কৃষির বানিজ্যকরন কীভাবে কৃষকদের প্রভাবিত করেছিল? কৃষির বানিজ্যকরনের প্রভাব আলোচনা করূন অথবা,ঔপনিবেশিক যুগে কৃষির বাণিজ্যকিকরণ সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ লেখ?
কৃষির বানিজ্যকরন বলতে বোঝায় যে কৃষিতে শস্য উৎপাদনের পাশাপাশি বানিজ্যে উপযোগী কষিপন্য উৎপাদিত হওয়া। উনিশ শতকে কৃষি অর্থনীতির একটি বিশেষ দিক হল "Commercialization of Agriculture" এত দিন কৃষিপন্য বলতে শুধুমাত্র খাদ্যশস্যকে বোঝাত কিন্তু ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের ফলে ভারত শুধু শস্য কৃষি নয় তুলা, চা, পাট, আখ, তৈলবীজের মতো বানিজ্যিক পন্যের উৎপাদক দেশে পরিনত হয়। এইসব বানিজ্যিক কৃষি শুধু পারিবারিক ব্যবহারের প্রয়োজনে উৎপাদিত হয় না, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারের প্রয়োজনেও উৎপাদিত হত। অধ্যাপক বিনয়ভূষন চৌধুরী, সিরাজুল ইসলাম সম্পাদিত গ্রন্থ 'History of Bangladesh Commercialization Of Agriculture 'প্রবন্ধে বলা হয়েছে যে ঔপনিবেশিক যুগে বাংলায় এক নতুন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল যার ফলে বিভিন্ন রকম পন্যের বানিজ্যকীকরণ হল। শুধু তাই নয় অবাধ বানিজ্যের প্রেক্ষাপটও বাংলাদেশে কৃষির বানিজ্যকীকরন করতে সাহায্য করেছিল।
(ভারতে কৃষির বানিজ্যকীকরনের ফলে কৃষক সমাজের ওপর এক নিদারুণ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। রমেশচন্দ্র দও এর মতো ভারতে সুতো উৎপাদনের সুবিধা থাকলেও ভারত কাঁচামাল উৎপাদক দেশ হিসাবে পরিনত হতে বাধ্য হয়েছিল। কৃষকদের । নগদ টাকায় রাজস্ব দিতে হত বলে চাষিরা খাদ্যশস্যের পরিবর্তে নীল, আফিম ও পাট এর মতো বাণিজ্যিক শস্য উৎপাদনে সচেষ্ট হয়। একশ্রেণীর বণিক সমস্ত গ্রামের কৃষকদের অর্থকারী শস্য উৎপাদনে প্রলুব্ধ করে তাদের উদ্যোগে বীজ, সার, কৃষিজ সরঞ্জাম গবাদি পশু ইত্যাদি ক্রয়ের জন্য চাষিরা মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নেয় ফলে তা পরিশোধের জন্য তারা "Commercial Agriculture" এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। সাহিদ আমিন দেখেছেন যে কৃষকরা বাধ্যতামূলকভাবে নগদ অর্থে খাজনা দেওয়ার জন্য ঋণের জালে আবদ্ধ হতেন। ইরফান হাবিব তার 'Colonialzation of Indian Economy 1757-1900' প্রবন্ধে দেখিয়েছেন ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের প্রয়োজনীয়তা কাঁচামাল সংগ্রাহক দেশে পরিণত হয়েছিল ভারত। ফলে ভারতে রেলপথ বিকাশের মধ্য দিয়ে ভারতীয় বাজার ব্রিটেনের সর্বোচ্চ বাজারে পরিণত হল। এভাবে ভারতীয় রেলপথ বিকাশের মধ্য দিয়ো ভারতের কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ হল।
(1848 সালে তুলা কমিশন দাক্ষিণাত্যকে উন্মুক্ত করারপ্রস্তাব দেয় ফলে ভারতে ব্রিটিশ সরকার কৃষির বাণিজ্য করনে অত্যন্ত উৎসাহ দেখায়। 1860এর দশকে তুলা ছাড়াও পাট, তৈলবীজ কাঁচামালের রপ্তানি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পায়। এভাবে ভারতে কৃষির জবরদস্ত মলক বাণিজ্যকিকরণের ফলে খাদ্য শস্যের তুলনায় অর্থকারী শস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়? 1878- 1901 এর মধ্যে ভারতে রপ্তানি পণ্যের সামগ্রিক মূল্য দাঁড়ায় 67.43 কোটি থেকে 122.95 কোটিতে। ইংল্যান্ডে কাপড়ের মিল গুলির প্রয়োজনে ভারতে কাঁচা তুলোর উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। দেশীয় বাণিজ্য সংস্থা গুলি মূলত বিদেশি কোম্পানির অধীনস্থ হয়। বাংলা ও বিহারের পাশাপাশি বারানসী ও মধ্য ভারতে আফিম চাষকে কেন্দ্র করে কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ ঘটে। বাংলায় নীল চাষ ও চা চাষকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশ শোষণ শুরু হয়। এইভাবে বাণিজ্যিকীকরণ ভারতে কৃষিজীবী সমাজের ওপর অভিশাপ নিয়ে আসে কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে বাণিজ্য কৃষির দাম বাড়লেও ভারতীয় কৃষক লাভের মুখ দেখেনি। অর্থাভাবে কৃষকরা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে এরই অনিবার্য ফলস্বরূপ।