ফ্রান্স,জার্মানি ও রাশিয়ার শিল্প বিপ্লব সম্বন্ধে আলোচনা কর
অষ্টাদশ শতকের ইউরোপের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো শিল্প বিপ্লব। শিল্প বিপ্লব সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডে শুরু হয়েছিল এরপর থেকে ধীরে ধীরে ইউরোপের বিভিন্ন মহাদেশের ছড়িয়ে পড়ে যথা,- ফ্রান্স,জার্মানি ও রাশিয়ায় ৷ ইউরোপীয় মহাদেশের সঙ্গে ব্রিটেনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকা সত্ত্বেও ব্রিটেনের যন্ত্র ভিত্তিক শিল্পায়নের প্রভাব ইউরোপের দেশগুলিতে পড়ে ৷ ব্রিটেনের অনুকরণে ফ্রান্স,জার্মানির ও রাশিয়াতে শিল্প বিপ্লব গড়ে ওঠে ৷
ফ্রান্সের শিল্প বিপ্লবের প্রথম সূচনা হয় অলিয়েন্স বংশীয় ফরাসি নৃপতির দুই ফিলিপের আমলে ৷ তার উদ্যোগে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা শিল্পায়নের প্রশ্নে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেন ৷ এই আমলে ফ্রান্সের বিভিন্ন কেন্দ্র যোগাযোগের ব্যবস্থার উন্নতি হয় লিঁয়,বর্দো, তুলোঁ, নন্টস প্রভৃতি শহর গুলি শিল্পো শহরে পরিণত হয় ৷
ফ্রান্সের শিল্প বিপ্লবের প্রকৃত উদ্যোগ দেখা যায় তৃতীয় নেপোলিয়নের আমলে ৷ তার উদ্যোগে ফ্রান্সের রেলপথ ২০০ মাইল থেকে বৃদ্ধি করে ১০০০০ মাইল হয়ে দাঁড়ায় রেলপথে নির্মাণের জন্য বিপুল পরিমাণে লোহা ও ইস্পাতের দরকার পরে এবং তার জন্য লৌহ শিল্পের উন্নতি সাধন হয় ৷ এইভাবে এই সময় কয়লা শিল্পের উন্নতিতে নজর দেওয়া হয় ৷ ফরাসি শিল্প বিপ্লবের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল কৃষি ও শিল্পের ক্ষেত্রে সমান জোর দেওয়া ৷ তাছাড়া ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ন ক্রেদি মবিলিয়ে, ক্রেদি ফঁসিয়ে নামক শিল্প ব্যাংক গঠন করেছিলেন । শ্রমিক ও কারখানার মালিকদের বিরোধের মীমাংসার জন্য 'কনসিলিয়েশন বোর্ড' গঠন করেছিলেন, যার ফলে ফ্রান্সের শিল্পায়নে গতি আসে।
ফ্রান্সের শিল্প বিপ্লব ছিল যথেষ্ট সীমিত ব্রিটিশদের মতো ফরাসি ঐতিহ্য বণিক জাতের ঐতিহ্য নয় ৷ সেই সঙ্গে নতুন কেউ গ্রহণ করার ক্ষমতা ফ্রান্সের কম ছিল ৷ তৃতীয় নেপোলিয়নের সময় শিল্পায়ন ও উপনিবেশিক সম্প্রসারণের ফলে ফ্রান্সের বহির বাণিজ্যের কিছুটা বৈচিত্র্য আছে ৷ তিনি বিভিন্ন সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন যার ফলে ফ্রান্সের শিল্পক্ষেত্রে নবযুগের সূচনা ঘটেছিল ।
জার্মানিতে শিল্প বিপ্লবঃ - জার্মানিতে শিল্প বিপ্লব প্রক্রিয়ার সূচনা হয়েছিল বেশ কিছুটা বিলম্বিত, ১৮৩০ সালে জার্মানিতে শিল্পের দিকে সূচনা হয় ৷ তার গতি লাভ ফলে ১৮৫০ সালের পর ৷ এই উদ্যোগে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেন প্রাশিয়া, পশ্চিম প্রাশিয়া রূঢ় উপত্যকা ছিল কয়লা খনি সমৃদ্ধ অঞ্চল । উৎপাদন যথেষ্ট বিকাশ লাভ করেছিল প্রাশিয়া সরকার শিল্প উন্নতির জন্য ব্রিটেন থেকে কারিগরি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আসেন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় প্রাশিয়া কতগুলি প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয় ৷
