ছিল ভারতের ইতিহাসে দুঃখময় ও কলঙ্কজনক ঘটনা।
মান 5 হলে এখান পর্যন্ত লিখতে হবে ৷ অতিরিক্ত ঞ্জানের জন্য পড়তে পারেন ৷
মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা ও ভারতীয় নেতাদের প্রতিক্রিয়াঃ
- মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা বিরোধিতা করেছিলেন ভারতের বিভিন্ন দল ও সম্প্রদায়ের নেত্রী বর্গ ৷ যেমন:-
- জহরলাল নেহেরু এক নেতার ভাষনে আক্ষেপের সুরে বলেন," আমি এই প্রস্তাব হৃদয়ের কোন আনন্দের সঙ্গে তুলছি না। যদিও এ বিষয়ে আমার মনে কোন সংশয় নেই একটি হলো শ্রেষ্ঠ বিকল্প।"
- মহাত্মা গান্ধীর মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন আমি স্পষ্ট রূপে দেখতে পাচ্ছি সমস্যা সমাধানের পক্ষে আমরা ভুলভাবে এগোচ্ছি ৷
- মৌলানা আবুল কালাম আজাদ এই পরিকল্পনা মেনে দেশভাগ হলে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন," দেশভাগ হল এক দৈব দুর্বিপাক ৷"
- মোহাম্মদ আলী জিন্না বলেন মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা ঘোষিত পাকিস্তান আসলে বিকলাঙ্গ ও কিটদগ্ধ ৷
সম্ভাব্য প্রশ্নঃ
- মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা কি ? এই পরিকল্পনার মাধ্যমে কিভাবে ভারত বিভাগ করা হয়েছিল ?
- মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনার মূল বিষয় কি ছিল? এই পরিকল্পনার ফল কি হয়েছিল ?
- মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা কি ? এই পরিকল্পনার বিষয়ে ভারতীয় নেতাদের প্রতিক্রিয়া কি ছিল ?
- মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা কি ? এই পরিকল্পনায় বিষয়ে ভারতের নেতৃবৃন্দের কি মনোভাব ছিল ?