ভারতের ইতিহাসে ১৫২৬ সালের গুরুত্ব বা তাৎপর্য আলোচনা কর

ভারতের ইতিহাসে ১৫২৬ সালের গুরুত্ব বা তাৎপর্য আলোচনা কর

ভারতের ইতিহাসে ১৫২৬ সালের গুরুত্ব বা তাৎপর্য আলোচনা কর

ভারতের ইতিহাসে ১৫২৬ সালের গুরুত্ব বা তাৎপর্য আলোচনা কর
৫২৬ সালে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে জয় লাভের মধ্য দিয়ে বাবরের হস্তে মুঘল সাম্রাজ্য যে ক্ষুদ্র বৃক্ষটি রোপন করা হয়েছিল তা পরবর্তীকালে হুমায়ুন , আকবর, জাহাঙ্গীর, শাহজাহান ও ঔরঙ্গজেব হস্তে সেই ক্ষুদ্র চারাটি পত্রে ও পল্লবে যে কেবলমাত্র উপরিভাগ বিস্তীর্ণ হয়েছিল তাই নয়, সেই সাথে বৃক্ষের মূল গুচ্ছ মাটির অনেক অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ৷ সেই বৃক্ষকে যে কেবলমাত্র ঝড়-ঝঞ্ঝার হাত থেকে রক্ষা করেছিল শুধু তাই নয়,তা সু প্রশস্ত শাখা প্রশাখা দ্বারা ১৭৬০ সাল পর্যন্ত আসমুদ্র হিমাচলে ভারতের মুঘল সাম্রাজ্য কে প্রশাসনিক ও আর্থিক সহ সর্ব ক্ষেত্রেই অত্যন্ত উচ্চ গুণমান প্রদান করেছিল ৷ বাবরের বংশধরদের সর্বাপেক্ষা প্রশাসনীয় ভূমিকা হল নানা ভাষণ,নানা মত এবং পরিধানের ভারতবর্ষকে সংস্কৃতিকে দৃঢ়ভাবে গঠিত করেছিল ৷

 

১৫২৬ সালে প্রথম পানিপথের যুদ্ধের পর বাবর সহজেই দিল্লি এবং আগ্রা অধিকার করে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ৷ দিল্লি অধিকার করার পর বাবর বাদশাহ উপাধি গ্রহণ করেছিলেন ৷ ইতিপূর্বেই ভারতের সুলতানি শাসনগণ নিজেদের বাগদাদের খালিফার প্রতিনিধি হিসেবে ভারত শাসন করতেন ‌৷ বাদশাহ উপাধি গ্রহণ করার পর ভারতে খালিফা প্রতিনিধিদের অবসান ঘটে,এদিক থেকে তার বাদশাহ উপাধি ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ।


১৫২৬ সালে অল্প কিছু সৈন্যসহ যোগে ৩২০ বছরের সুলতানি সাম্রাজ্যের ধ্বংসস্তূপ রচনার ক্ষেত্রে এবং অতি সহজেই জয়লাভের জন্য যে কারণটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা হল বাবর কর্তৃক কামান ও গোলন্দাজ বাহিনীর ব্যবহার ৷ রণক্ষেত্রে ব্যাপক কামানের ব্যবহার সুলতানি বাহিনীকে অতি সহজে ছত্রভঙ্গ করে দেয় ৷ কমান দ্বারা যুদ্ধ ভারতের ইতিহাসে ১৫২৬ সাল নবযুগের সূচনা করে এবং সামরিক ক্ষেত্রে ভারতবর্ষ যেন কৌশল থেকে যৌবনে পদার্পণ করেন ৷


সুলতানি যুগে এমনকি তার পূর্ব থেকেও ভারতের সাথে বহির্বিশ্বের বাণিজ্যিক যোগাযোগ চলত ৷ কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরে কোন রাষ্ট্রের সাথে ভারতের রাজনৈতিক সম্পর্ক দিল ছিল না ৷ মুঘলদের হাত ধরে ভারতের ভূখণ্ডের বাইরে কাবুল ও কান্দাহার ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্রে অঙ্গীভূত হয় ৷ ফলে মুঘল সাম্রাজ্যের সীমাবদ্ধ শক্তির পরিবর্তে বৃহত্তর শক্তি হিসাবে ভারত প্রতিষ্ঠিত হয় ৷


সুলতানি যুগে কুতুব মিনার সহ কিছু সাধারণ শিল্প কার্য স্থাপত্য তৈরি হয়েছিল ৷ কিন্তু মুঘল যুগ হলো শিল্প নিদর্শন এর দিক থেকে অনন্য, সাধারণত মুঘল সাম্রাজ্যের মধ্যে প্রায় সকলেই বিশেষত সম্রাট শাহজাহান শিল্প স্থাপত্যের একান্ত অনুরাগী ছিলেন । তার আমলে নির্মিত জামা মসজিদ, মতি মসজিদ, ময়ূর সিংহাসন পৃথিবীর মধ্যে বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন ৷ এ বিষয়ে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য হলো পত্নী মমতাজের ভালোবাসার স্মৃতিসৌধ রূপে শাহজাহানের দ্বারা নির্মিত তাজমহল, মানব শিল্প মননের এক অতি বিস্ময়কর নিদর্শন যা এখনো বিশ্ব মানবকে সৌন্দর্য প্রেমিকদের আবেগ তাড়িত, পুলকিত ও তাদের নয়ন যুগলকে আনন্দিত করে চলেছে ৷


ভারতের ইতিহাসে ১৫২৬ সাল কে কেবলমাত্র একটি সাম্রাজ্যের অবক্ষয় বা নতুন সাম্রাজ্যের সূচনা বলা যায় না ৷ ১৫২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত মুঘল সাম্রাজ্য ভারতের বাহুতে সঞ্চালিত করেছিল অফুরন্ত শক্তি ৷ মানব চক্ষুকে করেছিল সম্প্রসারিত বর্তমান ভারত , বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও মায়ানমারের বৃহৎ অংশ জুড়ে যে মুঘল ভারত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার সূচনা হয়েছিল ১৫২৬ সালে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে জয় লাভের মধ্য দিয়ে ৷ এই সাম্রাজ্য অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে ভারতকে করেছিল আর্থিক দিক থেকে সমৃদ্ধ এবং সামরিক দিক থেকে বলিয়ান, সাংস্কৃতির দিক থেকে সৃজনশীল ৷ সর্বোপরি হিন্দু মুসলমান সমন্বয়ে যে সভ্যতার স্বপ্ন একসময় সুলতান আলাউদ্দিন খলজি এবং মুহাম্মদ বিন তুঘলক দেখেছিলেন মুঘল সম্রাটদের হস্তে তার এই বাস্তব অবয়ব গড়ে ওঠে ৷

তোমাকে অনেক ধন্যবাদ ভারতের ইতিহাসে ১৫২৬ সালের গুরুত্ব বা তাৎপর্য আলোচনা কর এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