মুঘল আমলে বস্তশিল্পে যন্ত্রপাতির ব্যবহার সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা
মুঘল আমলে বস্ত্র বয়ন শিল্পে প্রযুক্তি তথা যন্ত্রপাতির প্রয়োগ ঘটে সর্বাধিক মাত্রায় ৷ যদিও মুঘল আমলের আগেই ভারতের তুলোধন্য যন্ত্রের প্রচলন ছিল ৷ সিন্ধু ও ঝিলাম জেলা নদীর মধ্যবর্তী হাজরা জেলার পেখালি নামে একটি ছোট অঞ্চলে এর ব্যবহার করা হতো । চরকার উৎপত্তি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও ত্রয়োদশ শতক থেকে চরকার ব্যবহার ভারতীয়দের জানা ছিল ৷ মুঘল আমলে সপ্তদশ শতকের চিত্রকলার চাকার হদিস মিলে ৷
আবুল ফজলে লেখা থেকে জানা যায় কাপড়ের প্রযুক্তিতে আকবরের উৎসাহের কথা ৷ ত্রয়োদশ শতকে ইউরোপের ব্যবহৃত তাঁতের শাড়ী ভারতীয় তাঁতের স্বাধুর্য লক্ষ্য করা যায়, রঙিন নকশা কাটা কাপড় বনের ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতির ব্যবহার বেশি ছিল ৷ এই ধরনের উন্নত মানের তাঁতকে বলা হতো Draw Loom ৷ সুক্ষ ও সুন্দর কাপড় বুনার সময় রং অনুযায়ী সুতো তাঁতে জড়াতো । এরপর বাঁশের কঞ্চির নকশায় রূপান্তরিত করত ৷ ভারতে হাতে টানা তাঁতে কাগজের উপর নকশা বসিয়ে সুতো টেনে গালিচা বোনার উল্লেখ আছে ৷ ফতেপুরে সিক্রি, আমেদাবাদ ও গুজরাটের বিভিন্ন শহরে আকবর কাপড়ে নকশা তৈরি প্রযুক্তি ব্যবহার করেছিলেন ৷ মুঘল আমলে পারস্যের বয়ান পদ্ধতি ও প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতো। সপ্তদশ শতক থেকে মুঘল ভারতের রেশম তথা সুতিবস্তের উল্লেখ পাওয়া যায় ৷
মুঘল আমলে কাপড় রং করার দু ধরনের পদ্ধতি ছিল ৷ তাদের কাপড় রং করার জন্য ভারতীয় পদ্ধতি সমকালীন ইউরোপীয়দের থেকে উন্নত ছিল ৷ বাংলা বিহার গুজরাট গোলকুণ্ডায় গরম জলে ক্ষার মিশিয়ে কাপড় কাচা হতো । ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি পর্যন্ত কাপড় রঙিন করার কাজ ব্যাপক হারে দেখিয়েছিলেন ৷ সাধারণত লাল কালো ও নীল রঙের প্রচলন ছিল ৷ রং যাতে কাপড়ে দীর্ঘদিন টিকে থাকে তার দিকেও নজর দেয়া হতো । গোলকুন্ডার কারিগররা ছাপার কাজে দক্ষ ছিল ৷ সম্ভবত ইউরোপীয় বণিকদের আগমনের ফলে ভারতের বস্ত্র ইউরোপের রপ্তানি হওয়ার ফলে ছাপার কাজে এর গতি আসে ৷ রং এর উৎপাদন হিসেবে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উৎপাদন ব্যবহার করা হতো ৷ যথা আলু,ফুল,জাফরং, খয়ের প্রভৃতি ব্যবহার করা হতো । ছাপার কাজের জন্য ব্লক ব্যবহার করা হতো ৷ ছাপার কাজে দক্ষতা অর্জনের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছিল ৷ এদের মধ্যে মুসল্লিপত্তনমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল উল্লেখযোগ্য ৷ পারস্যের রং এবং ছাপা অপেক্ষা ভারতে ভারতীয় কাপড়ের রং ও ছাপা অনেক উন্নতমানের ছিল ৷