ভারতের ইতিহাসে ১৫২৬ সালের গুরুত্ব বা তাৎপর্য আলোচনা কর
![]() |
১৫২৬ সালে প্রথম পানিপথের যুদ্ধের পর বাবর সহজেই দিল্লি এবং আগ্রা অধিকার করে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ৷ দিল্লি অধিকার করার পর বাবর বাদশাহ উপাধি গ্রহণ করেছিলেন ৷ ইতিপূর্বেই ভারতের সুলতানি শাসনগণ নিজেদের বাগদাদের খালিফার প্রতিনিধি হিসেবে ভারত শাসন করতেন ৷ বাদশাহ উপাধি গ্রহণ করার পর ভারতে খালিফা প্রতিনিধিদের অবসান ঘটে,এদিক থেকে তার বাদশাহ উপাধি ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ।
১৫২৬ সালে অল্প কিছু সৈন্যসহ যোগে ৩২০ বছরের সুলতানি সাম্রাজ্যের ধ্বংসস্তূপ রচনার ক্ষেত্রে এবং অতি সহজেই জয়লাভের জন্য যে কারণটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা হল বাবর কর্তৃক কামান ও গোলন্দাজ বাহিনীর ব্যবহার ৷ রণক্ষেত্রে ব্যাপক কামানের ব্যবহার সুলতানি বাহিনীকে অতি সহজে ছত্রভঙ্গ করে দেয় ৷ কমান দ্বারা যুদ্ধ ভারতের ইতিহাসে ১৫২৬ সাল নবযুগের সূচনা করে এবং সামরিক ক্ষেত্রে ভারতবর্ষ যেন কৌশল থেকে যৌবনে পদার্পণ করেন ৷
সুলতানি যুগে এমনকি তার পূর্ব থেকেও ভারতের সাথে বহির্বিশ্বের বাণিজ্যিক যোগাযোগ চলত ৷ কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরে কোন রাষ্ট্রের সাথে ভারতের রাজনৈতিক সম্পর্ক দিল ছিল না ৷ মুঘলদের হাত ধরে ভারতের ভূখণ্ডের বাইরে কাবুল ও কান্দাহার ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্রে অঙ্গীভূত হয় ৷ ফলে মুঘল সাম্রাজ্যের সীমাবদ্ধ শক্তির পরিবর্তে বৃহত্তর শক্তি হিসাবে ভারত প্রতিষ্ঠিত হয় ৷
সুলতানি যুগে কুতুব মিনার সহ কিছু সাধারণ শিল্প কার্য স্থাপত্য তৈরি হয়েছিল ৷ কিন্তু মুঘল যুগ হলো শিল্প নিদর্শন এর দিক থেকে অনন্য, সাধারণত মুঘল সাম্রাজ্যের মধ্যে প্রায় সকলেই বিশেষত সম্রাট শাহজাহান শিল্প স্থাপত্যের একান্ত অনুরাগী ছিলেন । তার আমলে নির্মিত জামা মসজিদ, মতি মসজিদ, ময়ূর সিংহাসন পৃথিবীর মধ্যে বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন ৷ এ বিষয়ে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য হলো পত্নী মমতাজের ভালোবাসার স্মৃতিসৌধ রূপে শাহজাহানের দ্বারা নির্মিত তাজমহল, মানব শিল্প মননের এক অতি বিস্ময়কর নিদর্শন যা এখনো বিশ্ব মানবকে সৌন্দর্য প্রেমিকদের আবেগ তাড়িত, পুলকিত ও তাদের নয়ন যুগলকে আনন্দিত করে চলেছে ৷
ভারতের ইতিহাসে ১৫২৬ সাল কে কেবলমাত্র একটি সাম্রাজ্যের অবক্ষয় বা নতুন সাম্রাজ্যের সূচনা বলা যায় না ৷ ১৫২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত মুঘল সাম্রাজ্য ভারতের বাহুতে সঞ্চালিত করেছিল অফুরন্ত শক্তি ৷ মানব চক্ষুকে করেছিল সম্প্রসারিত বর্তমান ভারত , বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও মায়ানমারের বৃহৎ অংশ জুড়ে যে মুঘল ভারত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার সূচনা হয়েছিল ১৫২৬ সালে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে জয় লাভের মধ্য দিয়ে ৷ এই সাম্রাজ্য অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে ভারতকে করেছিল আর্থিক দিক থেকে সমৃদ্ধ এবং সামরিক দিক থেকে বলিয়ান, সাংস্কৃতির দিক থেকে সৃজনশীল ৷ সর্বোপরি হিন্দু মুসলমান সমন্বয়ে যে সভ্যতার স্বপ্ন একসময় সুলতান আলাউদ্দিন খলজি এবং মুহাম্মদ বিন তুঘলক দেখেছিলেন মুঘল সম্রাটদের হস্তে তার এই বাস্তব অবয়ব গড়ে ওঠে ৷