বিচার বিভাগীয় সংস্কার প্রবর্তনের লর্ড কর্নওয়ালিসের কৃতিত্ব আলোচনা কর ৷ অথবা, লর্ড কর্নওয়ালিসের বিচার বিভাগীয় সংস্কার গুলি বর্ণনা কর ৷

বিচার বিভাগীয় সংস্কার প্রবর্তনের লর্ড কর্নওয়ালিসের কৃতিত্ব আলোচনা কর ৷ অথবা, লর্ড কর্নওয়ালিসের বিচার বিভাগীয় সংস্কার গুলি বর্ণনা কর ৷

বিচার বিভাগীয় সংস্কার প্রবর্তনের লর্ড কর্নওয়ালিসের কৃতিত্ব আলোচনা কর ৷ অথবা, লর্ড কর্নওয়ালিসের বিচার বিভাগীয় সংস্কার গুলি বর্ণনা কর ৷ অথবা, লর্ড কর্নওয়ালিসের শাসনতান্ত্রিক সংস্কার গুলি বর্ণনা কর

বিচার বিভাগীয় সংস্কার প্রবর্তনের লর্ড কর্নওয়ালিসের কৃতিত্ব আলোচনা কর ৷ অথবা, লর্ড কর্নওয়ালিসের বিচার বিভাগীয় সংস্কার গুলি বর্ণনা কর ৷ অথবা, লর্ড কর্নওয়ালিসের শাসনতান্ত্রিক সংস্কার গুলি বর্ণনা কর

৭৮৬ খ্রীষ্টাব্দে লর্ড কর্ণওয়ালিস ভারতের গভর্নর-জেনারেল নিযুক্ত হয়ে আসেন। তাঁকে "উপযুক্ত অভিজাত' শাসকরূপে অভিহিত করা হয়েছে। শাসনকার্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার ব্যাপারে কর্ণওয়ালিস কয়েকজন সুদক্ষ সহকর্মীর সহযোগিতাও লাভ করেছিলেন। এঁদের মধ্যে উল্লখযোগ্য হলেন চার্লস গ্রান্ট, স্যার জন শোর, জেমস্ গ্রান্ট, জোনাযান ডানকান ও স্যার উইলিয়াম জোনস্। পিটের ভারত আইন (১৭৮৪ স্ত্রীঃ) অনুসারে কর্ণওয়ালিসকে তাঁর কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত প্রয়োজনবোধে অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল এবং বোম্বাই ও মাদ্রাজ সরকারের ওপর তাঁর কর্তৃত্ব সুস্পষ্টভাবে নির্ধারিত করা হয়েছিল। ভারতে শাসনব্যবস্থার সাস্কারসাধন করাই তাঁর প্রধান দায়িত্ব দিল। একথাও অনস্বীকার্য যে, বর্তমান এরতীয় শাসনতন্ত্রের ভিত্তি কর্ণওয়ালিসই রান্না করে যান। তাঁর সংস্কারাদির প্রধান সন্দ ছিল ইংল্যান্ডের অনুকরণে ভারতের পানসব্যবস্থা গড়ে তোলা কারণ, তিনি ইংল্যান্ডের আইন ও শাসন প্রণালীকে আদর্শ বলে মনে করতেন।

আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন

প্রথমেই কর্ণওয়ালিস কোম্পানির বাণিজ্য-সংক্রান্ত ব্যবস্থার সংস্কারসাধন করেন। প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যের সরবরাহের জন্য কোম্পানির নিজ কর্মচারিদের সঙ্গে চুক্তি করার পরিবর্তে সরাসরি দেশীয় বণিক ও দালালদের সঙ্গে চুক্তি করায় ব্যবস্থা গৃহীত হয়। কোম্পানির গোমস্তাদের অত্যাচারের ফলে বাংলার তাঁতশিল্প ধ্বংসপ্রায় হয়ে উঠেছিল। কর্ণওয়ালিস প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে তার প্রতিকারে প্রয়াসী হন। তাঁর সংস্কারের ফলে বাজার দরে কোম্পানি পণ্যসামগ্রী ক্রয় করতে সমর্থ হয় এবং কোম্পানির কর্মচারিদের অবৈধ স্বার্থসিদ্ধির পথ বন্ধ হয়।

১৭৮৭ খ্রীষ্টাব্দে ঢাকা, পাটনা ও মুর্শিদাবাদ ছাড়া সর্বত্র জেলা-আদালতগুলির ওপর কালেক্টরের ক্ষমতা পুনরায় স্থাপন করা হয়। কালেক্টরদেরকে ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া হয়। জেলার ফৌজদারি আদালতে এবং সদর নিজামত আদালতে গুরুত্বপূর্ণ ফৌজদারি মামলা নিষ্পত্তি করার ব্যবস্থা হয়। কালেক্টররা রাজস্ব-সংক্রান্ত কোন মামলা নিষ্পত্তি করার অধিকারী ছিলেন না। এই ধরনের মামলাগুলি রেভিনিউ বোর্ডের এক্তিয়ারভুক্ত করা হয়।

