মুসলিম লীগ উদ্ভবের প্রেক্ষাপট আলোচনা কর? সাম্প্রদায়িক রাজনীতির উদ্ভবে মুসলিম লীগের ভূমিকা কি ছিল ? অথবা, মুসলিম সাম্প্রদায়িকতা উদ্ভবের প্রেক্ষাপট আলোচনা কর। মুসলিম বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপে মুসলিম লীগের ভূমিকা আলোচনা কর
রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা কে বাংলা তথা ভারতবর্ষের ইতিহাসে শুধুমাত্র একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশের ঘটনা বলে বিবেচনা করা যাবে না । এই দল প্রতিষ্ঠার সাথে ভারতে ভারত ইতিহাসে ভবিষ্যতে এক নতুন ধারায় প্রভাবিত হয়েছিল । জাতীয় কংগ্রেসে নরমপন্থী ও চরমপন্থী নেত্রী বর্গ যখন নীতি নির্ধারণের প্রশ্নে আপোষহীন তখন মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে এক স্বতন্ত্র জাতিসত্তা তথ্য দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করেছে ৷ প্রসঙ্গত স্মরণীয় মুসলিম শাসনকালে হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে যথেষ্ট প্রেমপ্রীতি বজায় ছিল ৷ এমনকি মহাবিদ্রোহের ফলে হিন্দু-মুসলিম মিলিতভাবে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে ৷ কিন্তু ঘটনাচক্রে আর্থসামাজিক অবস্থাগত বৈষম্য এই দুই সম্প্রদায়কে পরস্পরে থেকে ক্রমশ দূরে সরিয়ে দিতে থাকে ৷ আর এই পরিস্থিতিতেই বেশ কিছু মুসলিম নেতৃবৃন্দ নিজেদের স্বার্থ সুরক্ষিত করার জন্য ঢাকায় মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেনি ৷
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
১৮৫৭ সালে মহাবিদ্রোহের সময় হিন্দু-মুসলমান এই দুই সম্পদায়ের মানুষই ঐক্যবদ্ধভাবে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রাম চালিয়েছিলেন এবং ব্রিটিশ সরকার দেশের মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ মূলক মনোভাব গ্রহণ করেছিলেন ও শুধুমাত্র দিল্লিতেই ২৭ হাজার মুসলমানকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল ৷ কিন্তু ১৮৭০ এর দশক থেকে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটে, ব্রিটিশ সরকার বুঝতে পারে যে ভারতে হিন্দু মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষ যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে অবতীর্ণ হয় তবে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে ৷ ব্রিটিশ সরকার ভারতে ব্রিটিশ শাসন অটুট রাখবার জন্য জাতীয়তাবাদীআন্দোলনকে দুর্বল করতে সচেষ্ট হয়েছিল । হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ছিল ব্রিটিশ পরিপন্থী ৷ এই জন্য সরকার বিভাজন ও শাসন নীতি প্রয়েগ করে ৷ এরই সাথে মুসলিমদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের বিরোধীতার জন্য তাদের মধে স্বাতন্তবোধ জাগ্রত করতে সচেষ্ট হয় । আর ব্রিটিশ কর্মসূচি কে ফলিত রূপ দিতে সাহায্য করেছিলেন আলীগড় আন্দোলনের প্রবক্তা স্যার সৈয়দ আহমেদ ৷
১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক পর্বে হিন্দু মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের নেতারা প্রশংসনীয় ধর্মনিরপেক্ষ তার পরিচয় দিয়েছিলেন ৷ বদরুদ্দীন তোয়েবজির আঞ্জুমান গঠনে এবং আইন পরিষদের রহমাতুল সায়নীর নির্বাচনে হিন্দু ও পার্সিরা ও প্রচুর পরিমাণে সাহায্য করেছিলেন ৷ তা সত্ত্বেও মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষকে কংগ্রেসের পতকাতালে আনা সম্ভব হয়নি ৷ এক্ষেত্রে আলীগড় আন্দোলনের প্রবক্তা সৈয়দ আহমেদ খানের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল ৷ তিনি শিক্ষিত মুসলমানদের ব্রিটিশ রাজের সহযোগিতায় ভূমিকায় প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন ৷ বিভিন্ন বক্তৃতায় তিনি প্রকাশ্যে প্রচার করেন যে কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের প্রতিষ্ঠান তাই এই প্রতিষ্ঠান মুসলিমদের বর্জন করা উচিত ৷ অমলেশ ত্রিপাঠি বলেছেন মিরাটে পদও একটি ভাষণের সৈয়দ আহমেদ খানই প্রথম দ্বিজাতি তত্ত্বের উদ্ভব করেন ৷ আর সৈয়দ আহমেদ খানের ওই মানসিকতার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে চেয়ে সরকার ১৮৯২ এর ক্রস এক প্রণয়ন করেন যার মধ্য দিয়ে ভারতীয় রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক প্রতিনিধিত্বের প্রতিনিতি প্রবর্তিত হয় ৷
