ইজরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস আলোচনা করো?

ইজরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস আলোচনা করো?

 ইজরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস আলোচনা করো? অথবা, স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ইজরায়েলের সৃষ্টি পশ্চিম এশিয়ায় কিভাবে সমস্যার সৃষ্টি করেছিল?

ইজরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস আলোচনা করো?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর প্যারিসের শান্তিচুক্তির দ্বারা ব্রিটেন যখন প্যালেস্টাইনকে ম্যান্ডেট হিসাবে লাভ করে তখন প্যালেস্টাইনের জনসংখ্যার 7½ লক্ষ যার মধ্যে 30 হাজার ছিল ইহুদী ৷ ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার বেলফোর ইতিমধ্যেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালিন পরিস্থিতিতে ১৯১৭ খ্রীঃ ইহুদিদের নিজে দলে টানার জন্য ফিলিস্তিন ভূখন্ডে ইহুদীদের পুনঃবাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ৷ এই ঘোষনার পর ইউরোপ থেকে বিপুল সংখ্যকে ইহুদী ফিলিস্তিনে বসবাস শুরু করে । এক্ষেত্রে লক্ষনীয় হল 1919 সালে সেখানে ইহুদীদের সংখায় ছিল কয়েক হাজার সেখানে 1931 সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় দু লাখ এবং 1948 সালে তা হয় ছয় লাখ ৷


প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষে প্যালেস্টাইনকে ম্যান্ডেট হিসেবে লাভ করলে ব্রিটেনের কাছে পরস্পর বিরোধি দুটি দায়িত্ব এসে চাপে - [১].প্যালেস্টাইনে ইহুদীদের পুনঃবাসন,[২].প্যালেস্টাইনে আরবদের পূর্ণ স্বাধীনতা ৷ এই দুটি কাজ একসঙ্গে পালন করা সহজ ছিলনা ৷ কারণ একটি ছিল অপরটির পরিপন্থি । উনিশ শতকের শেষার্ধে পৃথক ইহুদী রাষ্ট্রের দাবিতে অস্ট্রীয় ইহুদি হারজেল জিয়নবাদী আন্দোলন শুরু করেন ৷ জিওন কথার অর্থ হল জেরুজালেম ৷ বিংশ শতকের প্রথম দিকে জার্মান ইহুদী অধ্যাপক ডক্টর উইথ ওয়াইজম্যান বিশ্ব জীবনবাদী কংগ্রেস আহ্বান করে প্যালেস্টাইনের ইহুদিদের বাসভূমি দাবি করেন । এমন পরিস্থিতিতে প্যালেস্টাইনের সংখ্যাগরিষ্ট আরবীয় মুসলিমদের মনে বিদ্বেষ দেখা দেয় । আরবদের মনে এই ধারনার উদয় হয় যে শিক্ষা ও কারিগরি বিদ্যায় উন্নত ইহুদীরা ইউরোপ ও আমেরিকার সহায়তায় অনায়াসেই প্যালেস্টাইনকে গ্রাস করবে এবং গরীব আরব কৃষকরা অসহায় হয়ে স্থানচ্যুত হবে ।


মূলত আরব জাতীয়তাবাদকে পরাভূত করে আমেরিকা ও ইউরোপ 1948 খ্রীঃ ১৪ মে প্যালেস্টাইনের বক্ষ চীরে ইহুদিদের রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছিল ৷ যা বিশ্বের মানচিত্রে এক নতুন দেশ ইজরাইল নামে পরিচিতি লাভ করে । আর হয়তো সেই কারনেই এই রাষ্ট্রের জন্ম মধ্যপ্রাচ্য সংকটের সঙ্গে অতপ্রোতভাবে জড়িত ৷


বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ১৬০-এর অধিক রাষ্ট্র ইজরাইলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি- দিলেও একাধিক মুসলিম অধ্যুসিত রাষ্ট্র ইজরাইলের সার্বভৌমত্বাকে মেনে নেয়নি । এক্ষেত্রে নিকটতম দুই আরব প্রতিবেশি মিশর ও জর্ডান এই স্বীকৃতি দিয়েছিল ৷ মূলত মধ্যপ্রাচ্যের দেশ এই ইজরাইল এটি ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণ পশ্চীম তীরে এবং লোহিত সাগরের উত্তর তীরে অবস্থিত । এর উত্তরে লেবানন, উত্তর পূর্বে সিরিয়া, এ পূর্বে জর্ডান, পশ্চিমে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর গাজার ভূখন্ড, এবং দক্ষিণ- পশ্চিমে মিশরের সাথে সীমানা রয়েছে ।


ইজরাইল রাষ্ট্রটি স্বাধীন হয় কোনোরূপ যুদ্ধ বিগ্রহ ছাড়া ৷ জাতিসংঘের চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে । ইহুদীরা আসলে একটি নৃতাত্ত্বিক জাতি, কিন্তু বিভিন্ন জাতির নিপীড়ন শোষনের শিকার হয়ে তারা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে । বিশেষ করে ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে (জার্মান-রুশ) ৷ উনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপে খ্রীষ্ঠান ধর্মালম্বীদের সঙ্গে ইহুদীদের উপর নতুন নৃপীড়ক হিসাবে অবতীর্ণ হয় ৷ জাতিয়তাবাদীরা, পাচ্য ও পাশ্চাত্যের ইহুদী নেতারা তাদের আদিভূখন্ডে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনার বিষয়ে আলোচনা করে । এক্ষেত্রে হারজেল প্রথম ইহুদী জনগোষ্ঠীর জন্য আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবী তোলে ৷ ফলে বিষয়টি রাজনৈতিক আন্দোলনের রুপ নেয় গড়ে উঠে জোয়ানিস্ট সংঘ ৷ যাদের মূল লক্ষ্য হিল ইহুদীদের জন্য আলাদা আবাসভূমি এবং যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে সেটি হবে তাদের আব্দি নিবাসে ৷


প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে তৎকালীন তুরস্ক থেকে গ্লিসিরিনের বানিজ্য করত ইউরোপের বণিকরা । কিন্তু এই বানিজ্য বন্ধ ঘোষনা করলে নিজেদের অস্তিত্বের বিদ্রোহ ঘোষনা করে ৷ ব্রিটিশ বাহিনী, এর পরের শতকেকের ভূমিকায় অবতীর্ন হয় ইহুদী বিজ্ঞানী ওয়াইজ ম্যান । এক্ষেত্রে তিনি গ্লিসিরিনের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করেন এসিটোন, যার বিনিময়ে ব্রিটিশ সরকারের কাজ থেকে পৃথক আবাসভূমি পরবর্তীকালে জোয়ানিস্ট সংঘের তৎপরতা বাড়তে থাকে । এক্ষেত্রে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষনা করেন ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা যার পিছনে দুটি কারণ ছিল (১) এসিটোন ফরমূলা,(২). ব্রিটিশরা চাইনি ইহুদিরা ইউরোপ থেকে ইউরোপকে অপরিষ্কার করুক ৷ এই ঘটনার পরিপেক্ষিতে বিপুল সংখ্যক ইহুদী ইউরোপ থেকে ফিলিস্তিনে বসতি স্থাপন করেন ৷


