জার্মানিতেই কেন সর্বপ্রথম ধর্ম সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়
জার্মানিতেই কেন সর্বপ্রথম ধর্ম সংস্কার আন্দোলন শুরু হয় তার কারণ হল
ইতালিকে কেন্দ্র করে সংঘটিত রেনেসাঁস নবজাগরণের প্রভাব ইউরোপের মানব জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্র কে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল সাহিত্য শিল্প স্থাপত্য মানবতাবাদ প্রভৃতি সব ক্ষেত্রেই রোডের চাষের প্রত্যক্ষ অবদান রয়েছে। রেনেসাঁ উচ্চারিত যুক্তিবাদ পূর্বে প্রচলিত সমস্ত সংস্কার ধ্যান ধারণাকে তীব্রভাবে আন্দোলিত করে যার একটি অন্যতম ক্ষেত্র হলো ধর্ম সংস্কার। ইউরোপে প্রায় অধিকাংশ রাষ্ট্র পরিচালিত খ্রিষ্ট ধর্ম চুক্তিবাদের সামনে তীব্র চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে সংস্কার আন্দোলনের সূচনা হয় জার্মানিকে কেন্দ্র করে ৷
জার্মানিতে প্রথম ধর্ম সংস্কার আন্দোলন সংগঠিত হলো কেন তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে একাধিক বক্তব্য রয়েছে ৷ পঞ্চদশ শতকে স্পেন ফ্রান্স ইংল্যান্ড প্রভৃতি রাষ্ট্রশক্তিশালী কেন্দ্র সরকার গঠিত হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে কিন্তু জার্মানিতে কোনরূপ প্রভাব সৃষ্টিকারী সরকারের অস্তিত্ব ছিল না বললেই চলে, রাজনৈতিক দুর্বলতা সে দেশের ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে ৷ জার্মানিতে ধর্মীয় সংগঠন বা চার্চের দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষের ভোগ অবশ্যই বাড়ছিল কারণ চার্চ মানুষকে ধর্মের পথে নিয়ে এসে তাদের শান্তি প্রদানের পরিবর্তে বিপুল ঐশ্বর্য ও পার্থিব জীবনের ভোগ বিলাসের প্রতি আগ্রহী করে তোলে ৷ জার্মানিতে চার্চ বিরোধী মানসিকতা ক্রমশ বৃদ্ধি পায় ৷
জার্মানির অর্থনীতির অগ্রগতি এবং বাস্তুতান্ত্রিক ও ভোগবাদের মনোভাবের কারণে মানুষের মধ্যে ধর্ম জীবনের জন্য এক আপত্তি লক্ষ্য করা গিয়েছিল ৷ কিন্তু জার্মান চার্চ তাদের সেই শান্তি দিতে ব্যর্থ হয় ৷ ফলে এই অঞ্চলের ধর্মপ্রাণ অধিবাসীরা তাদের ধর্ম জিজ্ঞাসার উত্তর খুঁজে ছিল সেই দেশের মরণ মিয়া চেতনার ঐতিহ্যের ভিত্তর এই সময়ে জার্মানি অধিবাসী বা ইতালির অধিবাসী পাপের প্রতি আনুগত্য প্রদান থেকে ক্রমশ সরে আসতে থাকে ৷ জার্মানিতে ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের সাফল্যের পাশ্চাত্যে এই জাতিগত বৈরিতা বিশেষ ভূমিকা পালন করে ৷ তারা মরমিয়া আমাদের প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকে ৷ চার্চ সম্পর্কে ক্রমশ অশুদ্ধা যাপন করতে থাকে ।