১৭৯০ খ্রীষ্টাব্দে আরও কতকগুলি সংস্কার প্রবর্তন করা হয়। প্রতি জেলায় কালেক্টরের অধীনে কয়েকটি নূতন স্থানীয় আদালত স্থাপন করা হয়। এই আদালতগুলির হাতে রাজস্ব সংক্রান্ত মামলাগুলির নিষ্পত্তির দায়িত্ব দেওয়া হয়। কৌজদারি বিচারের ক্ষেত্রে সুদুরপ্রসারী পরিবর্তন সাধন করা হয়। সদর আদালতকে আবার মুর্শিদাবাদ থেকে কলিকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়। গভর্নর-জেনারেল ও কাউন্সিল এই আদালতের বিচারকার্যে নিযুক্ত হন এবং তাঁদের সাহায্যকরার জন্য ভারতীয় আইনজ্ঞগণ নিযুক্ত হন। জেলার ফৌজদারি আদালতগুলি বিলুদ্ধ করা হয় এবং তার পরিবর্তে কলিকাতা, মুর্শিদাবাদ, পাটনা ও ঢাকায় চারটি ভ্রাম্যমাণ আদালত (Court of Circuit) স্থাপন করা হয়। এই আদালতের বিচারকদের বছরে দুবার। তাঁদের এক্তিয়ারভুক্ত এলাকায় পরিভ্রমণ করে স্থানীয় বিচারকার্য সম্পাদন করতে হত। ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে কালেক্টরদের ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করা হয়। এরপর কর্ণওয়ালিস 'জজ' (Judge) নামে একশ্রেণীর কর্মচারি নিয়োগ করেন। তাদের হাতে দেওয়ানি মামলা-মোকদ্দমার ভার দেওয়া হয়।

পাটনা, ঢাকা, মুর্শিদাবাদ ও অন্যান্য তেইশটি জেলা-আদালত হাড়াও এইসব জেলার কয়েকটি নিম্ন আদালত স্থাপন করা হয়। বিচারব্যবস্থার সর্বনিম্নে মুনসেফী-আদালত স্থাপন করা হয়। ১৭৯০ খ্রীষ্টাব্দে যে চারটি প্রাদেশিক ভ্রাম্যমাণ আদালত স্থাপন করা হয়েছিল, সেগুলি পুনর্গঠন করা হয়। এই আদালতগুলির প্রত্যেকটিতে দুজনের পরিবর্তে তিনজন ইংরেজকে নিযুক্ত করা হয়। বিচারব্যবস্থার পরিবর্তনের মূলে কর্ণওয়ালিসের দ্বিতীয় নীতি ছিল সবরকমের যথার্থ ক্ষমতা ও দায়িত্ব থেকে ভারতীয়দের বঞ্চিত করা। ইতিপূর্বেই ভারতীয়দের ফৌজদারি মামলা বিচার করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। ১৭৯৩ খ্রীষ্টাব্দের পর জমিদারদের ও তাঁদের নিজ নিজ এলাকায় শান্তিরক্ষা করার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

শাসনকার্যের সুবিধার জন্য ওয়ারেণ হেস্টিংস সারা বাংলাকে ৩৫টি জেলায় ভাগ করেছিলেন। কর্ণওয়ালিস এই ভোলাগুলিকে পুনর্বিন্যাস করে ২৩টি জেলায় পরিণত করেন এবং পরে তা বৃদ্ধি করে ২৮টি করেন। এরপর থেকে প্রাদেশিক শাসনের মূল ভিত্তি হয় জেলা।

জেলাগুলিকে পুনর্বিন্যাস করে জেলা সংগঠন ও পুলিশব্যবস্থার সংস্কার কর্ণওয়ালিস জেলাগুলিতে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার প্রতি আগ্রহী হন। কর্ণওয়ালিস প্রথমে কলিকাতার পুলিশব্যবস্থার সংস্কারসাধন করেন। জেলাগুলিকে কয়েকটি থানায় ভাগ করা হয়। প্রত্যেক থানায় কয়েকজন কনস্টেবল ও একজন দারোগা নিযুক্ত করা হয়। দারোগাদের কাজকর্মের তত্ত্বাবধানের ভাব দেওয়া হয় জেলার ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর। অবশ্য কর্ণওয়ালিসের পুলিশব্যবস্থা ফলপ্রসু হয়নি। কনস্টেবলের সাহায্যে থানার মত এক বিরাট অঞ্চলের শান্তি ও শৃঙ্খলা দারোগার পক্ষে মোটেই সম্ভব ছিল না। কয়েকজন রক্ষা করা একজন বহাল থাকে ।

এতদিন কোম্পানির কর্মচারিদের কার্যপদ্ধতি সুনির্দিষ্ট করার জন্য কর্ণওয়ালিস ভারতীয় সিভিল সার্ভিস (Indian Civil Service)-এর ঐতিহ্য স্থাপন করেন। তিনি কর্মচারিদের নিয়মানুবর্তিতা ও নৈতিক চরিত্রের ওপর সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। এই প্রসঙ্গে তিনি যে সব নিয়ম-কানুন প্রবর্তন করেন সেগুলি 'কর্ণওয়ালিস কোড' (Cornwallis Code) নামে পরিচিত। ১৭৮১ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রশাসনে ইওরোপীয় ও ভারতীয় উভয় জাতি হতে কর্মচারি নিযুক্ত করার রীতি চলে আসে। কিন্তু কর্ণওয়ালিস কোড (১৭৯৩ খ্রীঃ) ইওরোপীয় কর্মচারিদের শাসনদক্ষতায় অধিকতর বিশ্বাসী কর্ণওয়ালিস এরপর থেকে কেবলমাত্র ইওরোপীয় কর্মচারি নিয়োগ করার নীতি গ্রহণ করেন। এর ফলে উভয় জাতির মধ্যে বিভেদের সৃষ্টি হয়।

আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন

সম্ভাব্য প্রশ্নগুলি হলঃ 

  • লর্ড কর্নওয়ালিসের বিচার বিভাগীয় সংস্কারগুলির বিবরণ দাও ৷ 
  • লর্ড কর্নওয়ালিসের পুলিশি সংস্কারের বিবরণ দাও ।
  •  লর্ড কর্নওয়ালিসের জেলা সংগঠন ও পুলিশি ব্যবস্থার বিবরণ দাও ৷

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