প্রথম পর্যায় থেকে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমান ফিলিস্তিনের ইহুদীদের আগমনকে বন্ধ করতে ব্যর্থ হয় । এক্ষেত্রে ব্রিটিশরা হিল সহায়ক শুরু হয় বিশ্ব ইহুদীদের একত্রিত করার কাজ । 1919-23 সাল নাগাদ ইহুদীদের সংখ্যা 35,000 থেকে 1930-48 সালের মধ্যে তা বেড়ে দাড়ায় 6,00,000 । ব্রিটেনের সহযোগিতায় ইজরাইলের গুপ্ত ইহুদীদের বাহিনী এক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে । তারা ফিলিস্তিনী জনগনের ঘর-বাড়ি, খেতখামার দখল করে, বোমা বাজির দ্বারা আতঙ্ক তৈরি করে । এই ঘটনার পরিপেক্ষিতে জাতিসংঘ মার্কিন ও ব্রিটেনের চক্রান্তকে সফল করার উদ্দেশ্যে সমগ্র ভূখন্ডের 45% ফিলিস্তিনিদের দেওয়া হয় এবং 55% ভূমিকে ইহুদীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় । এইভাবে ফিলিস্তিনের ভূমিকে জোরপূর্বক দখলকরে গঠন করা হয় নতুন ইহুদীদের রাষ্ট্র ইজরাইল । এক্ষেত্রে উল্লেখ্যযেগ্য ইজরাইল রাষ্ট্রের ঘোষনার পরেরদিন আরব ইসরাইল' রাষ্ট্রের যুদ্ধ বাঁধে ৷ আরবের একটা বড়ো অংশ ইজরাইল দখল করে । ইজরাইল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের সহযোগিতায় হয়ে ওঠে পরাক্রমশালি রাষ্ট্র ।


দখলদারি এবং বর্বরতার মিটারের কাটা ক্রমশ বাড়তে থাকে ৷ ইজরাইলের একগুঁয়েমি এবং নৃশংসতা ফিলিস্তিনে রক্তগঙ্গা বয়ে যায় । ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রের ভূমি দখল করে ইজরাইল রাষ্ট্র গড়ে উঠে সেই ইজরাইলই ফিলিস্তিনকে পরাধীন করে সেখানকার অধিবাসীদের বিতারিত করে । এক্ষেত্রে মধ্য প্রাচ্যের অন্যান্য মুসলিম দেশ গুলে মার্কিনীদের দাসে পরিনত হল, তারা ফিলিস্তিন সমসা নিয়ে মাথা ধামায়নি এবং আজও ফিলিস্তিনিরা তাদের অধিকার আদায়ের চেষ্টা করে চলেনে । এক্ষেত্রে আমরা লক্ষ করি এই সমস্যাকে কেন্দ্র করে 1956, 1967 এবং 1973 সালে আরব ইজরাইলের তিনটি যুদ্ধ ৷


ব্রিটিশ পররাষ্টমন্ত্রীর ব্যালফোর ঘোষনার ভিত্তিতে প্যালেস্টানকে কেন্দ্র করে সে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের সূচনা হয়েছিল তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালেও তা অব্যাহত ছিল ৷ এক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে উঠেছিল বিশ্বরাজনীতির ঝটিকাকেন্দ ৷ পরবর্তীকালে আমরা লক্ষ্য করি যুদ্ধ বিধ্বস্ত ব্রিটেন প্যালেস্টাইনের উপর ম্যান্ডেটরি ক্ষমতা প্রত্যাহার করে নিতে আগ্রহ প্রত্যাশ করে রাষ্ট্রসঙ্ঘের কাছে নিয়োগকরা হয় একটি স্পেশাল কমিটি ৷ যার অন্যতম সদস্য ছিল ভারত, কিন্তু তাতে কোনো সুরাহা হয়নি । কারন পরবর্তীকালে একাধিক যুদ্ধে ইজরাইল অধিকাংশক্ষেত্রে সাফল্যে লাভ করে । প্রায় ২০ লক্ষ আরববাসী প্যালেস্টাইনে নিজ বাসভূমি থেকে বিতারিত হয় । যার জন্য গঠন করা হয় প্যালেস্টাইন লিবারেশন অরগানাইজেশন (PLO) ৷ তবে মার্কিন প্রয়াসে বর্তমানে এই অঞ্চলে কিছুটা স্থিতাবস্থা বজায় রয়েছে ৷


তোমাকে অনেক ধন্যবাদ ইজরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস আলোচনা করো? এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