আজীবিক ধর্ম সম্পর্কে যা জানো লেখো। বা, আজীবিক গোষ্ঠী সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।

আজীবিক ধর্ম সম্পর্কে যা জানো লেখো।

 আজীবিক ধর্ম সম্পর্কে যা জানো লেখো। বা,আজীবিক গোষ্ঠী সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।

আজীবিক ধর্ম সম্পর্কে যা জানো লেখো।

ব্রাহ্মণ্যবাদ বিরোধী প্রতিবাদী ধর্মান্দোলনের সময় একটি বিশেষ ধর্মীয় মতবাদের প্রকাশ ঘটেছিল আর এই নতুন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নাম আজীবিক সম্প্রদায়। এই সম্প্রদায়ের নাম কেন আজীবিক হলো সে সম্পর্কে পন্ডিতদের মধ্যে মতভেদ আছে। অনেকে মনে করেন, অন্যের দানে জীবনধারণ করতেন বলে তাদের নাম আজীবিক। আবার জীবনধারণ বা জীবিকা অর্থেও আজীব পদের ব্যবস্থা দেখা যায়। সেক্ষেত্রেও মনে হতে পারে, বিশেষ ধরনের জীবনযাপনে অভ্যস্ত বলে তাঁদের আজীবিক বলা হত। আবার আজীবন পালন করেন এই অর্থেও আজীবিক। মকখলি বা মংসলিপ ও গোশালা ছিলেন প্রকৃতপক্ষে আজীবিক সম্প্রদায়ের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা। তবে এ বিষয়ে মতভেদ আছে। কারোও কারোও ধারণা নন্দবংশ এই সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা। তবে গোশালা এই সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা হোন বা না হোন তিনি যে এই সম্প্রদায়ের সর্বশ্রেষ্ঠ গুরু তাতে কোনো সন্দেহ নেই।



এই ধর্ম সম্প্রদায় সম্পর্কে অল্প যা কিছু জানা যায়, তা প্রায় সবই এর বিরোধী জৈন রাদ্দিদের গ্রন্থ থেকে পাওয়া। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে রচিত পতঞ্জলির মহাভাষ্যতে এদের উল্লেখ আছে। আজীবিক সন্ন্যাসীরা যে মতবাদ প্রচার করেছেন তাকে এক কথায় প্রেতিবাদ বা অদৃষ্টবাদ বলা যায়। বৌদ্ধ ও জৈন সাহিত্যে এই ধর্মসম্প্রদায় সম্পর্কে কিছু ট টপতি থেকে জানা যায় যে, মানুষের ইচ্ছাশক্তির ওপর এঁদের মোটেই বিশ্বাস ছিল রামরা মনে করতেন পৃথিবীর সবকিছুই আগে থেকে নিয়তি দ্বারা নির্দিষ্ট হয়ে আছে। প্রেমেরী মানুষের সাধারণ কার্যকলাপও এর বাইরে নয়। বস্তুত, নিয়তিই এদের ধর্মের অফস্তু। এরা মনে করতেন, যতক্ষণ না নিয়তি তাঁকে অন্তিম পর্যায়ে নিয়ে যায়, ততক্ষণ পুনর্জন্মের প্রক্রিয়া নির্দিষ্ট পথেই চলে। এঁরা মনে করেন মানুষ দুর্বল ও নির্বীর্য। নিজের কৃতকর্মের দ্বারা তাঁরা দুঃখের ক্ষয়বৃদ্ধি করতে পারেন না। তাঁরা মনে করেন ছোটো-বড়ো, পন্ডিত মূর্খ, নির্বিশেষে সকল মানুষকে ৮৪ লক্ষ বার জন্মগ্রহণ করতে হবে। 



এক এক করে সব কটি জীবনচক্র অতিক্রম করার পর অবশেষে জীবের দুঃখের অবসান হবে। রতপালন ও জীবনধারণে আজীবিক সন্ন্যাসীরা কঠোর পন্থী ছিলেন। নগ্নদেহী এসব আাসীদের ভিক্ষায় ছিল অবলম্বন। তারা পাত্র হাতে ভিক্ষায় বের হতেন না। দু'হাত পেতে ভিক্ষান্ন গ্রহণ করতেন এবং হাতরূপ পাত্র থেকেই খাবার খেতেন। স্বহস্তে চুল উপড়ে ফেলা এবং উত্তপ্ত ধাতুপিন্ডকে হাতে ধারণ করার মতো কয়েকটি কষ্টসাধ্য প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে আজীবিক শ্রমণের দীক্ষাগ্রহণ সম্পন্ন হত। আজীবিক সন্ন্যাসীদের হাতে বাঁশের লাঠি থাকতো বলে তাদের একদন্ডী বলা হত। ব্রহ্মচর্য আদর্শের প্রতি তাঁদের কোনো শ্রদ্ধা ছিল না। তবে এই ধর্মের বিস্তার বেশিদুর ঘটেনি। পূর্বে অঙ্গা থেকে পশ্চিমে অবস্তী রাজা পর্যন্ত তা বিস্তৃত ছিল। মহামতি অশোক এর পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন। বণিকদের মধ্যে অনেকেই আজীবিক ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। এমনকি অনেক মহিলারাও এই ধর্মমত গ্রহণ করেন। তবে বৈরাগ্যের প্রতি অত্যধিক প্রীতি ও কঠোর কৃষ্ণসাধনের দরুণ এই মতবাদ বেশিদিন তার অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে পারেনি।

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