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী স্বদেশী আন্দোলনের প্রবল উন্মাদনার মধ্যে হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়ের ভাটোল সামরিকভাবে চাপা পড়ে যায় ৷ মহম্মদ ইউসুফ, লিয়াকত হোসেন, আব্দুল রসূল, আব্দুল হালিম ওমুখ মুসলিম নেতারা স্বদেশী আদর্শ অনুপ্রাণিত হয়ে স্বদেশী আন্দোলনের সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন ৷ এমত অবস্থায় কার্জন ভ্যালেন্টাইন চিরল প্রমুখরা পরবর্তী বড়লাট লট মিন্টোকে সতর্ক করেছিলেন ৷ হিন্দু-মুসলিম ঐক্য সম্পর্কে আসামের গভর্নর স্যার ব্যামফিল্ড ফুলার মুসলিমদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগের খোলাখুলি সমর্থন হিন্দুদের বিরাটভাজন ও মুসলিম সম্প্রদায় থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল ৷ ত্রিপাঠি লিখেছেন মুসলমানদের রা কুলারের কাছে প্রায় সুয়োরানীর আদর পেতে আরম্ভ করেছিল আসলে এই সবই ছিল সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকারের বিভেদ নীতির পদক্ষেপ যা সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জন্মের প্রেক্ষাপট রচনা করে ৷
১৯০৬ সালে বাজেট বক্তৃতায় ভারত সচিব মূল্যের বক্তব্য মুসলিম নেতাদের উৎকণ্ঠা বৃদ্ধি করেছিল ৷ ১৯৯২ সাল থেকে উৎকণ্ঠের মুসলিম নেতারা বুঝেছিল ব্রিটিশ সরকার তাদের প্রতি সহানুভূতিশীন ৷ আলীগড় কলেজের সম্পাদক সৈয়দ আহমেদ খানের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী মহসিন উৎমূলক কলেজের অধ্যক্ষ আজবোর্ডকে ১৯০৬ সালের ৪ঠা আগস্ট স্মৃতির মাধ্যমে জানান তরুণ প্রজন্মের শিক্ষিত মুসলিমরা কংগ্রেসের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে উঠছেন ৷ যেমন হযরত শাহানী, মোহাম্মদ আলী এবং জাফর আলী খান এসব উৎকণ্ঠা থেকে মুক্তি পেতে মহসিন উৎমূলক মিন্টোর কাছে প্রতিনিধি দল পাঠাতে উদ্যোগী ছিলেন ৷ এই সমস্ত উচ্চ বর্গীয় মুসলমানদের ভাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন আজবোর্ড ৷ তিনি ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছিলেন ৷
১৯০৬ সালের ১ লা অক্টোবর মুসলিমদের একটি প্রতিনিধি দল সিমলাতে ভাইসরয় মিন্টো সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং ডিপুটেশন দেয় এই ডেপুটেশনের সিমলা ডেপুটেশন নামে পরিচিত ৷ ৩৫ জন সদস্য বিশিষ্ট এই প্রতিনিধি দলের সভাপতি ছিলেন আগাখা ৷ এই ডেপুটেশন সাম্প্রদায়িক ও রাজভক্ত মুসলমানদের জন্য সরকারি অনুকূল প্রার্থনা করেছিল ৷ শিমলা ডেপুটেশনের মূল বক্তব্য ছিল তিনটি যথা (১). ধর্মের ভিত্তিতে মুসলমান সম্প্রদায়ের আইনসভায় নির্বাচন (২). এই নির্বাচন আনুপাতিক হারে হবেনা প্রাচ্য আসন ছাড়াও তাদের অতিরিক্ত আসন দিতে হবে এবং (৩). প্রতিনিধি দল মুসলমানদের জন্য যে আলাদা নির্বাচন মন্ডলী দাবি তুলেছিল তা জমিদার,আইনজীবী, ব্যবসায়ী বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক এবং জেলা ইউনিয়ন বোর্ডের সদস্যদের নিয়ে গঠন করায়ছিল তাদের ইচ্ছা । লক্ষণীয় এদের মধ্যে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মুসলমানদের কোন স্থান ছিল না । মিন্টোর সহানুভূতি থাকা সত্ত্বেও সিমলা ডেপুটেশন উদ্দেশ্য সাধনে ব্যর্থ হয় ।
