ওয়াভেল প্ল্যান সম্পর্কে আলোচনা কর অথবা ওয়াভেল পরিকল্পনা সম্পর্কে আলোচনা কর
![]() |
ওয়াভেল প্ল্যান সম্পর্কে আলোচনা করঃ
১৯৪৪ খ্রীস্টাব্দের প্রথমদিকে জার্মানীর পতন ঘটলে ইওরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান হয়। কিন্তু পূর্বাঞ্চলে জাপানের সঙ্গে মিত্রপক্ষের যুদ্ধ চলতে থাকে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারতের সামরিক গুরুত্ব হল অত্যধিক। সুতরাং ভারতের সঙ্গে বোঝাপড়া করে জাপানের বিরুদ্ধে মিত্রপক্ষকে শক্তিশালী করার জন্য সোভিয়েট রাশিয়া ব্রিটেনের ওপর চাপ দেয়। অন্যদিকে ব্রিটেনে সাধারণ নির্বাচন আসন্ন হয়। ব্রিটেনের শ্রমিকদল ভারতের সঙ্গে মীমাংসায় না আসার জন্য রক্ষণশীল সরকারকে দায়ী করে। সুতরাং এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী চার্চিল ভারতের রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান করতে সচেষ্ট হন।
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
সেই সময় (১৯৪৫ খ্রীঃ) ভারতের বড়লাট বা ভাইসরয় ছিলেন লর্ড ওয়াভেল (Lord Wavell)। তাঁর সামনে সমস্যাগুলি ছিল জটিল। সে সময় বাংলার দুর্ভিক্ষ (১৯৪৩-৪৪ খ্রীঃ) ও সাম্প্রদায়িক প্রশ্ন দারুণ জটিলতার সৃষ্টি করেছিল। লর্ড ওয়াভেল ১৯৪৪ খ্রীষ্টাব্দে গান্ধীজীকে কারামুক্ত করেন এবং ভারতের মৌলিক ঐক্যের ওপর ভিত্তি করে ভারতের শাসনতন্ত্র রচনার প্রয়োজন স্বীকার করেন। কিন্তু জিন্না তাঁর 'পাকিস্তান' দাবিতে। অটল থাকেন। কংগ্রেসের 'ভারত ছাড় প্রস্তাবের সঙ্গে জিন্না সংযোগ করেন 'ভাগ করে ভারত হাড় (Divide and quit India)। ফলে অচল এক অবস্থার উদ্ভব হয়।
এই অবস্থায় লর্ড ওয়াভেল ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একটি পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন যা 'ওয়াভেল পরিকল্পনা' নামে খ্যাত। ভারতের রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান করাই ছিল এই পরিকল্পনার লক্ষ্য। এর ধারাগুলি ছিল এইরূপ: (১) ভারতের নূতন সংবিধান রচিত না হওয়া পর্যন্ত ভারতীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে, (২) বড়লাটের কার্যনির্বাহক কাউন্সিলে বর্ণহিন্দু ও মুসলমান সদস্যের সংখ্যা সমান করা হবে, (৩) একমাত্র বড়লাট ও প্রধান সেনাপতিত্র ছাড়া কাউন্সিলের অন্যসব সদস্য ভারতীয় হবেন এবং (৪) যতদিন ভারতের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব ব্রিটিশ সরকারের হাতে থাকবে, ততদিন সামরিক দপ্তরের ভার ব্রিটিশের হাতেই থাকবে ৷
পরিকল্পনার এই ধারাগুলি ঘোষণা করে লর্ড ওয়াভেল-এর আমন্ত্রণে সিমলায় এক সর্বদলীয় বৈঠক বসে (জুন, ১৯৪৫ খ্রীঃ)। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জিয়া তাঁর পাকিস্তান দাবি পরিত্যাগ করতে অসম্মত হন। এছাড়া তিনি বড়লাটের কাউন্সিলে কংগ্রেস কর্তৃক মুসলমান সদস্য মনোনীত করার দাবিতেও আপত্তি তোলেন। কিন্তু কংগ্রেসে বহু জাতীয়তাবাদী মুসলমান থাকায় কংগ্রেস কাউন্সিলে মুসলমান সদস্য মনোনীত করার দাবি করে। এই দুই দলের মধ্যে মীমাংসা না হওয়ায় বৈঠক ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।