চতুর্দশ শতকে মাঝামাঝি সময় প্লেগ মহামারী দুর্ভিক্ষ জনিত কারণে জার্মান জনজীবন অস্থির হয়ে ওঠে এই অস্থিরতা থেকে মুক্তির পথ দেখাতে দুর্নীতিগ্রস্ত চার্চ ব্যর্থ হয় । হলে জার্মানির জীবনে ধর্মীয় মূল্য বোধের সংকট সৃষ্টি হয় ৷ ফলতো তারা জার্মান মরমিয়াবাদ কে বিকল্প পথ হিসেবে গ্রহণ করে পাশাপাশি মার্টিন লুথার, ইরাসমাস, জন হিউটেন প্রমুখদের ন্যায় মানবতাবাদীর আদর্শ অর্থাৎ ধর্ম সংস্কারের বাণী দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে ৷ জার্মান তাত্ত্বিক মার্সিলিও তার "ডিফেন্ডার অফ দ্য প্রিস" গ্রন্থে বলেন পোপতন্ত্র ইউরোপীয় ধর্ম সংক্রান্ত সংখ্যা সৃষ্টি করে শান্তি নষ্ট করছেন তাই তাদের ধ্বংস করা প্রয়োজন ৷ কবি আলমারি তার "No mnarchy" নামক রচনায় পোপদের রাজস্ব আদায়ের অধিকারের তীব্র সমালোচনা করেন । কবি সাহিত্যিক লেখকদের এই ধরনের মতবাদ জার্মান জন মানুষকে সংস্কার আন্দোলনে শক্তি যোগায় ৷
জার্মান জনমানুষ যখন সংস্কার আন্দোলনের ভাবধারায় জাগ্রত হতে শুরু করেছে সেই সময় মুদ্রণ যন্ত্রের আবিষ্কার এবং প্রসার জার্মানির এই আন্দোলনের পক্ষে বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করে ৷ কারণ গ্রন্থ ছাপার সুবিধার ফলে বিভিন্ন ভাষায় বাইবেলের অনুবাদ মার্টিন লুথার সহ একাধিক ধর্ম সংস্কার আন্দোলনে তাদের মতবাদ বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের কাছে পৌঁছে যায় ফলে তারা প্রকৃত সত্য অধ্যাপন করতে সফল হয় এবং চার্চের দুর্নীতি বাইবেলের বিকৃতি জনগণের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় ৷
আলোচনা শেষে বলা যায় জার্মানিতে ধর্মসংস্কার আন্দোলন সংঘটিত হওয়ার পশ্চাতে একাধিক কারণ বিদ্যমান ছিল ৷ আসলে পুরো ইউরোপ জুড়েই চার্চে যে অনাচার দুর্নীতি ও শাসন চলছিল তা থেকে জার্মান মুক্ত ছিল না । বরং শোষনের তীব্রতা কিছুটা বেশি ছিল বলা যায় এছাড়াও দুর্ভিক্ষ ,মহামারী, প্লেগ জার্মানিতে যে নৈতিক সংকর সৃষ্টি করেছিল তা থেকে মুক্তির জন্য তারা জার্মানিতে প্রচলিত ঐতিহ্যগত মরমিয়া ও ভক্তিবাদী আশ্রয় করেন এবং চার্চের কর্তৃত্বকে অস্বীকার করেন । আলোচ্য পর্বেই জার্মানিতে উদীয়মান লেখক কবি, বুদ্ধিজীবীরা তাদের যুক্তিনিষ্ঠ ও বক্তব্য প্রেশের মধ্যে দিয়ে জার্মান জন মানুষের আন্দোলনের সৃষ্টি করে সর্বোপরি মার্টিন লুথারের ন্যায় সংস্কারক এখানে উপস্থিত ছিলেন তাই ইউরোপের অন্যান্য রাষ্ট্রের অপেক্ষায় জার্মানিতে প্রথম ধর্ম সংস্কার আন্দোলন সংঘটিত হয় ৷
তোমাকে অনেক ধন্যবাদ জার্মানিতেই কেন সর্বপ্রথম ধর্ম সংস্কার আন্দোলন শুরু হয় এই নোটটি পড়ার জন্য