হরপ্পা সভ্যতার রাষ্ট্রব্যবস্থা কেমন ছিল
হরপ্পা সভ্যতা সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের মূল ভিত্তি হল এর প্রত্নতত্ত্ব। কোনো লিখিত উপাদানের পাঠোদ্ধার সম্ভবপর না হওয়ায় এই সভ্যতার রাজনৈতিক ইতিহাস আজও রহস্যাবৃত। পণ্ডিতদের গবেষণা এ ব্যাপারে আজও অব্যাহত। তবুও কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। এতদসত্ত্বেও আমাদের মনে প্রশ্ন আসে প্রশাসনিক ব্যবস্থার প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে। এ প্রসঙ্গে হরপ্পা, মহেঞ্জোদাড়ো থেকে কালিবঙ্গান সর্বত্রই নিয়মমাফিক সড়ক, জলনিকাশী ও মৃৎশিল্পের নিখুঁত নিদর্শন এবং ওজন ও পরিমাপ পদ্ধতির সমতা সুদৃঢ় প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের আভাস দেয়। এ ব্যাপারে অধ্যাপক ইরফান হাবিবের 'ভারতবর্ষের মানুষের ইতিহাস' উল্লেখযোগ্য একটি গ্রন্থ।
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
বহুসংখ্যক ব্রোঞ্জ, তামা ও পাথরের অস্ত্রশস্ত্রের ভিত্তিতে যুদ্ধের বিষয়টি অনুমিত হয়। এই সূত্র ধরে অনুমান করা হয় যে, সিন্ধু সভ্যতার যুগে একটি বৃহত্তর এলাকা কেন্দ্রীয় সাম্রাজ্যের শাসনাধীনে এসেছিল। হরপ্পা কিংবা মহেঞ্জোদাড়োর সার্বিক উন্নত ব্যবস্থার জন্য এই প্রত্নকেন্দ্রগুলিকে রাজধানী হিসাবে ধরা যেতে পারে। প্রাদেশিক শাসনকেন্দ্র হিসাবে ধোলাবিরা, মহেঞ্জোদাড়োর নাম আসে। খননকার্যে প্রাপ্ত প্রায় সব কেন্দ্রেই দুর্গের অবস্থান সিন্ধু সভ্যতার রাষ্ট্রব্যবস্থায় স্তরবিন্যাস কাঠামোর আভাস দেয়।
রাষ্ট্রব্যবস্থার চরিত্রের প্রশ্নে অনুমান করা হয় যে, শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শাসনের এই স্পষ্ট ইঙ্গিতের প্রধান হয়তো রাজার মতো কোনো ব্যক্তি ছিলেন। বহুসংখ্যক দুর্গবিন্যাস রাজশক্তির অস্তিত্বের বাহক। হরিয়ানার হিসার জেলায় সভ্যতার আদি পর্যায়ে প্রাপ্ত মুকুটে টায়রার অস্তিত্ব রাজতান্ত্রিক শাসনের অস্তিত্বের পরিচায়ক। ফলে সবমিলিয়ে বিশেষজ্ঞগণ এক আমলাতান্ত্রিক শাসনের অনুমান করেছেন। যদিও কোনো প্রশাসনিক কাজকর্মের স্পষ্ট নিদর্শন পাওয়া যায়নি। আবার মহেঞ্জোদাড়োয় প্রাপ্ত সভাগৃহ রাজপ্রাসাদের কথা মনে করায়। এসব দেখে পরিশেষে বলা যায় যে, হয়তো শাসনতান্ত্রিক একটি সুদৃঢ় কাঠামো বজায় ছিল কিন্তু তার প্রকৃতি বা চরিত্রের ব্যাখ্যা আমাদের বোধবহির্ভূত।