পালারাজা ধর্মপালের কৃতিত্ব মূল্যায়ন করো। অথবা, তাঁর রাজ্যবিস্তার সম্পর্কে কী জান?
পালবংশের শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন ধর্মপাল ৷ গোপালের মৃত্যুর পর তিনি ৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলার সিংহাসনে বসেন । তাঁর হাত ধরে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে বাংলা বিশেষ প্রভাব ও প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠা করে।
মুঙ্গের তাম্রশাসন থেকে ধর্মপালের রাজ্যবিস্তারের কাহিনি জানতে পারা যায় । তিনি কেদার ও গোকর্ণ জয় করেন। তাঁরই আমলে কনৌজ তথা উত্তর ভারতের ওপর অধিকার বিস্তারকে কেন্দ্র করে ত্রিমুখী সংগ্রামের সূচনা হয় । তিনি কিছুকালের জন্য কনৌজকে নিজের অধিকারে আনতে সমর্থ হন।
'খালিমপুর তাম্রশাসন' থেকে জানা যায় যে, তিনি কনৌজে এক অনুষ্ঠান করেন । সেখানে ভোজ, মৎস্য, মদ্র, কুরু, বান, কীর, গান্ধার ও অবন্তি প্রভৃতি রাজ্যের রাজারা উপস্থিত ছিলেন । এর থেকেই মনে হয় যে. এই সমস্ত সামন্তরাজাদের ওপর ধর্মপালের কর্তৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল।
তিব্বতী লামা তারানাথের বিবরণ থেকে জানা যায় যে, ধর্মপালের সাম্রাজ্য পূর্বে বঙ্গোপসাগর থেকে উত্তরে পাঞ্জাব এবং হিমালয় পর্বত থেকে দক্ষিণে বিন্ধ-সাতপুরা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
ধর্মপাল ছিলেন শিক্ষা-সংস্কৃতির পরম পৃষ্ঠপোষক। তিনি বৌদ্বধর্ম গ্রহণ করেন এবং বিক্রমশীলা, সোমপুরী, ওদন্তপুরী প্রভৃতি বৌদ্ধ বিহার নির্মাণ করেনম। সার্বভৌম শক্তির প্রতীক হিসেবে তিনি 'মহারাজাধিরাজ' উপাধি ধারণ করেন।
ধর্মপালের সুশাসনে যেমন বাংলার উন্নতি হয়েছিল। তেমনই তাঁর বাহুবলে উত্তর ভারতে বাংলার রাজনৈতিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছিল । প্রতিপত্তি ও প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন বাংলার প্রথম উল্লেখযোগ্য শাসক । তাই ঐতিহাসিক ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার তার রাজত্ব কালকে বাঙালি জীবনের সুপ্রভাত বলে অভিহিত করেছেন ৷