উপযোগবাদ হিসেবে জন স্টুয়ার্ড মিলের বক্তব্যসমূহ ব্যাখ্যা করো ।
উনিশ শতকের উপযোগবাদী দার্শনিকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জন স্টুয়ার্ট মিল (১৮০৬-১৮৭৩ খ্রি.)। জন স্টুয়ার্ট তাঁর ইউটিলিটেরিয়ানিজম গ্রন্থের দ্বিতীয় অধ্যায়ে উপযোগবাদের সূত্রগুলি ব্যাখ্যা করেন । মিল তাঁর প্রধান সূত্রে বলেছেন কাজগুলির অনুপাতে আনন্দ তৈরি করতে পারে সে অনুপাতে সেগুলি যথোচিত ৷ আর যে অনুপাতে কাজগুলি আনন্দের যে বিপরীত অনুভূতি তৈরি করে পারে সেগুলি অনুচিত। এখানে আনন্দের অর্থ হল সুখের উপস্থিতি থাকলেও দুঃখ থাকবে না । আবার আনন্দহীনতার অর্থ হল দুঃখের উপস্থিতি থাকলেও সুখ থাকবে না । মিল উপযোগিতা শব্দটির ব্যবহার করেননি । তাঁর ধারণায় উপযোগিতার অর্থ সুখ । উপযোগিতা আনন্দ একই অর্থ বোঝায় । আনন্দের অর্থ হল সুখের উপস্থিতি কিন্তু দুঃখের অভাব ।
উপযোগবাদের অন্যতম ভাষ্যকার ছিলেন জন স্টুয়ার্ট মিল। তিন তাঁর পিতা জেমস্ মিলের মতো রক্ষণশীল উপযোগবাদীর প্রবক্তা ছিলেন না। তিনি নিজের মতো উপযোগবাদের ভিত্তিতে এক নতুন রাষ্ট্রতত্বের অবতারণা করেন ৷ তার লেখা 'অন লিবার্টি', 'রিপ্রেজেনটেটিভ গভর্নমেন্টে,' পলিটিক্যাল ইকোনমি' তাকে উপযোগবারী দার্শনিক হিসেবে এনে দেয় । জন স্টুয়ার্ট মিল তাঁর লেখাতে ইচ্ছাকৃতভাবে রাষ্ট্র শব্দের বদলে সমাজ শব্দের ব্যবহার করেছেন । আসলে তিনি মনে করতেন সমাজে মানুষ নিজের সুখের জন্যই সরকার গড়ে তোলে ৷ আর তাই বলা যায় রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলার প্রথম শর্তটি হল মানুষের ইচ্ছো । অপরদিকে রাষ্ট্রের আসল উদ্দেশ্য হল সমাজের সার্বিক উন্নতি ঘটানো । জন স্টুয়ার্ট মিলের ধারণাই সৎ এবং বুদ্ধিমানের পক্ষে ভালোভাবে সরকার চালনা করা সম্ভব ৷ মিথ মুক্ত অর্থনীতি ও মুক্তচিন্তার প্রতি সমর্থ জানান । তিনি বলেন শাসক কথনোই স্বাধীন চিন্তার কন্ঠরোধ করতে পারেন না । তার ধারনার প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক সরকারই হল সর্বশ্রেষ্ঠ সরকার । কারণ প্রথমত, এই ধরনের সরকার পরিচালনকারীরা ছিল নিজেদের অধিকার ও স্বার্থের দিকে খেয়াল রাখে । দ্বিতীয়ত, এতে সমাজের মনুষের নৈতিক, বৌদ্ধিক ও ব্যবহারিক উন্নতি ঘটে থাকে।