মর্লে মিন্টো সংস্কার আইন সম্পর্কে কি জানো? মর্লে মিন্টো সংস্কার আইনের ত্রুটি গুলি কি ছিল এই আইনের গুরুত্ব গুলি উল্লেখ কর বা ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে মর্লে মিন্টো শাসনতান্ত্রিক সংস্কার আইনের শর্তাবলী আলোচনা কর এই আইনের ত্রুটি গুলি লেখ
মর্লে মিন্টো সংস্কার আইন (১৯০৯ খ্রীঃ)।
লর্ড কার্জনের স্বৈরাচারী শাসন ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন প্রতিহত করার পরিবর্তে তা আরও শক্তিশালী করে তোলে । বঙ্গ বিভাগকে উপলক্ষ করে সমগ্র ভারতে জাতীয়তাবাদ প্রবল আকার ধারণ করে এরং- বহু স্থানে নানা অঘটনও ঘটে । বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের ব্যাপকতা ইংরেজ শাসকদের মনে ভীতির সঞ্চার করে । এই পরিস্থিতিতে ইংরাজ সরকার কংগ্রেসের নরমপন্থীদের সন্তষ্টিবিধানের জন্য আইন প্রবর্তিত নূতন শাসনসংস্কার প্রবর্তনে প্রয়াসী হন । ভারত-সচিব মর্লে ব্যক্তিগতভাবে উদারনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন । তিনি ভারতীয়দের হাতে কিছু প্রশাসনিক দায়-দায়িত্ব দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন ৷ এরফলে মলের প্রস্তাব অনুসারে ১৯০৯ খ্রীষ্টাব্দে এক নূতন আইন গৃহীত হয়, যা মর্লে মিন্টো সংস্কার আইন নামে খ্যাত । মিন্টো সে সময় ছিলেন ভারতের বড়লাট ।
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
এই আইনের শর্তানুসারে- (১) জনস্বার্থের খাতিরে সরকারের সঙ্গে উপযুক্ত ভারতীয় নেতৃবর্গের সহযোগিতার নীতি গৃহীত হয়, (২) বড়লাটের কার্যনির্বাহক পরিষদে (Governor General's Executive Concil) জন ভারতীয় প্রতিনিবি গ্রহণ করার ব্যবস্থা হয়। সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহ সর্বপ্রথম বড়লাটের কার্যনির্বাহক পরিষদে আইন সদস্যরুপে নিযুক্ত হন, (৩) বোম্বাই ও মাদ্রাজ গভর্নরের কার্যনির্বাহক পরিষদের সদস্যাদের সংখ্যাবৃদ্ধি করে চার করা হয়। (৪) বাংলাদেশে একটি কার্যনির্বাহক পরিষদ গঠন করা ৷ যদিও প্রাদেশিক কার্যনির্বাহক পরিষদগুলিতে ভারতীয় সদস্য নিয়োগের ব্যবস্থা এই আইনে করা হয়নি, তবুও কিশোরীলাল গোস্বামীকে বাংলার কার্যনির্বাহক পরিষদে নিযুক্ত করা হলে এই প্রথার প্রচলন হয় ।
১৯০৯ খ্রীষ্টাব্দের আইনের সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনসভায় গঠন ও ক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সাধন । কেন্দ্রীয় আইনসভার সদস্যসংখ্যা ১৬ থেকে ৬০ করা হয় । এদের মধ্যে ২৮ জনের বেশি সরকার কর্তৃক মনোনীত হবেন না বলে স্থির হয় । কতকগুলি বিশিষ্ট সম্প্রদায় থেকে তিনজন বে-সরকারী সদস্য মনোনীত করার অধিকার বড়লাটকে দেওয়া হয় । উপরন্তু আরও দুজন সদস্য মনোনীত করার অধিকার তাঁকে দেওয়া হয় । অবশিষ্ট সদস্যদের জমিদারশ্রেণী, মুসলমান সম্প্রদায়, কলিকাতা ও বোম্বাই-এর চেম্বার-অফ- কমার্স (Chamber of Commerce) বা বণিকসভা এবং প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচিত সদস্যদের মধ্য থেকে গ্রহণ করার ব্যবস্থা হয় । কেন্দ্রেীয় আইনসভায় সরকার-মনোনীত সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রাখা হয় ৷ বড় প্রদেশগুলির আইনসভার অতিরিক্ত সদস্যদের সংখ্যা ৫০ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয় এবং এই বৃদ্ধি এমনভাবে করা হয় যাতে নির্বাচিত সদস্যদের তুলনায় সরকারী ও বে-সরকারী মনোনীত সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকে । একমাত্র বাংলায় নির্বাচিত সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রাখা হয় ।
এই আইন দ্বারা মুসলমান সম্প্রদায়কে পৃথকভাবে সদস্য নির্বাচনের অধিকার দেওয়া হয় । এইভাবে সাম্প্রদায়িক প্রতিনিধিত্বের দাবি স্বীকৃত হয় ৷ প্রথমত, মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইন দ্বারা ভারতে সংসদীয় (Parliamentary) বা দায়িত্বমূলক শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি । প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠনের প্রচেষ্টা হলেও এই আহিন ভারতীয়দের দাবি পূর্ণকরতে ব্যর্থ হয় । দ্বিতীয়ত, শাসনসংক্রান্ত ব্যাপারে ভারত সরকার পূর্বের মত ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কাছে দায়ী থাকেন ।