১৮৭০ সাল পর্যন্ত জার্মানি ছিল কৃষি প্রধান দেশ ৷ কিন্তু এরপর জার্মানি ইউরোপের এক অন্যতম শিল্পপ্রধান দেশে পরিণত হয় । প্রকৃতপক্ষে এই ব্যাপারে বিশেষভাবে উদ্যোগী হন বিসমার্ক ৷ বিসমার্কের মুদ্রা সংস্কার,পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং আমদানি ও রপ্তানি নীতির জার্মানির শিল্প বিপ্লবের পথ প্রশস্ত করেন ৷
কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়ামের আমলে জাহাজ শিল্পে অবমনীয় উন্নতি ঘটেছিল ২০ শতকের প্রথম বছরে জার্মানির জাহাজ সরবরাহ প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল ৷ বিদ্যুৎ ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম উৎপাদনের পরিণাম এত বৃদ্ধি পায় যে দেশের বাজারে চাহিদা মিটিয়ে দেশের রপ্তানি হতে শুরু করেছিল ৷ লোহার উৎপাদন অস্ত্র নির্মাণের কারখানাগুলির প্রতিষ্ঠা ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রধান কুড়ি শতকের গোড়ায় জার্মানির ইউরোপের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শক্তিতে পরিণত করেছিল ৷
রাশিয়াতে শিল্প বিপ্লবঃ ১৯ শতকের প্রথমার্ধে ইউরোপে কম বেশি সর্বোচ্চ শিল্প বিপ্লবের ঢেউ উঠলেও রাশিয়া এ ব্যাপারে পশ্চাৎগামী ছিল ৷ উৎপাদন বিমুখতা ও গতিহীনতার রাশিয়াকে শিল্পায়নের প্রশ্ন পিছিয়ে রাখে ৷ উনিশ শতকের চল্লিশের দশকে রাশিয়ার বস্ত্রশিল্পে আধুনিক প্রযুক্তির প্রথম প্রয়োগ হয়, কিন্তু রাশিয়ার শিল্পবিপ্লব অব্যাহতগতিতে এগোতে পারেনি। ষাটের দশকে জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ভূমিদাসদের মুক্তি দিয়ে ও অন্যান্য সংস্কার প্রবর্তন করে শিল্পায়নের পরিবেশ তৈরি করে দেন এবং তা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত মোটামুটি অব্যাহত ছিল ৷ এই যুগে মূল ও ভারী শিল্পের উপর অতি গুরুত্ব দেওয়া হয় ৷ যথা কয়লা খনি,পেট্রোল নিষ্কাশন,লৌহ উত্তোলন এবং লৌহ ইস্পাত শিল্প ৷
রেলপথ নির্মাণের মাধ্যমে রাশিয়ার শিল্পের পোশাক শুরু হয় এবং বিদেশী প্রযুক্তিবিদ্যা ও পুঁজি রাশিয়ায় প্রবেশ করেন নতুন অর্থনৈতিক নীতি গৃহীত হলে রাশিয়ার শিল্পে ব্যাপক প্রসার ঘটে ৷ প্রযুক্তিবিদ্যা রাশিয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ডের প্রায় সমকক্ষ হয়ে ওঠে ৷ রুশ শিল্পায়নের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল শিল্পায়নের প্রশ্নে সরাসরি রাষ্ট্রের উদ্যোগ ৷ দেশে রেলপথের বিস্তার ঘটেছিল, তিনি শুল্ক ব্যবস্থার সংস্কার করেন এবং বিদেশিদের আকৃষ্ট করার জন্য স্বর্ণমান চালু করেন । আমদানি কমিয়ে রপ্তানি বাড়িয়ে তিনি পুঁজি সংগ্রহ করেন । ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম ও ইংল্যান্ডের পুঁজিপতিরা এখানকার শিল্পে পুঁজি বিনিয়োগ করেছিল । উনিশ শতকের শেষদিকে রাশিয়ায় ২৫,০০০ বেশি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল ৷
এই নোটটি পড়লে আপনি কোন কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেনঃ
- ফ্রান্স ও জার্মানিতে শিল্পায়ন প্রক্রিয়ার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি বিচার কর।