সতীদাহ প্রথা নিবারণে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা। অথবা, সতীদাহ প্রথা কি? সতীদাহ প্রথা উচ্ছেদে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান ব্যাখ্যা কর
উনবিংশ শতকে ভারত পরাধীনতার শৃঙ্খলে সূচিত হওয়ার সত্বেও গভীর তাই মাঝে কিছু আলোকদীপ্ত অধ্যায় সঞ্চরিত হয়েছিল ৷ এই পর্বে এই ভারতবর্ষে ভারতের মধ্যাকর্ষে জন্ম নিয়েছিলেন কিছু উজ্জ্বল নক্ষত্র যাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রাজা রামমোহন রায়, যিনি ভারত ইতিহাসের "The frist Modern nam" এবং "Father of modern India" নামেও পরিচিত হয়ে আছেন ৷ রামমোহন ছিলেন ভারতের নবজাগরণের এর ভূমিকায় অত্যন্ত সফল ব্যক্তি ৷ অন্ধকারার জন্য কুসংস্কার অযৌক্তিকতার বেড়া জাল ছিন্ন করে ভারত বর্ষকে আধুনিকতার পথে পরিচালিত করার জন্য একাধিক সংস্কার সাধনের দিকে তিনি অগ্রসর হন ৷ যার মধ্যে অন্যতম হলেও নারী শিক্ষার প্রসার, একাধিক গ্রন্থের রচনা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, সংবাদপত্রে স্বাধীনতা লড়াই প্রভৃতি ৷ তবে যে সংস্কারটি তাকে ইতিহাসে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে তা হল ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে সতীদাহ প্রথা নিবারণের ক্ষেত্রে তার বিশেষ উদ্যোগ ।
সতীদাহ প্রথা ছিল তদানীন্তন সমাজের সর্বাপেক্ষা বর্বর রচিত হৃদয়বিদারক একটি ঘটনা ৷ এই নিঃসংশ প্রথাটি রামমোহন রায়ের মতো দরিদ্র মানুষকে ভীষণভাবে আঘাত করে এবং এই প্রথার নিবারণের প্রকল্পে তিনি আগ্রহী হয়ে ওঠেন ৷ এক পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় ১৮১৫ - ১৮১৮ র মধ্যে মোট ২৩৬৫ জন বিধবা এই নিষ্ঠুর প্রথার বলি হতে হয় ৷ রামমোহন তার সংবাদ "কৌমুদী পত্রিকায়" এই নির্মম প্রথার বিরুদ্ধে জনমত গঠনের সচেষ্ট হয়ে ওঠেন তিনি সর্বস্তরে ভারতীয় হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী প্রমাণ প্রমাণ করতে চান যে এই ব্যবস্থা হিন্দু ধর্ম স্বাস্থ্যসম্মত নয় ৷ তিনি মনুসংহিতা সহ অন্যান্য শাস্ত্র থেকে উদ্বৃত্ত তুলে দেখান যে হিন্দু বিধবাদের পবিত্র ও সংযত জীবন যাপন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । তাদের ধর্মের কোন বিধান দেওয়া হয়নি ৷
এই প্রথা নিবারণের অনুরোধ জানিয়ে তিনি বাংলার ৩০০ জন বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে একটি আবেদনপত্র স্বাক্ষরিত করে বড়লাট উইলিয়াম বেন্টিং এর কাছে এবং এরপর গভর্নর জেনারেল লর্ড বেন্টিং এর কাছে ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা ডিসেম্বর 17 নম্বর রেগুলেশন জারি করে কেবল সতীদাহ প্রথা নিবারণে করে ৷ রামমোহন মর্যাদা সহকারে নারীদের সমাজে প্রতিষ্ঠা, বিধবা বিবাহ, পুনর্বিবাহ, নারী শিক্ষার বিস্তার পুরুষদের বহুবিবাহ রদ, জাতিভেদ প্রথার বিলোপ, অসবর্ণবিবাহ ব্যবস্থার সমর্থন সহ একাধিক কাজে ও সময় সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ৷ সেই কারণেই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ রামমোহন রায়কে বলেন যে, "রামমোহন রায় ভারতবর্ষের আধুনিক যুগে সূচনা করেন ৷" আচার্য বজেন্দ্র নাথ শীল তাকে "বিশ্বমানব" বা "Universal Man" অভিহিত করেছেন ৷