ঋগ্‌বৈদিক যুগে বর্ণ ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো। Caste system in the Rigvedic period

ঋগ্‌বৈদিক যুগে বর্ণ ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো।

 ঋগ্‌বৈদিক যুগে বর্ণ ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো।

ঋগ্‌বৈদিক যুগে বর্ণ ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো।


 সিন্ধু সভ্যতা ধ্বংসের পর ভারতে যে সভ্যতার উদ্ভব হয় তার নাম বৈদিক জয়া। বেদকে ভিত্তি করে এই সভ্যতা গড়ে ওঠে বলে এর নাম বৈদিক সভ্যতা। এই সারার অক্টাদের আর্য বলা হয়। খাঁটি সংস্কৃত শব্দে 'আর্য' কথার অর্থ হল সৎ বংশজাত অভিজাত মানুষ। আর্য বলতে অনেকে একটি জাতি বোঝেন, কিন্তু প্রকৃত অর্থে আর্য যাবে জাতিবাচক শব্দ নয়-আর্য হল একটি ভাষাগত ধারণা। সংস্কৃত, লাতিন, গ্রিক,যান, গথিক, কেলটিক, পারসিক প্রভৃতি ভাষার মধ্যে একটি মূলগত সাদৃশ্য রয়েছে। প্য যে, একই মূল ভাষা থেকে এই ভাষাগলি উৎপন্ন। এই ভাষাগুলিকে একত্রে সিইটারপীয় ভাষা বলা হয় এবং এইসব ভাষায় যারা কথা বলেন তাদের 'আর্য' বৈদিক যুগকে ঋবৈদিকযুগ ও পরবর্তী বৈদিক যুগ নামে দু'ভাগে বিভক্ত করা যায়। ঋকবেদ থেকে আর্য সভ্যতার যেসব কথা জানা যায় তাকে ঝকবৈদিক সভ্যতা বা যুগ বলা হয়। এই যুগের সময়সীমা মোটামুটিভাবে ১৫০০ থেকে ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। ঋবৈদির যুগে সমাজের ভিত্তি ছিল পরিবার এবং এই পরিবার ছিল পিতৃতান্ত্রিক। পরিবারকে বলা হয় 'কুল' এবং পরিবারের প্রধান সদস্যকে 'গৃহপতি' বা 'কুলপ' বলা হত। এই যন্ধে পুত্রের ওপর পিতার নিয়ন্ত্রণ ছিল কঠোর। পরিবারগুলি ছিল যৌথ।


আর্যরা যখন ভারতে প্রথম বসতি স্থাপন করে তখন ভারতবাসীরা দেহের বর্ণ অনুসারে দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল-শ্বেতকায় আর্য ও কল্পকায় অনার্য। কালক্রমে গণও কর্মের বিভিন্নতা অনুসারে আর্য সমাজে নতুন শ্রেণিবিন্যাস বা বর্ণপ্রথা দেখা যায়। ঋবেদের দশমমণ্ডলের পুরুষ সূক্তে বলা হয়েছে আদি-পুরুষের বিভিন্ন অঙ্গ থেকে চার বর্ণের উৎপত্তি হয়েছিল। আদিপুরুষের মুখ থেকে ব্রাহ্মণ, বাহুদ্বয় থেকে রাজন্য, উন্নযুগল থেকে বৈশ্য এবং দুই পা থেকে শূদ্রের জন্ম হয়েছে। চতুর্বর্ণ প্রথার এইটিই যে প্রাচীনতম নিদর্শন তাতে কোনো সংশয় নেই। ফলে মনে করা হয় যে স্বাভাবিক যে চতুর্বর্ণ প্রথা ঋবেদের আমলেই সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল। ব্রাহ্মণের কর্ম পৌরোহিত্য ক্ষত্রিয়ের কর্ম শাসন ও যুদ্ধ। বৈশ্যের বৃত্তি কৃষি ও বাণিজ্য এবং শূদ্র উচ্চ তিন বর্ণের শুশ্রুষায় নিযুক্ত। বর্ণ সমাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নির্দিষ্ট পেশাভিত্তিক সামাজিক বিভাজনের অস্তিত্বও অনেক পণ্ডিত মেনে নিয়েছেন।