এমত অবস্থায় ঢাকার নবাব সেলিম উল্লাহ ও ভারতের বিভিন্ন স্থানে মুসলিমদের একটি সর্বভারতীয় সংগঠন গড়ে তোলার জন্য প্রচেষ্টা চালায় ৷ সারা ভারত মুসলিম লীগ গঠনের প্রেক্ষাপট তৈরি হয় এদিকে তরুণ মুসলিম প্রজন্মের খুব সঞ্চালিত হতে থাকে এবং বিকল্প কংগ্রেসি প্রতিষ্ঠানের দাবি জোরদার হয়ে ওঠে আমির আলী তার "Nineten Century" পত্রিকায় মুসলমানদের একটি পৃথক রাজনৈতিক সংগঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা লিখেন ৷ অবশেষে ১৯০৬ সালে ৩০শে ডিসেম্বর ভিখার-উল-মূলকের সভাপতিতে ঢাকাতে মুসলিম সম্প্রদায়ের সম্মেলন বসে । অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ একটি সর্বভারতীয় মুসলিম সংগঠন তৈরি হয় । এক কথায় এই সংগঠনটি ছিল রাজভুক্ত উচ্চ বর্গের মুসলিমদের সংগঠন । এই সংগঠন তথা মুসলিম লীগের কতগুলি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঘোষিত হয় ৷ যথা - (১). ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আনুগত্য অন্য রক্ষা (২). ভারতীয় মুসলমানদের রাজনৈতিক স্বার্থ ও অধিকার গুলি সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ (৩). লীগের অন্যান্য উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বিভিন্ন না করে অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলির প্রতি সদ্ভব ও সম্প্রীতি বজায় রাখা (৪). জাতীয় কংগ্রেসের প্রভাব প্রতিপাদ্য খর্ব করা ইত্যাদি ৷
10 marks
এহন মুসলিম বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজনীতির উত্থানের পশ্চাতে হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতাদের বিশেষত চরমপন্থী নেতাদের ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না ৷ বাংলায় অরবিন্দ ঘোষ, বিপিন পালের নেতৃত্বে ব্রিটিশ বিরোধী চরমপন্থী আন্দোলনের প্রেরণা জুগিয়েছিল কালী বা দুর্গার প্রতি মূর্তি ৷ অন্যদিকে মহারাষ্ট্রের তিলক Age of concentent bill (১৮৯০-৯১) বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সোচ্চার হোন ৷ তখন হিন্দুত্বের সবচেয়ে প্রতিক্রিয়াশীল দাবি গুলি তার কন্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল ৷ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সঙ্গে উগ্র হিন্দু হিন্দুত্বের মেলবন্ধন ঘটানোর জন্য তিনি গো-রক্ষা সমিতি গড়ে তোলেন ,গণপতি শিবাজী উৎসব সংগঠিত করেন ৷ পাঞ্জাবের লারা রাজপথ রায় প্রকাশ্যে বলেছিলেন জাতীয় আন্দোলন হিন্দুদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত ৷ স্বাভাবিকভাবে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ চরমপন্থী জাতীয়তাবাদীদের সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করেন ৷
সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক উদ্ভবের পাশ্চাত্যে একটি বিশেষ উপাদান ছিল ৷ শিক্ষিত তরুণ মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে অসফল্য ও ব্যর্থতা জনিত হতাশা । কলকাতাতে হিন্দুরা সরকারি চাকরিতে একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রেখেছিল ৷ পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হবার কারণে অন্যদিকে গ্রাম্য মুসলিমরা অধিকাংশই ছিল অশিক্ষিত এবং কৃষক সম্প্রদায় ৷ ঢাকা কেন্দ্রিক শহরে মুসলিম দ্বারা পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত ছিল তারা ছিল মূলত অভিজাত ভূস্বামী সম্প্রদায় ৷ নিম্নবর্গীয় মুসলিমদের সঙ্গে সেই অর্থে তাদের কোন সম্পর্ক ছিল না ৷ স্বদেশী আন্দোলনে চরমপন্থী রাজনীতির যত জোরদার হতে থাকে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে সংহতি বৃদ্ধি পায় । অন্যদিকে মুসলমানরাও হীন বলে গণ্য হতে থাকে ৷
