উডের ডেসপ্যাচ বা উডের নির্দেশ নামা বলতে কী বোঝো
ভারতের পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের ফলে সুনির্দিষ্ট ও ইতিবাচক পদক্ষেপ নেন গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসি৷ তিনি উচ্চতর কর্তৃপক্ষকে সচেতন করে জানান যে দেশীয় ভাষা অবহেলিত হলে অসংখ্য সরকারি কর্মচারীর সাথে সাধারণ মানুষের ব্যবধান প্রসারিত হবে যা সাম্রাজ্যের পক্ষে সুফল দায়ী হবে না ৷ ফলে কোম্পানি চাটার নবী করনের সময় ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বোর্ড অফ কন্ট্রোলের সভাপতি স্যার চার্লস উডের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে ৷ ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে এই কমিটির শিক্ষা বিষয়ক যে সুপারিশ পেশ করেন সেটি উডের ডেসপ্যাচ হিসাবে খ্যাত হয়ে আছে ৷
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
তার সুপারিশ গুলি হলঃ
- একটি স্বতন্ত্র শিক্ষা দপ্তর গঠন
- বেসরকারি বিদ্যালয়গুলির জন্য সরকারি অনুদান প্রদান করা
- কলকাতা,বোম্বাই ও মাদ্রাজে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন
- প্রাথমিক ও উচ্চতর বিদ্যালয় স্থাপন
- শিক্ষক শিক্ষায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ
- প্রাথমিক স্তরে দেশীয় ভাষা ও উচ্চতর স্তরে দেশীয় ভাষা ও ইংরেজি উভয় ভাষা শিক্ষা প্রদান।
- স্ত্রী শিক্ষা বিস্তারের ব্যবস্থা গ্রহণ
- বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে নিয়মিত পরিদর্শনের ব্যবস্থা গ্রহণ ইত্যাদি
উডের প্রতিবেদনে বলা হয় কিছু যুবককে উন্নত শিক্ষা দান করা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের মৌলিক উদ্দেশ্য নয় ৷ জীবনের যেকোনো অবস্থায় সমাজের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসাবে প্রচেষ্টায় উপযোগী করে তোলায় শিক্ষা উদ্দেশ্য হওয়া উচিত । শিক্ষায় ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র রক্ষা করা আবশ্যিক ৷ লর্ড ডালহৌসি এই প্রতিবেদনে সুপারিশ গুলি অতি দ্রুত কার্যকর করার চেষ্টা গ্রহণ করেন ৷
এই ব্যবস্থা সার্বজনীন ছিল না সুদূর গ্রাম অঞ্চলে সাধারণ মানুষের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের উদ্যোগ সরকারি ও বেসরকারি স্তরে নেওয়া হয়নি ৷ ফলে কেবল মধ্যবিত্ত শ্রেণি এই শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট হয় ৷ মুসলমান সম্প্রদায় প্রায় পুরোপুরি এই শিক্ষিত করণ প্রক্রিয়া থেকে দূরে ছিল ৷ নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্তেও পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসার ভারতীয়দের ভাব জগতকে রূপান্তরিত ও জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক শ্রেণীগুলিতে চিন্তার উন্মেষ ঘটাতে সাহায্য করেছিল ।