বর্ণ ব্যবস্থার বিশিষ্ট লক্ষণগুলি হল-(১) জন্মদ্বারা নির্ধারিত। (২) পুরুষানুক্রমিক বৃত্তি ধারণ আবশ্যিক। (৩) বৃত্তির পরিবর্তন নিষিদ্ধ কেবলমাত্র সধর্ম বিবাহই সিদ্ধ। (৪) বর্ণান্তরে খাদ্য পানীয় গ্রহণ সংক্রান্ত কঠোর বিধিনিষেধের প্রয়োগ। (৫) উচ্চ-নীচ মর্যাদার প্রকট প্রকাশ এইসব লক্ষণগুলি কি ঋবৈদিক যুগে প্রচলিত ছিল এই বিষয়টি বিশদ আলোচনার যোগ্য। বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে যে, পুরুষসূক্ত যে দশম মন্ডলের অন্তর্ভুক্ত এটি প্রক্ষিপ্ত অংশ। যা কালের বিচারে ঋগ্বেদের পরবর্তী। একথা ভুললে চলবে না যে, পুরুষসূক্ত বাদ দিলে ঋগ্বেদের অন্যত্র চতুর্বর্ণের উল্লেখ নেই। ঋগ্বেদে দুইটি বর্ণের উল্লেখ আছে আর্যবর্ণ ও দাস বা দস্যুবর্ণ। দস্যুবর্ণের পরিচয় দেওয়া হয়েছে তাদের কৃযুগাত্র বর্ণের প্রসঙ্গে, যাতে অনুমান করা যায় যে, বর্ণ শব্দটি এক্ষেত্রে রং বা গাত্রবর্ণকে বোঝায়, তা চতুর্বর্ণের মতো কোনো স্তরীকৃত সমাজব্যবস্থার দ্যোতক ছিল না। সবর্ণ বিবাহের বাধ্যতামূলক কোনো নিয়মাবলীও ঋগ্বেদে অনুপস্থিত। যার দরুণ মনে হয় যে, ঋকেদে আদৌ কঠোর বর্ণব্যবস্থা বিরাজ করত না। ঋগ্বেদের একটি সুপরিচিত সূর্বে এক ব্যক্তির পরিচয় দেওয়া হয়েছে কবি হিসেবে। তাঁর পিতা চিকিৎসক ও মাতা শস্য চূর্ণ করার কাজে নিযুক্ত। অতএব বংশানুক্রমে নির্দিষ্ট বৃত্তি অনুসরণের নিয়ম ঋগ্বেদে বোধহয় অনুসৃত হত না। 


অন্যদিকে সামাজিক সংগঠন বোঝাতে বর্ণের চেয়ে ঋগ্বেদে অনেক বেশি ব্যবহৃত ও


কেন, গণ ও বিশ শব্দগুলি। এই শব্দগুলি কৌম সংগঠনের আভাস দেয়। কৌমের কেপেক্ষাকৃত সরলতর, বর্ণ ব্যবস্থার মতো কঠোর ভেদাভেদ দ্বারা তা চিহ্নিত নয়। ঠিক রামশরণ শর্মার অভিমত হল যে, পশুচারণ-ভিত্তিক ঝকবৈদিক কৌম সমাজে তার সমভাবে বন্টিত হত। যেহেতু এই সমাজে কৃষির পূর্ণাঙ্গ পত্তন ঘটেনি। তাই এনপদের অপেক্ষাকৃত কম বৈষম্য থাকাই স্বাভাবিক, কৃষিজীবী সমাজে জমির উপর একরে যে অসাম্য দেখা যায়, তার পরিচয় পশুপালনকেন্দ্রিক ঋগ্বেদের সমাজে বিশেষ দেয়া যায় না। এই কারণে বর্ণসমাজের জটিলতাও এই সমাজে অনুপস্থিত।


হবার অধ্যাপক সবীর জয়সওয়াল ঋগবেদের সমাজেও সামাজিক ব্যবধান লক্ষ্য জোন/যদিও তা বর্ণভেদ দ্বারা চিহ্নিত নয়। ঋগ্বেদে 'মামবণ' বা সম্পন্ন ব্যক্তির উল্লেখ এ যেকা যায় যে, অধিকতর সম্পন্ন ব্যক্তি সমাজে থাকলেও, তার পাশাপাশি দরিদ্রতম একাও বিদ্যমান। অপেক্ষাকৃত সরলতর সমাজের উপাদান হিসেবে অধ্যাপক রোমিলা লেব আরও একটি সম্ভাবনার প্রতি দৃষ্টি দিয়েছেন। তাঁর বিচারে ঋগ্বেদের সমাজে রক্ত এক বহির্ভূত ব্যক্তির কাছে শ্রম আদায়ের প্রচলন ছিল না। ঋগ্বেদের বৃহৎ যৌথ করে ব্যবস্থায় বয়স্ক প্রজন্ম নির্ভর করতেন অনুজ প্রজন্মের শ্রমদানের উপর। এটি তাঁর রে. Lineage system বা লিনিয়েজ প্রথার ফল, মার্কসীয় ঐতিহাসিকদের মধ্যে কেউ মা অবশ্য ঋগ্বেদে শ্রেণিসুলভ বিভাজনের উপস্থিতির পক্ষে রায় দিয়েছেন। কিন্তু সব স্যা মনে হয়, বর্ণ ব্যবস্থার বিকাশ বোধহয় ঋবেদের আমলে ঘটেনি।


পরবর্তী বৈদিক আমলে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন দেখা যায়। ঋগ্বেদের তুলনায় পরবর্তী বৈদিক সাহিত্যে সামাজিক জটিলতা প্রকট হয় । স্থায়ী কৃষিজীবী সমাজের বিকাশের সঙ্গে এই সামাজিক জটিলতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়াটি অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত । পরবর্তী বৈদিক সাহিত্য বর্ণ শব্দটি আর গাত্রবর্ণ বোঝাত না । তা চতুর্বর্ণ ব্যবস্থার সমর্থক হয়ে দাঁড়ায় ।


About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