এমত অবস্থায় মুসলমানরাও তাদের সাম্প্রদায়িক সত্তা অস্বীকার করার চেষ্টা চালায় তাদের কল্পিত ও অতীত ধর্মের ভিত্তিতে আবার মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র শ্রেণী বিভাজন ছিল ৷ একদিকে ছিল আশরাফ এবং অন্যদিকে আজলফ বা আতরফ এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংস্কৃতি পার্থক্য ছিল যথেষ্ট ৷ একদল উর্দুভাষী অন্যদিকে আতরফরা ছিল মূলত গ্রাম্য বাংলাভাষী ৷ মুসলমান যাদের উচ্চকোঠির মুসলমানরা হীন চোখে দেখতো ৷
স্বদেশী আন্দোলনের সময় বাংলায় সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি অবনমনের পিছনে দুই সম্প্রদায়ের মানুষের শ্রেণীগত অবস্থান কাজ করেছিল ৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভূস্বামীরা, জমিদাররা ছিলেন হিন্দু আর কৃষকরা ছিল মুসলমান ৷ যেহেতু জমিদারদের বিরুদ্ধে তাদের ন্যায় দাবি নিয়ে আন্দোলন করতেন তখন সরকারের তরফ থেকে সেগুলিকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল ৷ সাধারণ মুসলমানদের বিশেষ করে বিরুপ করে তুলেছিল হিন্দু জমিদার বা তাদের নায়েব, গোমস্তাদের এবং মারোয়ারির মহাজন ব্যবসায়ীদের চিরাচরিত নিপীড়ন ৷ ১৯০৬ -০৭ সাল নাগাদ কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ কৃষকদের খুব দাঙ্গায় পরিণত হয়েছিল ৷ তাদের আক্রমণের লক্ষ্য ছিল হিন্দু জমিদার ও মহাজনরা যারা প্রতিমা পূজায় মুসলিম প্রজাদের উপর কর চাপিয়েছিল ৷ দরিদ্র মুসলমানরা ঋণপত্রগুলি ছিঁড়ে ফেলেছিলেন এবং বহু ক্ষেত্রেও তারা হিন্দু প্রজাদের সমর্থন পেয়েছিলেন ৷
এই পরিস্থিতিতে মুসলমান মৌলিরা নবাব সাহেবের সুবিচার নামে একটি প্রচার পুস্তিকা পূর্ববঙ্গের গ্রামের বিলি করেছিলেন যেখানে বলা হয়েছিল যে নবাব সলিমুল্লাহ শীঘ্রই দরিদ্র মুসলমানদের ভূমিকা অবতীর্ণ হবেন ৷ আবার গ্রামাঞ্চলের জোর করে বয়কট চালু করতে গিয়ে দলিত মুসলমানদের বিরোধী করে তুলেছিলেন হিন্দু নেতারা ৷ এদেশের মিলের তৈরি চালু করার জন্য দরিদ্রদের নাগাল থেকে সস্তা বিলাতি বস্ত্র সরিয়ে নেওয়ার ফলে তাদের স্বার্থপূরণ হয়নি ৷ অন্যদিকে বহু দরিদ্র মুসলমান বাজারে এলাকায় বিলাতি পণ্য বিক্রয় করে জীবিকা নির্বাহ করতেন বলপূর্বক বিদেশি পণ্য বয়কট সংক্রান্ত পদক্ষেপ দরিদ্র মুসলমানদের স্বার্থ কিভাবে বিচ্ছিন্ন করেছিল তার বিবরণ রবীন্দ্রনাথের ঘরে বাইরে উপন্যাসে পাওয়া যায় ৷ এই অনৈক্য ও বিভেদদের সুযোগ নিয়েছিলেন ব্রিটিশ সরকার ৷
উপরিক্ত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে মুসলিম বিচ্ছিন্নতাবোধের জন্ম হয়েছিল যার পরিণতি ছিল ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা ৷ দরিদ্র মুসলমানদের ক্ষোভকে কাজে লাগালেও এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণের আগ্রহী ছিলেন না মুসলিম লীগ ছিল মূলত বাংলা উত্তর প্রদেশের একদলীয় ভূস্বামি, সামন্ত প্রভুর স্বার্থে পরিচালিত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী সহযোগী একটি সংগঠন । ইংরেজ শাসকেরা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দুর্বল করার জন্য একদল উচ্চবিত্ত রাজন্যগত মুসলমানকে বেছে নিয়েছিলেন এবং মুসলিম লিগ তৈরি করতে সাহায্য করেছিলেন ৷ যদি পরবর্তীকালে এই মুসলিম লীগ হয়ে উঠেছিল মহম্মদ আলী জিন্নাহ ও দ্বিরাষ্ট্র তত্ত্বের অন্যতম অস্ত্র ।
সম্ভাব্য প্রশ্নঃ
- সর্বভারতীয় মুসলীম লিগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি আলোচনা করো।
- মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে আলোচনা কর লিগ প্রতিষ্ঠার পর প্রথমদিকে ব্রিটিশ সরকারের কাছে লীগের সম্পর্ক কিরূপ ছিল?
তোমাকে অনেক ধন্যবাদ মুসলিম লীগ উদ্ভবের প্রেক্ষাপট আলোচনা কর? সাম্প্রদায়িক রাজনীতির উদ্ভবে মুসলিম লীগের ভূমিকা কি ছিল ? এই নোটটি পড়ার জন্য